গিরিশ কারনাড।
এ বার অসহিষ্ণুতার শিকার হলেন নাট্যকার-অভিনেতা গিরিশ কারনাড। টিপু সুলতানকে নিয়ে ‘অহিন্দুত্ববাদী’ মন্তব্য করার জন্য তাঁর পরিণতি কালবুর্গীর মতোই হবে বলে হুমকি দেওয়া হল টুইটারে।
মঙ্গলবার টিপু সুলতানের জন্মজয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানে কারনাড মন্তব্য করেছিলেন, বেঙ্গালুরু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম কেম্পেগৌড়া থেকে বদলে টিপুর নামে রাখা উচিত। তাঁর কথায়, ‘‘বেঙ্গালুরু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম কেম্পেগৌড়ার বদলে টিপুর নামে রাখা উচিত। রাজা কেম্পেগৌড়া বেঙ্গালুরু শহরের প্রতিষ্ঠাতা হলেও স্বাধীনতা সংগ্রামে টিপু সুলতানের মতো অবদান তাঁর নেই।’’ এর পরেই ‘ইনটলারেন্ট চন্দ্র’ নামে এক টুইটার অ্যকাউন্ট থেকে নাট্যকারকে হুমকি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, তাঁরও পরিণতি হবে নিহত কন্নড় সাহিত্যিক কালবুর্গীর মতো!
কেম্পেগৌড়াকে নিয়ে তাঁর মন্তব্যের পরেই অবশ্য বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন কারনাড। গত কাল সেই মন্তব্যের জন্য ক্ষমাও চান তিনি। বলেন, ‘‘আমার মন্তব্যে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত।’’ তবে অসহিষ্ণুতার আঁচ যে তাতেও কমেনি, টুইটার হুমকি থেকেই স্পষ্ট। তবে এই খুনের হুমকিকে বিশেষ আমল দিতে রাজি নন ৭৭ বছরের কারনাড। আজ তিনি বলেন, ‘‘সৌভাগ্যবশত আমি ফেসবুক বা টুইটারে নেই। কোনও হুমকির কথা আমার জানাও নেই।’’
বিলেতে বসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজই বলেছেন, ‘‘আমাদের সমাজের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনও ঘটনা আমরা বরদাস্ত করি না।’’ কিন্তু অসহিষ্ণুতার ঘটনা কমছে কই! সেই তালিকায় আগেই ঢুকে পড়েছে কর্নাটক। গরুর মাংস খেলে খোদ কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার মাথা কেটে ফেলা হবে বলে হুমকি দিয়েছিলেন এক বিজেপি নেতা।
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
‘ভীত নই, মর্মাহত’, বললেন কারনাড
যে অনুষ্ঠানে কারনাড বিতর্কিত মন্তব্য করেন, সেখানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াও। তিনি সে দিন বলেছিলেন, ‘‘টিপু সুলতান এক জন দেশভক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী।’’ এতেই আরও চটে যায় বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। প্রথম থেকেই টিপু সুলতানের জন্মবার্ষিকী পালনের বিরোধিতা করে আসছে আরএসএস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। মঙ্গলবার এর প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে বন্ধ ডেকে ছিল বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। তাদের দাবি, টিপু এক জন অত্যাচারী শাসক ছিলেন। হিন্দু এবং খ্রিস্টানদের তিনি জোর করে ধর্মান্তরিত করতেন। মাদিকেরিতে বন্ধ সমর্থকদের সঙ্গে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ বেধে যায়। তা থামাতে পুলিশ লাঠিচার্জ এবং কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটালে এক বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সদস্যের মৃত্যু হয়। বুধবার পুলিশের গুলিতে আর এক জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এই অবস্থায় রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি। কর্নাটকের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সিদ্দারামাইয়ার পদত্যাগ দাবি করেছে কেন্দ্রের শাসক দল। পুলিশের হুলিতে মৃত্যুর দু’টি ঘটনার বিচারবিভাগীয় বা সিবিআই তদন্তও দাবি করেছে তারা। এ দিন দিল্লিতে দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘কর্নাটকে দু’জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা সামলাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। তাঁর অবশ্যই পদত্যাগ করা উচিত।’’
আজ কারনাডের সমর্থনে টুইট করেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বলেছেন, ‘‘এ বার মেরে ফেলার হুমকি গিরিশ কারনাডকে। এটা আর অসহিষ্ণুতা নয়, এটা সন্ত্রাস।’’ তবে বিহারে গো-হারান হারার পরেও বিজেপি যে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি থেকে সরেনি, কারনাড-কাণ্ডে তা ফের স্পষ্ট হয়ে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy