Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
ঝাড়খণ্ডে ক্যাশলেস পঞ্চায়েত

ডেবিট কার্ড, পেটিএম নিয়েও নগদেই আস্থা

চারটে ফুলকা (হাতরুটি) আর এক প্লেট পাঁচমিশালি তরকারি। দাম ২৫ টাকা। মিলবে ক্যাশলেসেও। গোটা চিকেন ১১০ টাকা, কাটা ১৬০ টাকা। দোকানি ক্যাশলেস বিক্রির জন্য তৈরি। ‘বিনা কত্থা’ (খয়ের ছাড়া) মিঠা পান। দাম পাঁচ টাকা। তাও ক্যাশলেস বিক্রিতে আপত্তি নেই বেনারসি পানওয়ালার। টায়ার সারাইয়ের দোকান। সেখানেও ঝুলছে নগদহীন কারবারের বিজ্ঞপ্তি।

আর্যভট্ট খান
চন্দ্রপুরা শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

চারটে ফুলকা (হাতরুটি) আর এক প্লেট পাঁচমিশালি তরকারি। দাম ২৫ টাকা। মিলবে ক্যাশলেসেও।

গোটা চিকেন ১১০ টাকা, কাটা ১৬০ টাকা। দোকানি ক্যাশলেস বিক্রির জন্য তৈরি। ‘বিনা কত্থা’ (খয়ের ছাড়া) মিঠা পান। দাম পাঁচ টাকা। তাও ক্যাশলেস বিক্রিতে আপত্তি নেই বেনারসি পানওয়ালার। টায়ার সারাইয়ের দোকান। সেখানেও ঝুলছে নগদহীন কারবারের বিজ্ঞপ্তি।

হেয়ার কাটিং সেলুন। চুল, দাড়ি একসঙ্গে ৪০ টাকা। নগদহীন লেনদেনের বি়জ্ঞপ্তি সাঁটানো আছে সেখানেও। গ্রামের প্রতিটি দোকানে টাঙানো রয়েছে বোর্ড। সেখানে লেখা, ‘‘এটি ক্যাশলেস দোকান। এখানে নগদ লেনদেন ছাড়াই কারবার করা যাবে।’’

প্রশ্ন হল— শুনছি, লিখেওছে। হচ্ছে কি?

গত কালই ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাস সগর্বে ঘোষণা করলেন বোকারোর চন্দ্রপুরা ব্লকের দুগদি দক্ষিণ ও দুগদি পশ্চিম গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম। রাজ্যের প্রথম দুই ‘ক্যাশলেস পঞ্চায়েত’। মুখ্যমন্ত্রী অভিনন্দন জানালেন দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের। চন্দ্রপুরার বিডিও এবং বোকারোর জেলাশাসকও অভিনন্দিত। রঘুবর দাসের এই ঘোষণার দিনেই এই দুই এলাকায় টহল দিয়ে দেখা গেল বেশির ভাগ দোকানেই সারা দিন ধরে নগদেই লেনদেন চলছে।

দুগদির এই দুই পঞ্চায়েত ঝাড়খণ্ডের আর পাঁচটা গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো নয়। চন্দ্রপুরা শহর লাগোয়া এই এলাকা আসলে গঞ্জ, গ্রাম নয়। সাধারণ অবস্থাপন্ন গ্রামবাসীদের সঙ্গে রয়েছে ভারত কোকিং কোল লিমিটেডের বিশাল আবাসন। এলাকায় পাকা বাড়িই বেশি। রাস্তাঘাটও পাকা। বেশির ভাগ মানুষই শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত। দুই পঞ্চায়েতের মধ্যে রয়েছে তিনটি মোবাইল টাওয়ার। ফলে নেটওয়র্ক সমস্যাও নেই। ‘আর্দশ ক্যাশলেস গ্রাম’ হওয়ার জন্য যা যা দরকার, তার প্রায় সবই রয়েছে এখানে।

তবু ঘোষণা ও বাস্তবে রয়ে গিয়েছে বিস্তর ফারাক।

এই উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে এলাকার ব্যাঙ্ক কর্মীদের। দুগদি এলাকায় রয়েছে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা। এর মধ্যে একটি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রাজেন্দ্র প্রসাদ জানালেন, ‘‘এই দুই গ্রাম পঞ্চয়েতের প্রতিটি দোকানদারকে আমরা বিনামূল্যে সোয়াইপ মেশিন দিচ্ছি।’’ কিন্তু সোয়াইপ মেশিন থাকলেই কি তাঁরা ‘ডিজিটাল লেনদেন’ করছেন? মুদির দোকানের মালিক উমেশপ্রসাদ বর্মা জানান, ‘‘সোয়াইপ মেশিনটা পড়েই রয়েছে। একবার ক্যাশলেস লেনদেনের ছবি মোবাইলে তুলেছিলাম। তার পর আর কিছু হয়নি। আসলে মানুষের অভ্যস্ত হতে কিছু সময় তো লাগবে!’’

বিডিও মনোজ কুমার, দুই পঞ্চায়েতের প্রধান রেণু দেবী ও সন্তোষ পাণ্ডে অবশ্য মানুষের অভূতপূর্ব সাড়ার কথা বললেন। বিডিও বললেন, ‘‘এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতকে ক্যাশলেস করতে আমরা গত একমাস দিনরাত এক করে খেটেছি।’’ নীতি আয়োগের নিয়ম অনুযায়ী ব্লকের ‘ডিজিটাল বাহিনী’ বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিটি সদস্যের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করিয়েছেন। ডেবিট কার্ড করানো হয়েছে। বাড়ির অন্তত একজনের কাছে রয়েছে স্মার্টফোন।

কিন্তু ডেবিট কার্ড বা স্মার্টফোন থাকলেই কি তাঁরা নগদহীন লেনদেন করছেন? গ্রামেরই একটি বাড়িতে কড়া নাড়তেই দরজা খুললেন চন্দন পাণ্ডে। তাঁদের বাড়ির দরজায় ‘ঘোষণাপত্র’ লটকানো রয়েছে, ‘আমি ও আমার পরিবার বোকারোর জেলা প্রশাসন দ্বারা সম্মানিত ক্যাশলেস পরিবার।’ কিন্তু ‘সম্মানিত’ পরিবারটি কি ক্যাশলেস লেনদেন করছেন? চন্দনবাবুর লাজুক জবাব, ‘‘আর একটু রপ্ত করতে হবে। মোবাইলটা একটু গড়বড় করছে।’’ চন্দনবাবুর কথার প্রতিধ্বনি করলেন অধিকাংশ বাসিন্দাই। এখনও ‘ক্যাশে’ই তাঁদের আস্থা বেশি।

ফুলকা রুটির দোকানের মালিক দিলীপ সিংহের বক্তব্য, ‘‘দোকানে পোস্টার লাগানো আছে ঠিকই, কিন্তু বেশির ভাগ তো নগদেই খাচ্ছে দেখছি। আর নগদ পেলে তো আমার ভালই।’’ সেলুন মালিক ধনঞ্জয় দেখালেন, দোকানে পেটিএম স্টিকার। কিন্তু চুল-দাড়ি ‘বানাতে’ যাঁরা আসছেন পকেটে নগদ নিয়েই আসছেন।

সব দেখেশুনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কটাক্ষ— এ ভাবে চললে তো পুরো ঝাড়খণ্ডই দ্রুত ক্যাশলেস হয়ে যাবে। আশাবাদী বিডিও-র পাল্টা যুক্তি, ‘‘কিছুই তো ছিল না। সবে শুরু হল। সবার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হল। ডেবিড কার্ড হল। ধীরে ধীরে সবাই ক্যাশলেস লেনদেন রপ্ত করবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Paytm Debit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE