পিস্তল সরিয়ে রাখে এই যুবক।
ছবিটা ঘুরছিল গত কাল থেকেই!
নিহত সাংবাদিক শুজাত বুখারির দেহরক্ষীর মাথা ধরে রয়েছে একটি লোক। ভাবা হয়েছিল, তা বোধ হয় সহমর্মিতারই হাত। কিন্তু যেটা দেখা যায়নি তা হল, মৃতপ্রায় ওই দেহরক্ষীকে গাড়ি থেকে নামানোর সময়ে তাঁর কোমরে গোঁজা নাইন এমএম পিস্তলটি পড়ে গিয়েছিল। আর সেটি তুলে নিয়েছিল সাদা কুর্তা, ফেজ টুপি পরা দাড়িওলা ‘সহমর্মী’ যুবকটি। গোয়েন্দাদের দাবি, পুলিশকর্মী ওই দেহরক্ষীর পিস্তল হাতিয়েই সে মিলিয়ে গিয়েছিল ভিড়ে।
গত কাল রাতেই সন্দেহভাজন তিন আততায়ীর ছবি প্রকাশ করেছিল জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। আজ দুপুরে সন্দেহজনক চতুর্থ ব্যক্তির নিপুণ হাতসাফাই ধরা পড়ে গোয়েন্দাদের চোখে। মোবাইলে তোলা সেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ে ইউটিউবেও। দ্রুত ওই যুবকের গত কালের স্পষ্ট মুখের ছবিটি সংবাদমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। পরে রাজ্য পুলিশ বিবৃতি দিয়ে বলে, ‘‘ছবির সূত্র ধরে জুবের কায়ুম নামে শ্রীনগরের সদেরাবালের বাসিন্দা ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। খোয়া যাওয়া পিস্তলটি মিলেছে তার কাছে। সে গত কাল যে জামা পরেছিল, উদ্ধার হয়েছে সেটিও। তবে সে কেন পিস্তল নিয়েছিল, তার কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।’’ হত্যা-রহস্যভেদে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়েছে। নেতৃত্বে ডিআইজি (মধ্য কাশ্মীর) ভি কে ভিরদি। শুজাতের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে আমজনতার সাহায্য চেয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থলের আশপাশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও ব্যবসায়ী সংস্থার অফিস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে সিসিটিভি ফুটেজ। শ্রীনগরের নানা জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে চলছে তল্লাশি।
মোটরবাইকে পালানো তিন সন্দেহভাজন আততায়ী আইএসআইয়ের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন লস্কর-এ-তইবার সদস্য বলে গত কালই দাবি করেছিল প্রশাসনের একাংশ। প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মোটরবাইক চালকের মুখ হেলমেটে ও তৃতীয় আরোহীর মুখ মাস্কে ঢাকা। মাঝখানে যে বসেছে, তার হাতে থলি। সন্দেহ করা হচ্ছে, তাতেই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র। কিন্তু থলি হাতে লোকটির মুখ ঢাকা পড়েছে চালকের দেহের আড়ালে।
ফলে কারও পরিচয়ই এখনও জানা যায়নি। আজ আটক হওয়া চতুর্থ ব্যক্তি তাদেরই সতীর্থ কি না, তা নিয়ে মুখ খোলেননি পুলিশকর্তারা। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কারা রয়েছে, তা নিয়েও সরকারি ভাবেও কিছু জানানো হয়নি। আইজি (মধ্য কাশ্মীর) শ্যাম প্রকাশ শুধু বলেন, ‘‘এটি সন্ত্রাসবাদী হামলা।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ভারত-পাক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ট্র্যাক-টু আলোচনার ক্ষেত্রে বরাবরই সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন শুজাত। সেই কারণে জঙ্গিদের নিশানার সামনের সারিতে ছিলেন তিনি। ২০০৬এও তাঁর উপরে হামলা হয়। সে যাত্রা বেঁচে যান তিনি।
লস্কর অবশ্য দায় চাপিয়েছে নয়াদিল্লির উপরে। জঙ্গি গোষ্ঠীটির অন্যতম নেতা মাসুদ শাহ বিবৃতিতে বলেন, ‘‘শুজাতের মৃত্যু ভারতের গুপ্তচর এজেন্সির একটি অন্যায় কাজ। যারাই কাশ্মীরের স্বাধীনতার বিপক্ষে, তাদের সঙ্গে ভারতের গুপ্তচর বাহিনীর শত্রুতা রয়েছে।’’ একই বক্তব্য হিজবুল মুজাহিদিনেরও।
শুজাত হত্যার নিন্দা করেও সুর চড়িয়েছে ইসলামাবাদ। গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার শাখা ভূস্বর্গে ভারতীয় সেনার জুলুম নিয়ে রিপোর্ট দেয়। যে রিপোর্ট নিয়ে টুইটও করেন শুজাত। পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মহম্মদ ফয়জল বলেন, ‘‘মানবাধিকার রিপোর্ট নিয়ে টুইট করার এক ঘণ্টার মধ্যেই শুজাতের হত্যার মধ্যে আশ্চর্য সমাপতন রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy