‘সুইস লিকস’-এর পরে ‘পানামা পেপারস’। এইচএসবিসি-র ফাঁস হওয়া তালিকায় খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল ৫৬৯ জন ভারতীয়ের। পানামার আইনজীবী সংস্থা ‘মোজাক ফঁসেকা’-র তালিকায় এখনও পর্যন্ত ভারতীয়ের সংখ্যা ৫০০। ওই তালিকার তথ্য অনুযায়ী, অমিতাভ বচ্চন, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের মতো অনেকেই করের নানা স্বর্গরাজ্যে বিদেশি সংস্থার পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার ছিলেন বা আছেন। এই ৫০০ জনের মধ্যে কেউ আইন ভেঙে বিদেশে লগ্নি করেছিলেন কিনা তা নিয়ে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।
কর দেওয়ার ক্ষেত্রে শিথিল নিয়মের জন্য ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, বাহামার মতো মুলুক বরাবরই রয়েছে প্রথম সারিতে। তেমনই কিছু স্বর্গরাজ্যে লগ্নির একটি তালিকা ফাঁস হয়েছে পানামার আইনজীবী সংস্থা ‘মোজাক ফঁসেকা’-র দফতর থেকে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছিল বিশ্বের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই তালিকায় রয়েছে বিশ্বের বেশ কিছু বিশিষ্ট ও ধনী ব্যক্তির নাম। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আবার আছেন হলিউডের তারকা জ্যাকি চ্যান, ফুটবলার লিওনেল মেসিও।
ভারতীয়দের মধ্যে কর্পোরেট কর্তা থেকে রাজনীতিক- নাম রয়েছে অনেকেরই। তবে অবশ্যই নজর কাড়ছেন অমিতাভ বচ্চন ও তাঁর বউমা ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন। ওই নথি অনুযায়ী, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস ও বাহামায় ১৯৯৩ সালে তৈরি চারটি সংস্থার পরিচালন পর্ষদে ছিলেন অমিতাভ। ওই সংস্থাগুলির মূলধনের পরিমাণ ছিল ৫ থেকে ৫০ হাজার ডলারের মধ্যে। কিন্তু তারা কোটি কোটি ডলার দামের জাহাজ কেনাবেচা করেছে। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে ২০০৫ সালে নথিবদ্ধ সংস্থা অ্যামিক পার্টনার্সের পরিচালন পর্ষদে ছিলেন ঐশ্বর্যা, তাঁর বাবা, মা ও ভাই। পরে ঐশ্বর্যার অনুরোধে তাঁকে পরিচালকের বদলে শেয়ারহোল্ডার করা হয়।
অমিতাভের প্রতিক্রিয়া এখনও জানা যায়নি। তবে ঐশ্বর্যার মুখপাত্র জানিয়েছেন, ওই তথ্য একেবারেই ভুয়ো। আইন মেনেই তাঁরা বিদেশে লগ্নি করেছিলেন বলে দাবি বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার কর্তাদের।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী জানান, ওই কমিটিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, আয়কর দফতর, আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ও কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদের অফিসাররা থাকবেন। প্রতিটি নাম ধরে ধরে চুলচেরা বিচার করা হবে। প্রয়োজন হলে বিদেশি সরকারেরও সাহায্য নেওয়া হবে। কেউ আইন ভেঙে থাকলে তাঁকে রেয়াত করা হবে না। কালো টাকা উদ্ধারে আগেই একটি বিশেষ দল তৈরি হয়েছিল। তারাও বিষয়টির তদন্ত করবে। কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার মতে, ‘‘এই ধরনের কমিটি গড়ে সরকার অনেক তৎপরতা দেখায়। আদপে এটা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার কল।’’
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের মতে, বিদেশে সংস্থা অধিগ্রহণ করা কিংবা শেয়ার কেনা মানেই বেআইনি কাজ করা নয়। ২০০৪ সালে যখন বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় বেড়ে গিয়েছিল, তখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বিদেশে শেয়ার কেনার অনুমতি দিয়েছিল। প্রথমে বিদেশে বছরে ২৫ হাজার ডলারের শেয়ার কেনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরে ধাপে ধাপে সেই পরিমাণ দাঁড়ায় আড়াই লক্ষ ডলারে। ২০১৩ সালে অবশ্য সেই পরিমাণটি এক ধাক্কায় অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আবার ২০১৩ সালেই বিদেশে নিজের সংস্থা গড়া বা যৌথ উদ্যোগ শুরুর ছাড়পত্র দেয়। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের মতে, তদন্ত করে দেখতে হবে কেউ বিদেশে টাকা নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বেআইনি পথ নিয়েছেন কিনা। বিদেশে লগ্নি করা টাকা থেকে আয়ের ক্ষেত্রে দেশে আইন ভাঙা হয়েছে কিনা। অর্থ মন্ত্রকের অফিসারদের মতে, ২০১৩ সালের আগে কেউ বিদেশে সংস্থা তৈরি করে থাকলে জরিমানা আদায় করা হবে। গুটিয়ে ফেলতে বলা হবে সেই সংস্থা। পানামা নথির তদন্তকারী সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, তাদের হাতে আরও নাম আছে। সুতরাং নাটকের অারও অঙ্ক বাকি বলেই মত অনেকের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy