বিরোধীরা একজোট হয়ে বিরোধিতা করলেও নরেন্দ্র মোদীর সরকার সোমবারই রাজ্যসভায় বিমা বিল আনতে চাইছে। মার্কিন বিদেশসচিব জন কেরি সদ্য ভারত ঘুরে গেলেন। আগামী সপ্তাহে আসছেন সে দেশের প্রতিরক্ষা সচিব চাক হেগেল। কিছু দিন পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যাবেন আমেরিকা সফরে। এ রকম একটা সময়ে আর্থিক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রথম বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিমা বিলটি সংসদের চলতি অধিবেশনেই পাশ করিয়ে নিতে চায় সরকার। যদিও বিলটি রুখে দিতে বাম ও কংগ্রেসের পাশে এ বারে আসরে নেমেছে তৃণমূলও।
গত কাল রাজ্যসভার কর্মসূচিতে বিলটি থাকলেও বিরোধী দলগুলি একমত না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তা আনাই হয়নি। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টা পরে আরও আক্রমণাত্মক ভূমিকা নিল বিরোধীরা। আজ তৃণমূল এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে বিলটিকে সংসদীয় সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব আনা হল। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, এই বিলের বিরোধিতা করার ব্যাপারে ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি-সহ মোট ১১টি দলের মধ্যে আজ ঐকমত্য হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা সংখ্যা তাতে বিলের বিরোধিতায় একজোট হয়েছেন প্রায় ১২৫ জন সাংসদ। রাজ্যসভায় এমনিতেই সংখ্যালঘু বিজেপি। তাই বিরোধীরা এ ভাবে একজোট হওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়েছে সরকারের। কারণ, ২৪২ সদস্যের রাজ্যসভায় বিল পাশ করাতে হলে প্রয়োজন অন্তত ১২২ জনের সমর্থন। সোমবারের আগে তাই সপা-বসপার মতো দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিরোধী জোট ভাঙতে চাইছে বিজেপি, যাতে বিল পাশের পথ প্রশস্ত করা যায়। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, সরকার তার দু’মাসের মাথায় প্রথম বড় ধাক্কা খেতে চলেছে এই বিমা বিল নিয়ে।
রাজ্যসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতে, আসলে আমেরিকাকে সংস্কারের বার্তা দিতে যেন-তেন-প্রকারেণ বিল পাশ করিয়ে নিতে চাইছে মোদী সরকার। তাঁর কথায়, “ধারাবাহিক ভাবে আমরা এই বিলের বিরোধিতা করেছি। বিলটিতে বিমাক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়িয়ে ২৬ থেকে ৪৯ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে বিদেশি সংস্থাগুলির লাভ হতে পারে, কিন্তু দেশের মধ্যবিত্ত মানুষের সমূহ বিপদ।”
বিলটি নিয়ে তৃণমূলের আপত্তি মূলত দু’টি বিষয়ে। এক, এতে এফআইআই (ফরেন ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর)-দের যুক্ত করা হয়েছে। ১৪৫০টিরও বেশি এফআইআই সেবি-তে নথিভুক্ত থাকলেও বিমা ক্ষেত্রে এদের ছড়ি ঘোরানোর সুযোগ দেওয়া হোক, এটাই চায় না তৃণমূল। কারণ, এই বিনিয়োগকারীরা তাদের ইচ্ছে হলেই লগ্নি তুলে নিতে পারবে।
তৃণমূলের দ্বিতীয় আপত্তি, এই বিল রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাগুলির বিলগ্নিকরণের পথ করে দেবে। অথচ এই সংস্থাগুলিই দেশের বিপুল সংখ্যক মধ্যবিত্তের বড় ভরসা। এদের টাকা সরকারি বন্ড, মিউনিসিপালিটি বন্ড বা ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে বিনিয়োগ করা উচিত। কিন্তু আন্তর্জাতিক বিমা সংস্থাগুলি শেয়ার বাজার, মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা খাটাতে পছন্দ করে। লাভ হলে এ সব সংস্থার কর্তাদের মোটা অঙ্কের প্রাপ্তি ঘটবে, কিন্তু লোকসান হলে, গরিব ও মধ্যবিত্তরা দেখবেন তাঁদের টাকা কমে গেল। ২০০৮-এর মন্দায় আমেরিকায় যা হয়েছে, তা থেকেই শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ডেরেক। তাঁর বক্তব্য, “ওখানে একটা গোটা প্রজন্মকে অবসরের চিন্তা শিকেয় তুলে ৭০-এর কোঠা পর্যন্ত কাজ করতে হবে দেনা শোধ করতে। আমরা কি ভারতে এর পুনরাবৃত্তি চাইব?” ডেরেকের দাবি, এই দু’টি বিষয়ে বামেদের যেমন আপত্তি রয়েছে, তেমনই বিজেপির অনেকেও একই আশঙ্কা করছেন। যদিও তাঁরা প্রকাশ্যে বলতে ভয় পাচ্ছেন। কংগ্রেসের সুনির্দিষ্ট একটা অবস্থান নেওয়ার সময় এসেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের ওই নেতা।
রাজ্যসভায় বিলটিকে কী কৌশলে ঝুলিয়ে দেওয়া যায় তা নিয়ে আজ নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল। বিজেপি নেতৃত্ব জানেন, কংগ্রেসের পক্ষে এই বিলের বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। ইউপিএ জমানাতেই তারা বিমায় বিদেশি লগ্নির পরিমাণ বাড়াতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন মোদী সরকার দু’মাসের মাথায় বিলটি পাশ করিয়ে কৃতিত্ব নিক, এটা হতে দিতে চায় না কংগ্রেস। সে কারণে তারা সিলেক্ট কমিটির অছিলায় বিলটি পিছিয়ে দিতে চাইছে।
কেন্দ্রের সংসদীয় বিষয়ের প্রতিমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর আজ বলেন, “কংগ্রেস কোন মুখে এখন বিলের বিরোধিতা করবে? তারা এখন তাই তৃণমূল-বামেদের মতো দলগুলির বিরোধিতার আশ্রয় নিচ্ছে। হাতে এখনও দু’দিন আছে। এর মধ্যে জল কোন দিকে গড়ায়, তা দেখা যাক।” বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, লোকসভায় বিরোধী দলনেতার পদ না পাওয়ায় কংগ্রেস গোঁসা করে বসে রয়েছে। সে কারণে লোকসভায় সম্ভব না হওয়ায় নানা বিষয়ে রাজ্যসভায় সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। কিন্তু এখনও সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলি বণ্টন করা বাকি। সেগুলি নিয়েও বিভিন্ন দলের সঙ্গে কথা বলা হবে। তাতে যদি বিরোধী জোটকে ভাঙা যায়। কোনও দল যদি বিরোধিতা করে সভা ত্যাগ করে, তা হলেও সংখ্যার অঙ্কে এগিয়ে থাকতে পারবে সরকার। সোমবার হুইপ জারি করেছে বিজেপি। যাতে ভোটাভুটির পরিস্থিতি এলেও অসুবিধা না হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy