Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
National News

ছুটে আসছে ট্রেন, লাইনে শুয়ে পড়লেন বৃদ্ধ দম্পতি

অনেক দিন থেকেই ঠিক করেছিলেন, এক সঙ্গে আত্মহত্যা করবেন। কয়েক বার চেষ্টাও করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাহসে কুলোয়নি। শেষমেশ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেন গত বুধবার।

এই সেই বৃদ্ধ দম্পতি। ছবি: সংগৃহীত।

এই সেই বৃদ্ধ দম্পতি। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ১৫:৪২
Share: Save:

রেল লাইনের উপর পাশাপাশি শুয়ে পড়লেন বৃদ্ধ দম্পতি। আর সে দিকেই দুরন্ত গতিতে ছুটে আসছে ট্রেন। কিন্তু আত্মহত্যা করে জীবন যন্ত্রণা থেকে ‘মুক্তি’র ইচ্ছেপূরণ হল না তাঁদের। তার আগেই স্থানীয় মানুষদের তত্পরতায় লাইন থেকে টেনে তুলে আনা হল। আর কিছু ক্ষণের মধ্যেই হু হু করে বেরিয়ে গেল ট্রেনটা। বেঁচে গেলেন বৃদ্ধ, বৃদ্ধা। কিন্তু আবার দেখিয়ে দিলেন- অথর্ব, অসহায়, নিঃসহায়, দরিদ্র প্রবীণদের কাছে বাকি জীবনটা ঠিক দুঃস্বপ্নের মতো।

আরও পড়ুন: কম বয়সে আত্মহত্যা-আতঙ্ক বাড়ছে শহরেও

রামান্না, বয়স ৫৯। তাঁর স্ত্রী রোনুকাম্মা, বয়স ৫৭। কর্নাটকের বল্লারি জেলার হসপেটে ফুটপাথে থাকতেন তাঁরা। রামান্না বাড়ি নির্মাণের কাজ করেন। রেনুকাম্মা কাজ করেন লোকের বাড়িতে। কোনও সন্তান নেই। যোগাযোগ নেই কোনও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেও। বয়সও বেড়েছে। সেই সঙ্গে কমে গিয়েছে কর্মক্ষমতাও। বয়সের ভারে রামান্না এখন আর প্রায় কাজ করতে পারেন না। তাঁর স্ত্রী রেনুকাম্মারও একই অবস্থা। যত দিন যাচ্ছে শরীরে ক্রমশ বাসা বাঁধছে নানা রোগ। সব মিলিয়ে, মানসিক জোরটাই আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছিলেন তাঁরা। সর্ব ক্ষণ দুশ্চিন্তার পাহাড় যেন তাঁদের ঘিরে থাকে। খাবার জোগাতে পারছেন না! কী হবে এর পর! আরও কিছু বছর বাঁচলে!

আরও পড়ুন: হোটেলে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা মা ও তিন ছেলের

অনেক দিন থেকেই ঠিক করেছিলেন, এক সঙ্গে আত্মহত্যা করবেন। কয়েক বার চেষ্টাও করেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাহসে কুলোয়নি। শেষমেশ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলেন গত বুধবার। হাত ধরে দু’জনে চলে যান নাগেনাহাল্লি রেলসেতুর কাছে। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দম্পতি। অনেক ক্ষণ ধরে রেললাইনের ধারে ঘুর ঘুর করছিলেন তাঁরা। তখন রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। সেই লাইন ধরেই হেঁটে যাচ্ছিলেন চন্দ্রমোহন, মহেশ এবং বীরেশ নামে তিন যুবক। তাঁদের সন্দেহ হয়, ওই দম্পতি রেললাইনে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছেন। কিছুটা দূরে গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা। ফোন করে বিষয়টি জানান তাঁদের ক্যারাটে প্রশিক্ষক কে এস নায়ডুকে। তিনি আবার স্থানীয় হসপেট পুরসভার চেয়ারম্যান। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। রামান্না ও তাঁর স্ত্রীকে জেরা করতেই তাঁরা বলেন, আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য এখানে এসেছেন। কিন্তু সে কথা শুনে ছেড়ে দেননি ওই তিন যুবক ও তাঁদের প্রশিক্ষক। তাঁরা চলে যাওয়ার ভান করে দূর থেকে নজর রাখছিলেন ওই দম্পতির উপর। ঠিক যেটা ভেবেছিলেন সেটাই করতে চলেছিলেন দম্পতি। ট্রেনের আওয়াজ শুনেই লাইনে শুয়ে পড়েন দু’জনে। তত্ক্ষণাত্ বীরেশরা ছুটে এসে ওই দম্পতিকে টেনে সরিয়ে দেন। এতে খুব রেগে যান রামান্না ও তাঁর স্ত্রী। তাঁদের বুঝিয়ে পটেলনগরে একটি আশ্রয়স্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতভর তাঁদের পাহারা দেন বীরেশ-চন্দ্রমোহনরা।

আরও পড়ুন: ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী জাতীয় হকি দলের জ্যোতি

পর দিন সকালে অর্থাত্ বৃহস্পতিবার বল্লারির একটি হোমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, যারা এমন মানুষদের দেখাশোনা করেন। হোমের কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয় এই দুই অসহায় মানুষের দেখাশোনার ভার নেওয়ার জন্য। পরে রমান্না ও রেনুকাম্মাকে সেখানে পাঠানো হয়।

কেন এমনটা করতে চাইছিলেন? রামান্না বলেন, “আমাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। অনেক বার আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলাম, অবশেষে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলি। নিজেদের খাবার জোটানোর ক্ষমতা নেই, ওষুধ কেনার পয়সা নেই। এ ভাবে বেঁচে থেকে লাভ কী?”

অন্য দিকে রেনুকাম্মার কথা, “অনেক দিন বোনের বাড়িতেই থাকছিলাম। কিন্তু কত দিন তাঁরা দেখাশোনা করবে?” আক্ষেপ করে বলেন, “বয়সের ভারে লোকের বাড়ি গিয়ে আর কাজ করতে পারি না। আমার স্বামীরও একই অবস্থা। সে কারণেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলাম।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE