—প্রতীকী ছবি
মহাকাব্য থেকে বর্তমান ভারত— ইচ্ছামৃত্যু বা নিষ্কৃতিমৃত্যুর উদাহরণ রয়েছে সর্বত্র। কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত কোনও বন্দি প্রায় তিন দশক জেলে কাটানোর পর মৃত্যুকেই মুক্তির পথ হিসাবে বেছে নিতে চাইছেন, এমনটা সম্ভবত আগে কখনও শোনা যায়নি।
রাজীব গাঁধী হত্যা মামলায়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি পেয়েছিলেন রবার্ট পায়াস। ২৭ বছর ইতিমধ্যেই জেলে কাটিয়ে ফেলেছেন। এ বার ‘জেল-যন্ত্রণা’ থেকে মুক্তি পেতে স্বেচ্ছামৃত্যুর আর্জি জানালেন ওই মামলার অন্যতম এই দোষী। সম্প্রতি তামিলনাড়ু সরকারকে একটি চিঠি লিখেছেন তিনি। সেখানে রবার্ট জানিয়েছেন, এত বছর জেলে কাটানোর পর জীবনের মানেটাই হারিয়ে ফেলেছেন। তাঁর আশঙ্কা, সুদূর ভবিষ্যতে সরকারের তাঁকে মুক্তি দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। আর তাই স্বেচ্ছায় মৃত্যু‘দণ্ড’ই চাইছেন তিনি!
১৯৯১-এর ২১ মে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুমবুদুরে একটি জনসভায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মারা যান প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী। দীর্ঘ ৮ বছর ওই হত্যা মামলার শুনানি চলে আদালতে। শেষে রায় দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত সাত জনের মধ্যে তিন অপরাধী সন্থান, মুরুগান এবং আরিভুকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনায় সুপ্রিম কোর্ট। পরে অবশ্য তাঁদের তিন জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁরা এখন ভেলোরের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে বন্দি। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অন্য চার জন, নলিনী, রবার্ট পায়াস, জয়কুমার এবং রবিচন্দ্রন চেন্নাইয়ের পুঝল সেন্ট্রাল জেলে রয়েছেন।
আরও পড়ুন: আইনের আট ঘাটেই আটকে যায় স্বেচ্ছামৃত্যু
ওই জেল থেকেই তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ই পলানিস্বামীকে পাঠানো ওই চিঠিতে রবার্ট লেখেন, ‘‘২৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলে রয়েছি আমি। সরকারের উদ্দেশ্য কী? জানি না। পরিবারের সঙ্গেও আমাকে দেখা করতে দেওয়া হয় না। জীবনের কোনও অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না আর। আমি কখনওই এই জেল-জীবন থেকে মুক্তি পাব না বলে মনে হচ্ছে। তাই অনুরোধ করছি, স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দিয়ে আমাকে বাধিত করা হোক।’’ ২০১৪-য় রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা রাজীব-হত্যায় দোষী সাব্যস্তদের শাস্তি মকুব নিয়ে সরব হন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, কেন্দ্রের অনুমতি ছাড়া এক তরফা ভাবে রাজীব হত্যাকারীদের নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না রাজ্য সরকার। ফলে সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে।
স্বেচ্ছামৃত্যু নিয়ে এ দেশে কম আলোচনা হয়নি। হাতে গোনা হলেও সাহিত্য থেকে বাস্তব— স্বেচ্ছামৃত্যু বা নিষ্কৃতিমৃত্যুর প্রসঙ্গ এসেছে বার বার।
রাজীব গাঁধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা সনিয়া গাঁধীর। ফাইল চিত্র
মহাভারতে যেমন লেখা আছে, ভীষ্ম ইচ্ছামৃত্যুর বর পেয়েছিলেন। শরশয্যায় শুয়ে অর্জুনকে তিনি এই ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন। পরে শরশয্যাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তও জৈন ধর্মের প্রায়োপবেশন রীতি মেনে রাজ্যপাট ছেড়ে ইচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছিলেন। বর্তমান ভারতেও বার বার স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার নিয়ে দাবি তোলা হয়েছে। এসেছে বিরুদ্ধ মতও। কিন্তু, বেশ কিছু দেশে আইনি বৈধতা থাকলেও ভারতে স্বেচ্ছামৃত্যু এখনও আইনি মান্যতা পায়নি। এ নিয়ে বহু দিন ধরেই চলছে নানা আলোচনা, বিতর্কও।
আরও পড়ুন: অনেক প্রশ্ন রেখে চলে গেলেন অরুণা
যেমন, ১৯৭৩ সালে মুম্বইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালের নার্স অরুণাকে ধর্ষণ করে সেখানকার এক কর্মী সোহনলাল। অরুণার গলায় শিকল দিয়ে ফাঁস দেওয়া হয়। এর ফলে তাঁর মস্তিষ্ক চিরতরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। বেঁচে থাকলেও তাঁর শরীর কোনও কাজ করত না। ২০০৯-এ অরুণার ইচ্ছামৃত্যুর আর্জি নিয়ে আদালতে যান তাঁর বন্ধু পিঙ্কি বিরানি। সুপ্রিম কোর্ট ২০১১ সালে অরুণার নিষ্কৃতি মৃত্যুর আবেদন খারিজ করে দেয়। জানিয়ে দেয়, বিশেষ ক্ষেত্রে পরোক্ষ ‘নিষ্কৃতিমৃত্যু’তে সম্মতি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু, তার সবিস্তার ব্যাখ্যা মেলেনি।
রবার্টের ক্ষেত্রে কী হবে? মেনে নেওয়া হবে কি তাঁর স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন? জানা যায়নি। জেল সূত্রে খবর, রবার্টের চিঠি সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে, রাজ্য সরকারের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy