রাতের মানস অরণ্যে হাতির পাল। ছবি- রাজীবাক্ষ রক্ষিত। ইনসেটে বিজয়ীর শংসাপত্র।
এক সময় ভারতের সবচেয়ে সুন্দর ও সমৃদ্ধ অরণ্য হিসেবে মানা হত মানস জাতীয় উদ্যানকে। কিন্তু বড়ো আন্দোলন, এনডিএফবির দৌরাত্ম্য আর অবাধ পশুহত্যার জেরে গন্ডারহীন হয়ে পড়ে মানস। জঙ্গল ছেড়ে পালায় হাতির দল। বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের মুকুটও হারায় মানস। সংরক্ষণকর্মী, বন দফতরের চেষ্টা এবং শিকারি ও জঙ্গিদের বনরক্ষী হয়ে ওঠার হাত ধরে, শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে মানস ফের বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। ধীরে ধীরে জঙ্গলে ফিরে আসে হাতির দল। কাজিরাঙা ও পবিতরা থেকে প্রতিস্থাপিত হয় গন্ডার। প্রথম তফশিলভুক্ত ২১টি প্রাণীর আবাসস্থল মানসে হাতিদের মুছে যাওয়া আর ফিরে আসার গল্পই ফ্রেমবন্দি করেছিলেন প্রবীণ সিংহ আর মার্টিন ডর্ন। গোটা বিশ্বের ২৫০টি সংরক্ষণভিত্তিক ছবির মধ্যে এশিয় হাতির উপরে তৈরি এই ছবিটিই রাষ্ট্রপুঞ্জে বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবসে সেরা তথ্যচিত্রের সম্মান পেয়েছে।
মানসের গভীর জঙ্গলে প্রাণীদের দর্শন মেলাই কষ্টকর। গন্ডার কপাল ভাল হলে দেখা দেয়। বাঘ, কালো চিতাবাঘ, মেঘলা চিতাবাঘের দেখা মেলা লাখ টাকার লটারি মেলার সামিল। অবশ্য রাতের মানসের চেহারা অন্য। প্রাণীরা অনেকটাই নির্ভয় ঘুরে বেড়ায় বাঁশবাড়ি, ভুঁইঞাপাড়া, পানবাড়ি রেঞ্জজুড়ে। তাই, থার্মাল আর ইনফ্রারেড ক্যামেরায় ভরসা রেখে টানা দু’বছর ধরে প্রবীণ ও মার্টিন মানসের জঙ্গলে হাতিদের বিচরণ নিয়ে ছবি বানান।
‘কসমিক গ্লোবাল মিডিয়া’র পরিচালক প্রবীণ জানান, ২০১১ সালে প্রথমবার মানসের জঙ্গলে ঘুরতে এসে এখানকার অতীত ও বর্তমানের গল্প বনরক্ষীদের কাছে শুনে তিনি সেই সংরক্ষণের কাহিনী বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে উৎসাহী হন। বিশেষ করে ভারত ও ভুটান মিলিয়ে বিস্তৃত মানসের জঙ্গলে হাতিদের চলাফেরার ইতিহাস তাঁকে বেশি টেনেছিল। কিন্তু সকালের মানসে প্রাণীদের দেখা মেলা ভার। আবার রাতের অন্ধকারে হাতিদের ছবি তোলার মতো পরিকাঠামো, যন্ত্রপাতি তাঁর ছিল না। তখন তিনি ‘অ্যামোনাইট ফিল্ম’-এর মার্টিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জুটিতে চলে ছবি তোলার কাজ। বেশিরভাগটাই রাতে। তৈরি হয় ৫০ মিনিটের ছবি ‘মানস-রিটার্ন অফ দ্য জায়েন্ট্স’।
আরও পড়ুন- যাঁরা চাকরি করেন তাঁদের জন্য সুখবর, কেন জেনে নিন...
বিশ্ব বন্যপ্রাণ দিবস উপলক্ষে, এ বছর রাষ্ট্রপুঞ্জে বিপন্ন বন্যপ্রাণী ও প্রাণী দেহাংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসার উপরে কনভেনশনের আয়োজন হয়েছিল। তারই অংশ ছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল এলিফ্যান্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। সেখানে অংশ নেওয়া আড়াইশো ছবি ৭৫ জন বিচারক ছ’সপ্তাহ ধরে বিচার করেন। গত কাল ঘোষণা করা হয় বিজয়ীর নাম। এশিয় হাতির উপরে করা ছবির মধ্যে সেরা হয় ‘রিটার্ন অফ দ্য জায়েন্ট্স’।
খবরে বেজায় খুশি মুখ্য বনপাল অনিন্দ্য স্বরগয়ারি। তিনি জানান, মানসের অরণ্যকে তার আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনার জন্য বনরক্ষীরা অসম লড়াই চালাচ্ছেন। ন্যূনতম পরিকাঠামো সম্বল করে, গভীর অরণ্যে, প্রাণের মায়া না করে পাহারা দেন তাঁরা। সবকটি হাতি করিডর সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা হচ্ছে। ভারত থেকে হাতির দল চলে যায় ভুটানের রয়্যাল মানসের জঙ্গলে। ধীরে ধীরে মানসে সব ধরণের প্রাণীর সংখ্যাই বাড়ছে। আপাতত মানসে হাতির সংখ্যা প্রায় ৭০০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy