অসহায়: স্কুলের বারান্দায় ছেলের সঙ্গে ঊনমতিদেবী। শিলচরে। ছবি: স্বপন রায়।
সীমান্ত পেরোলেই নাগরিকত্ব মিলবে বাংলাদেশের শরণার্থীদের— আত্মীয়ের এমন আশ্বাসে ভারতে ঢুকে বিপাকে ১০০ বছরের বৃদ্ধা!
পরিজন তাড়িয়ে দেওয়ায় তিনি ঠাঁই নিয়েছেন একটি স্কুলের বারান্দায়। সঙ্গে তাঁর বছর ষাটেকের ছেলে। বিরক্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ মাঝেমধ্যেই তাঁদের সেখান থেকে চলে যেতে বলছেন। বাংলাদেশে ফেরার রাস্তাও বন্ধ। অসহায়, কর্পদকহীন বৃদ্ধা চাইছেন, তাঁদের জেলে পুরে দেওয়া হোক। তাতে দু’বেলার খাবার জোটানোর চিন্তা অন্তত কাটবে। পরে ফেরানো হোক বাংলাদেশে।
অসমে শিলচরের গাঁধীঘাটে সর্বোদয় ট্রাস্ট পরিচালিত স্কুলের বারান্দায় ২৫ দিন ধরে পড়ে রয়েছেন সিলেটের জগন্নাথপুরের ঊনমতি বালা। স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইছেন, বৃদ্ধা যেন নিজেই সেখান থেকে চলে যান। থানা-পুলিশ করতে না হয়। সংগঠনের সচিব ভাস্কর দত্ত বলেন, ‘‘বারান্দায় খাট পেতে দুটো লোক শুয়ে-বসে থাকলে কি স্কুল চালানো যায়! প্রতি দিন বলছি, স্কুল ছেড়ে যেতে। কিন্তু কোথায় কী!’’ এলাকার পুরসদস্য শুক্লা দেব বলেন, ‘‘থানায় জানানো হয়েছে। কিন্তু ১০০ বছরের বৃদ্ধাকে মানবিক কারণে পুলিশ গ্রেফতার করতে চাইছে না।’’
আরও পড়়ুন: শাস্তি-ফাঁড়ায় সরকারি কাজ
বয়সের ভারে চলাফেরা করতে পারেন না ঊনমতিদেবী। তিনি বলেন, ‘‘আধ একর জমি ছিল বাংলাদেশে। ছিল গরু-বাছুর। খাওয়া-পরার সমস্যা ছিল না।’’ মহিলা জানান, দেওরের ছেলে রমাকান্ত বিশ্বাসের আশ্বাসে সব বিক্রি করে তাঁকে নিয়ে দুধপাতিলে চলে আসেন ছেলে রাধিকা বিশ্বাস। বৃদ্ধার দাবি, জমি, গবাদি পশু বিক্রির টাকা-পয়সা রমাকান্তের কাছে গচ্ছিত রেখেছিলেন তাঁরা। ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়া যে সহজ নয়, তা বুঝতে মা-ছেলের বেশি দিন সময় লাগেনি। রাধিকাবাবু জানান, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর খবর রটেছিল— হিন্দুরা সীমান্ত পেরলে আর ভয় নেই। মোদী সবাইকে নাগরিকত্ব দেবেন। তাতে ভরসা করেই বছরখানেক আগে দু’জন চোরাপথে ভারতে ঢোকেন। রাধিকাবাবু ভেবেছিলেন, মাকে রেখে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসবেন স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়েকে। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। চোরাপথে বাংলাদেশে ফেরাও কঠিন হয়ে ওঠে।
রাধিকাবাবুর অভিযোগ, বছর পেরনোর আগেই উল্টো কথা বলতে শুরু করেন খুড়তুতো ভাই। টাকাপয়সা রেখে তাড়িয়ে দেন তাঁদের। দু’জনে ঘরভাড়া নেন। হাতে যে সামান্য টাকা ছিল, তা কিছু দিনেই ফুরিয়ে যায়। ভারতীয় নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার নামে এক দালালও প্রচুর টাকা নিয়ে যায়। টাকা ফুরিয়ে গেলে তাঁরা আশ্রয় নেন সর্বোদয় বিদ্যালয়ের বারান্দায়। রমাকান্তবাবু অবশ্য ঊনমতিদেবীদের টাকা কেড়ে নেওয়ার কথা মানতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy