সুপ্রিম কোর্টে মুখ পোড়ার দু’দিনের মধ্যেই নতুন অস্বস্তিতে অরবিন্দ কেজরীবাল। এ বার তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধেই দিল্লি সরকারে কার্যনির্বাহী মুখ্যসচিব নিয়োগ করলেন উপ-রাজ্যপাল নজিব জঙ্গ। আর এই আমলা নিয়োগকে কেন্দ্র করে নতুন করে দিল্লির উপ-রাজ্যপালের সঙ্গে তীব্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়লেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবাল।
দু’পক্ষের সংঘাত এমন পর্যায়ে যে উপ-রাজ্যপাল নাজিব জঙ্গের ইচ্ছায়, নতুন কার্যনির্বাহী মুখ্যসচিব দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাল্টা পদক্ষেপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই নিয়োগ পত্র যিনি জারি করেছেন, সেই কর্মীবর্গ দফতরের মুখ্যসচিবকেই পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি। মুখ্যসচিব নিয়োগ আটকাতে না পারলেও, শেষ পর্যন্ত কেজরীবালের কোপে পড়ে দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে কর্মীবর্গ দফতরের সচিব অরিন্দম মজুমদারকে। আজ রাতে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে দিল্লি সরকার।
নাজিব জঙ্গের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ কেজরীবাল নির্বাচিত সরকারের কাজে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে দরবার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ দিকে উপ-রাজ্যপাল ও সরকারের মধ্যে যে ভাবে সংঘাত শুরু হয়েছে, তাতে অস্বস্তিতে দিল্লির
আমলারা। তাঁদের ব্যাখ্যা, দিল্লি সরকারে কর্মরত আমলাদের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের দড়ি টানাটানির শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের। এ ক্ষেত্রে যেমন স্রেফ জঙ্গের নির্দেশ মেনে নিয়োগ পত্র জারি করায় অরিন্দমবাবুর উপর শাস্তির খাঁড়া নেমে এসেছে।
দিল্লির বর্তমান মুখ্যসচিব কে কে শর্মা আমেরিকায় ছুটি কাটাতে যাওয়াতেই সমস্যার সূত্রপাত। সেই দায়িত্বে পরিমল রাইকে বসাতে চেয়েছিলেন কেজরীবাল। কিন্তু জঙ্গ সেই সুপারিশ খারিজ করে দিয়ে বিদ্যুৎসচিব শকুন্তলা গামলিনকে ওই পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর দফতর জানিয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের ২৩৯-এএ ধারা অনুযায়ী উপ-রাজ্যপালই হলেন দিল্লির প্রতিনিধি। তিনি রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে মুখ্যসচিব নিয়োগ করতে পারেন। ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্র তথা তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
জ্যোতি বসুর আমলে পশ্চিমবঙ্গে বা রাবড়ী দেবীর জমানায় বিহারে মুখ্যসচিবের নাম নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের আপত্তি থাকলেও শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই মেনে নেওয়া হয়েছিল।
যদিও পাল্টা যুক্তিতে দিল্লির উপ-মুখমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া বলেছেন, ‘‘নিয়োগ নিয়ে মন্ত্রিসভার সঙ্গে তাঁর মতভেদ হলে, রাষ্ট্রপতির মতামত চাইতে পারতেন উপ-রাজ্যপাল। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভাকে জানাতে পারতেন। তা তিনি করেননি।’’ উপ-রাজ্যপালের এই সক্রিয়তাকে ‘সংবিধান বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে সিসৌদিয়ার মন্তব্য, ‘‘আমি কর্মীবর্গ দফতরের মন্ত্রী। কিন্তু এই নিয়োগ নিয়ে কিছুই জানি না। উপ-রাজ্যপাল মুখ্যসচিবকে নিয়োগ করতে এ ভাবে সরাসরি নির্দেশ দিতে পারেন না। উনি যা করছেন, তা সম্পূর্ণ ভাবে সংবিধান বিরোধী।’’ যদিও সিসৌদিয়ার যুক্তি খারিজ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ব্যাখ্যা, মুখ্যসচিব বা রাজ্যপাল নিয়োগে রাজ্যের পছন্দ থাকতেই পারে। কিন্তু শেষ সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রই।
শকন্তুলা গামলিনের নিয়োগ প্রশ্নে কেন আপত্তি করছেন কেজরীবাল?
সরাসরি না হলেও, পরোক্ষে ওই আমলার সঙ্গে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির স্বার্থের সম্পর্ক থাকার অভিযোগ এনেছে কেজরীবালের সরকার। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ দফতরের সচিব থাকায় তাঁর সঙ্গে এই সংস্থাগুলির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এমনকী ওই সংস্থাগুলির হয়ে একাধিকবার সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। যা সরকারের নীতি বিরুদ্ধ।
এ দিকে ক্ষমতায় এসেই বিদ্যুতের দাম কমিয়েছে দিল্লি সরকার। যা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে সংস্থাগুলি। তাই আশঙ্কা, কেজরীবালের সরকার যখন বিদ্যুতের মাসুল কমিয়ে সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে, তখন ওই আমলাকে নিযুক্ত করলে সেই লড়াই বাধাপ্রাপ্ত হবে। সে জন্যই এই নিয়োগে আপত্তি রয়েছে কেজরীবালদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy