অল্লু অর্জুন। —ফাইল চিত্র।
‘পুষ্পা ২— দ্য রুল’ ছবি অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু সাফল্যের স্বাদ উপভোগ করার মতো পরিস্থিতিতে নেই তেলুগু অভিনেতা অল্লু অর্জুন। বস্তুত, তাঁর দু’দশকের অভিনয় জীবনে এমন কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হননি পর্দার ‘পুষ্পা রাজ’। তাঁর বিরুদ্ধে পদপিষ্টের ঘটনার মামলা চলছে। মঙ্গলবার সকালে সেই মামলার সূত্রে অল্লু যখন হায়দরাবাদের থানায় হাজিরা দিয়েছেন, তখনই খবর মিলেছে তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। অভিযোগটি করেছেন তেলঙ্গানার কংগ্রেসের এক নেতা। অল্লুর বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা, থানায় ডাক— এই সব কিছুর মূলে রাজনৈতিক অঙ্ক রয়েছে বলে অভিযোগ কংগ্রেসের বিরোধীদের। যদিও তা অস্বীকার করেছে রেবন্ত রেড্ডির সরকার তথা কংগ্রেস।
অভিনেতা অল্লু সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। কিন্তু গত তিন সপ্তাহ ধরে তাঁকে নিয়ে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা রেবন্ত রেড্ডি যে বিষোদ্গার করছেন, তাতে বিরোধীদের অনেকে মনে করছেন অল্লুই তাঁর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মুখ খুলছেন অল্লুও। বিষয়টি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, যা তেলঙ্গানার রাজ্য রাজনীতিতে ‘অভূতপূর্ব’ বটে।
শুরুটা ডিসেম্বরের শুরুতে। গত ৪ ডিসেম্বর রাতে ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল’ ছবির প্রিমিয়ারের সন্ধ্যা থিয়েটারে গিয়েছিলেন অভিনেতা। অল্লুর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী এবং দুই সন্তান। নায়ককে দেখতে ভিড়ে ঘটে যায় একটি দুর্ঘটনা। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ৩৫ বছরের এক মহিলার। গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাঁর আট বছরের ছেলেকে। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে অল্লুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে হায়দরাবাদ পুলিশ।
ঘটনাক্রমে ১৩ ডিসেম্বর অল্লুকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে রেবন্তের পুলিশ। অভিনেতা-সহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়। নিম্ন আদালত অল্লুকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেও তেলঙ্গানা হাই কোর্ট তাঁর অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করে। তার মধ্যে সোমবার রাতে তেলুগু নায়কের বাড়ি গিয়ে নোটিস ধরিয়ে আসে রেবন্তের পুলিশ। মঙ্গলবার তিনি থানায় হাজিরা দেন। অন্য দিকে, অল্লুর শ্বশুর কঞ্চরলা চন্দ্রশেখর রেড্ডি, যিনি লোকসভা ভোটের সময় ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দেন, তিনি কংগ্রেসের তেলেঙ্গানার ইন-চার্জ দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে দেখা করেন। এ রাজ্যের প্রাক্তন সাংসদ দীপার সঙ্গে অল্লুর শ্বশুরের কথাবার্তা হয় গান্ধী ভবনে। তবে জানা যাচ্ছে, দীপা তাঁকে বেশি ক্ষণ সময় দিতে পারেননি। পরে কোনও এক দিন কথাবার্তা হবে বলে দীপা তাঁর পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে বেরিয়ে গিয়েছেন। অল্লুর শ্বশুর অবশ্য দাবি করেন, তিনি জামাইকে নিয়ে কোনও কথা বলতে যাননি। অন্য একটি বিষয়ে আলোচনার জন্য গিয়েছিলেন।
তেলুগু সিনেমার জগতে অল্লু অন্যতম মুখ। দীর্ঘ কয়েক বছর তিনি সর্বভারতীয় স্তরেও পরিচিত লাভ করেছেন। অল্লু নিজে কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হলেও তাঁর পরিবার এবং বন্ধুদের বড় অংশই সক্রিয় রাজনীতি করেন। সন্ধ্যা থিয়েটারে পদপিষ্টের ঘটনায় অল্লুর গ্রেফতারির পর তেলঙ্গানা সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ান বিআরএসের সভাপতি কেটি রাম রাও। রেবন্ত সরকারের দায়ের করা দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ানো কেটিআরের অভিযোগ, রাজনৈতিক লক্ষ্যের শিকার হচ্ছেন অল্লু। তিনি এ-ও বলেন, ‘‘এই গ্রেফতারি প্রমাণ করে রেবন্ত সরকারের নিরাপত্তাহীনতা ঠিক কতটা।’’ তাঁর অভিযোগ, কংগ্রেস তেলুগু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে নিশানা করেছে। কারণ, ইন্ডাস্ট্রির বড় অংশ কংগ্রেস-বিরোধী। অল্লুর পাশে দাঁড়ায় বিজেপিও। নায়কের বাবা অল্লু অরবিন্দ নামী প্রযোজক। অল্লুর পিসি সুরেখার স্বামী আবার তেলুগু সুপারস্টার চিরঞ্জীবী। তাঁর ভাই আর এক নামী অভিনেতা পবন কল্যাণ এখন অন্ধ্রপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী। জনসেবা পার্টি (জেএসপি)-র প্রতিষ্ঠাতা পবন অন্ধ্রে টিডিপি-বিজেপি জোটের জয় নিশ্চিত করতে এক সময়ে ঢালাও প্রচার করেছেন। এখন অন্ধ্রে বিজেপির সঙ্গে জোট রয়েছে তাঁর। কেটিআরের অভিযোগ, অল্লুকে তাই সহজে ‘ছাড়তে চাইছে না’ কংগ্রেস। অল্লু নিজে অবশ্য লোকসভা নির্বাচনের সময় বলেছিলেন, তিনি দলীয় রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জড়াবেন না। ভাল কাজের প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ সমর্থন আছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার পিসেমশাই পবন কল্যাণের প্রতি সমর্থন বরাবর থাকবে। আবার আমার বন্ধু রবি (ওয়াইএসআরসিপি বিধায়ক শিল্পা রবি রেড্ডি) এবং সম্পর্কে শ্বশুর চন্দ্রশেখর রেড্ডিও আমার গুরু।’’ বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী রেবন্তের নানা অভিযোগ প্রসঙ্গে অল্লু জানান, যে ভাবে তাঁর চরিত্রহনের চেষ্টা হচ্ছে, তা তিনি কখনও কল্পনাও করতে পারেননি। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে ‘পুষ্পা’ বলেছেন, ‘‘আমি এই পরিস্থিতির জন্য কাউকে দায়ী করছি না। সরকারকে না, পুলিশকেও না.... যা হয়েছে, সেটা দুর্ঘটনা এবং দুর্ভাগ্যজনক।’’
অল্লুকে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে, বিরোধীদের এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কংগ্রেস। তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত তাঁর জমানায় একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সেটা হল আইন সকলের জন্য সমান। আইনের ঊর্ধ্বে কোনও অভিনেতা কিংবা নেতা নন। কংগ্রেস সাংসদ চমলা কিরণকুমার রেড্ডির দাবি, অল্লু বা অল্লুর সিনেমার প্রতি তেলঙ্গানা সরকারের কোনও শত্রুতা নেই। সরকারের কোনও বাসনা নেই এই বিতর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। বিতর্ক যা হচ্ছে, তা সৃষ্টি করছে বিরোধীরা। অন্য দিকে, বিরোধীদের দাবি, অল্লুকে নিয়ে কংগ্রেস রাজনীতি করছে কি না, তার বড় প্রমাণ নতুন এফআইআর। যেখানে কংগ্রেস নেতা অভিযোগ করেছেন, ‘পুষ্পা ২’ ছবির একটি দৃশ্য নাকি রাজ্যের পুলিশবাহিনীকে অপমান করেছে। অল্লুকে ঘিরে রাজনৈতিক তরজা অব্যাহত। তবে অভিনেতার ঘনিষ্ঠ এবং অনুরাগীরা চাইছেন, যত দ্রুত সম্ভব এই জটিলতার শেষ হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy