ভারতের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনল পাকিস্তান। শুধুই অভিযোগ নয়। বালুচিস্তান থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার কূলভূষণ যাদব নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পাক সরকার ইসলামাবাদে নিয়ে এসেছে জেরার জন্য। দৃশ্যতই অস্বস্তিতে ভারতীয় নেতৃত্ব গোটা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি সময়ের আগে অবসর নিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও যোগাযোগ নেই।
সামনেই ভারত এবং পাকিস্তানের শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে ওয়াশিংটন ডিসি-তে। সেখানে পরমাণু নিরাপত্তা সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ঠিক তার আগে এই ঘটনায় দু’দেশের মধ্যে আস্থার অভাব ফের স্পষ্ট হয়ে, তৈরি হল তিক্ততা। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে আজ পাকিস্তান অভিযোগ করেছে, র’-এর এক অফিসার বালুচিস্তানে অবৈধ ভাবে ঢুকে ষড়যন্ত্রমূলক কাজকর্ম চালাচ্ছেন। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পাকিস্তানের বিদেশসচিব। বালুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শরফরাজ বুগতি দাবি করেছেন, ওই ভারতীয় প্রাক্তন অফিসার নাকি বালুচিস্তানে পৌঁছে সেখানকার বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করেছিলেন। ওই অঞ্চলে হিংসায় মদত দিতেও সচেষ্ট ছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন- ইয়েমেনে অপহৃত ভারতীয় মিশনারিকে আজই খুন করবে আইএস?
সাউথ ব্লক অবশ্য এই অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, ভারত সরকারের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির কোনও সম্পর্ক নেই। গোটা অঞ্চলের স্বার্থে শান্ত এবং সুস্থির পাকিস্তান ভারতের কাম্য। তবে গোটা ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিক পারদ কিছুটা চড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি কাঠমান্ডুতে ভারত-পাক দু’দেশের বিদেশমন্ত্রী পাশাপাশি বসে দ্বিপাক্ষিক সামগ্রিক আলোচনা চালু করার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। আগামী রবিবার পঠানকোট কান্ডের তদন্ত করতে আসছে পাকিস্তানের বিশেষ তদন্তকারী দল বা ‘সিট’। তার আগে এই ধরনের ঘটনা বাঞ্ছনীয় ছিল না বলেই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। ভারত যত বারই কাশ্মীরে পাক জঙ্গি অনুপ্রবেশ এবং নাশকতার অভিযোগ তুলেছে, ইসলামাবাদও পাল্টা বালুচিস্তানে ভারতীয় হস্তক্ষেপের বিষয়টি তুলে এসেছে। মুশারফ এবং জারদারির জমানায় এই অভিযোগ এতটাই প্রবল ছিল যে, শর্ম অল শেখ-এর যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছিল মনমোহন সরকার। পরে বিষয়টি নিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে বিতর্কের ঝড় ওঠে। নানা প্রক্রিয়ায় তখন তাকে ধামাচাপা দিতে বাধ্য হয়েছিল নয়াদিল্লি।
নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই বিষয়টিকে প্রত্যক্ষ ভাবে সামনে নিয়ে আসার ঘটনা এই প্রথম। ভারতের সঙ্গে আলোচনার পর্ব শুরু হওয়ার আগে কৌশলগত ভাবে মোদী সরকারকে চাপে রাখার এটি এক কৌশল বলেই মনে করছে বিদেশমন্ত্রকের একটিু বড় অংশ। নওয়াজ সরকারের পক্ষ থেকে আজ একটি বিবৃতি দিয়ে, ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে পাকিস্তানের বিদেশসচিবের ডিমার্শ দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে। গুপ্তচরবৃত্তির এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই নয়াদিল্লি তার পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বলা হয়েছে যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি এক সময় নৌবাহিনীতে কাজ করতেন ঠিকই কিন্তু সময়ের আগেই অবসর নিয়ে নেওয়ায় তার সঙ্গে ভারত সরকারের কোনও যোগসূত্র নেই। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপের কথায়, ‘‘আমরা ওই ব্যাক্তির সঙ্গে ভারতীয় কূটনীতিকদের যোগাযোগের জন্য আবেদন জানিয়েছি। কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা গলানোর অভিপ্রায় ভারতের নেই। আমরা বিশ্বাস করি, শান্তিপূর্ণ পাকিস্তান গোটা অঞ্চলের জন্যই জরুরি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy