স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা। ছবি: পিটিআই।
কংগ্রেস তথা বিরোধীদের হট্টগোলের জেরে বাদল অধিবেশনের গোটাটাই এ বার জলে ধুয়ে গেছে। তা নিয়ে মূলত গাঁধী পরিবারকে নিশানা করে গতকাল ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ পদযাত্রাও করেছেন এনডিএ-র মন্ত্রী-সাংসদরা! আর তার পর পরই আজ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্ সন্ধ্যায় সংসদের অচলাবস্থা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
সংসদের অচলাবস্থা নিয়ে বরাবরই স্পর্শকাতর প্রণববাবু। আজ জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘তর্কের পরিবর্তে সংসদ এখন লড়াইয়ের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ফলে সংবিধানের প্রণেতা বাবাসাহেব অম্বেডকরের কথা স্মরণ করার সময় আসন্ন।’’ সংবিধান সভায় অম্বেডকরের বক্তৃতার একটি উদ্ধৃতি তুলে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘যদি গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠান চাপের মধ্যে থাকে, তা হলে দেশের মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলিকেও গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। শুধরোনোর রাস্তা এর মধ্যে থেকেই বেরোবে।’’
রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্য নিয়েই আজ রাজনীতির অলিন্দে হইচই পড়ে যায়। বিশেষ করে উচ্ছ্বসিত বিজেপি নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও ব্যক্তিগত আলোচনায় তাঁরা জানান, রাষ্ট্রপতি এ কথা বলে কংগ্রেস তথা বিরোধীদেরই বার্তা দিলেন। এমনিতেই সংসদ অচল করার বিষয়টিকে সামনে রেখে কংগ্রেসের গায়ে সংস্কার-বিরোধী ছাপ দেওয়ার জন্য দেশজুড়ে দলকে প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্রপতির এই মন্তব্য তাঁদের সেই প্রচার আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।
রাষ্ট্রপতির স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতা সরকার লিখে দেয় না। এটা একেবারেই রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত মত। কিন্তু আজকের বক্তৃতার পর অনেকেই মনে করছেন, এ ব্যাপারে হয়তো প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া স্তরে আলোচনা হয়েছে রাষ্ট্রপতির। প্রসঙ্গত, গত বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রণববাবুর বক্তৃতা নিয়েও সমান কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে আগে জাতির উদ্দেশে সেই বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি মোদ্দা এই বার্তা দিয়েছিলেন যে, নির্বাচনে মানুষ যেন একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনের পক্ষে রায় দেয়। তখনও এই জল্পনা হয়েছিল যে, তা হলে কি চার দশক ধরে কংগ্রেসি রাজনীতি করার পর প্রণববাবু শেষ পর্যন্ত বিজেপি-র সুবিধা করে দিলেন? মজার ব্যাপার হল, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাতে প্রণববাবুর সেই মন্তব্যের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। মোদী বলেছিলেন, ‘দাদা খুশি তো’!
যদিও রাষ্ট্রপতি ভবনের একটি সূত্রের মতে, প্রণববাবুর বক্তৃতা শাসক দলকে সুবিধা করে দিলেও এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ খোঁজা বৃথা। কেন না ব্যক্তি প্রণব মুখোপাধ্যায় বরাবরই সংসদের অচলাবস্থা নিয়ে স্পর্শকাতর। কেন্দ্রে যখন ইউপিএ সরকার চলছে এবং বিজেপি বিরোধী আসনে, তখনও জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় সংসদের প্রসঙ্গ তুলে এনেছিলেন প্রণববাবু।
তা ছাড়া কংগ্রেসে থাকার সময়েও সংসদ অচল করা নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর বহুবার মতান্তর হয়েছে। এমনকী সম্প্রতি একবার সনিয়া গাঁধী তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি কংগ্রেস সভানেত্রীকেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, সংসদ অচল করে রাখা গণতন্ত্রে পক্ষে মোটেই সুস্থ লক্ষণ নয়!
অতীতের ঘটনা নিয়ে ব্যাখ্যা যা-ই থাক, রাজনীতিতে সাম্প্রতিকটাই বেশি নজর কাড়ে। প্রণববাবুর আজকের বক্তৃতার পর কংগ্রেসে তাঁর পুরনো বন্ধুরা কিছুটা অস্বস্তিতে। তবে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির প্রবীণ সদস্য শাকিল আহমেদ বলেন, রাষ্ট্রপতি আদর্শগত অবস্থান তুলে ধরেছেন। তা ছাড়া এখানে অনেকগুলো কথা রয়েছে।
এক, বিজেপির আহ্লাদিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ইউপিএ জমানায় দশ বছর ধরে বিজেপি যে ভাবে সংসদ অচল করেছে, তা স্বাধীনতা উত্তর সময়ে রেকর্ড! লোকসভার তৎকালীন নেতা হিসেবে সেই ঝঞ্ঝাট মূলত প্রণববাবুকেই পোহাতে হয়েছিল।
দ্বিতীয়ত, এ বার সংসদ অচল থাকার জন্য দায়ী সরকারপক্ষই। কারণ, লোকসভায় সরকার যদি প্রথম দিনই মুলতুবি প্রস্তাব মেনে নিত, তা হলে সংসদ অচল থাকত না।
তার থেকেও বড় হল, ইউপিএ জমানায় লোকসভার নেতা হিসেবে প্রণববাবু যে ভাবে দুই সভার তৎকালীন দুই বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলির সঙ্গে সমন্বয় করতেন, তা মোদী সরকারের কেউ করছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy