মোদী-নীতীশ পাশাপাশি। ছবি: পিটিআই।
টার্গেট সেই নীতীশই! নাম না করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেই বিহারের উন্নয়নের বাধা বলে আক্রমণ করলেন নমো। বিহারের নির্বাচনের প্রচার শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফের একবার লোকসভা ভোটের স্মৃতিকে চাঙ্গা করতে চাইলেন। এ বারের বিহারের নির্বাচনকে ‘জঙ্গলরাজ’ থেকে মুক্তির নির্বাচন বলেও দাবি করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘উন্নয়নের রাস্তায় চলতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে কারণেই জঙ্গলরাজ দ্বিতীয়বার বন্ধ করব।’’ লালুপ্রসাদের দল আরজেডিকে ‘রোজানা জঙ্গলরাজ কা ডর’ বলে স্লোগান দেন তিনি।
ক্ষমতায় আসার প্রায় ১৩ মাস পরে বিহারে আসলেন নরেন্দ্র মোদী। আর টুইটরে সে কথা জানিয়েই তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন নীতীশ কুমার। উত্তর বিহারের অঘোষিত রাজধানী মুজফফরপুরের চক্কর ময়দানে কয়েক লক্ষ লোকের সামনে সে কথাই তুলে ধরে নীতীশকে কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ দশ বছরে এক বার মাত্র আকাশ পথে বিহার-দর্শন করেছেন বলে দাবি করেন তিনি। নীতীশ কুমারের রাজনীতির ডিএনএ-তে গোলমাল রয়েছে বলে অভিযোগ করেন মোদী। জর্জ ফান্ডান্ডেজ থেকে সুশীল মোদী, এবং সব শেষে জিতনরাম মাঁঝির সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এ দিনের সভায় বিহারে যুবকদের সামনে কাজের স্বপ্ন দেখান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ভুটানে গিয়েছিলাম। সেখানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ভারত সরকার বিনিয়োগ করবে। সেই বিদ্যুৎ সবচেয়ে বেশি পাবে বিহারই। একই ভাবে পরের সফরে নেপালে গিয়েও একই চুক্তি করেছি। সেখান থেকেও যা বিদুৎ আসবে তার অনেকটাই উত্তর বিহারবাসীরা পাবেন।’’ তাঁর দাবি, বিহারের বিদুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ মেগাওয়াটের কম। অথচ বিদ্যুতের প্রয়োজন ৫০০০ মেগাওয়াটের বেশি। মোবাইল ফোন থেকে টিভি, সবতেই যে বিদ্যুৎ জরুরি তা মনে করিয়ে নীতীশের ‘বিজলি নেহি, ভোট নেহি’ স্লোগানের কথাও মনে করিয়ে দেন তিনি।
বিহারের উন্নয়ন যে তাঁর একমাত্র ‘এজেন্ডা’ বারবার তা বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিহারের সবচেয়ে বেশি মন্ত্রী সে কারণেই রাখা হয়েছে বলেও দাবি তাঁর। সেই উন্নয়নের লক্ষ্যেই কেন্দ্র ও রাজ্যে একই জোটের সরকার থাকা উচিত বলে মত মোদীর। সেই উন্নয়নের লক্ষ্যেই বিহারে এ দিন বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ঘোষণা ও শিলান্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ঘোষণা, ‘‘এ বারে বিহারের নির্বাচন শুধু সরকার তৈরির নির্বাচন।’’ দেশের উন্নয়ন ও সংস্কারও যে তার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঠারেঠোরে সে কথাই জানিয়ে দেন নমো। ২০১০-১৫ অর্থ কমিশনের চেয়ে ২০১৫-২০ অর্থ কমিশনে দ্বিগুনের চেয়েও বেশি টাকা বিহারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে বলে দাবি তাঁর। সংসদ চলেছে বলে এখনই বিহারকে বিশেষ রাজ্যের মর্যদা দেওয়া নিয়ে কোনও ঘোষণা তিনি করছেন না। বিশেষ রাজ্যের দাবি সমর্থন করে তিনি জানান সংসদ শেষ হওয়ার পরে এ নিয়ে ঘোষণা হবে।
এ দিন সকাল থেকেই পটনা ও মুজফফরপুর শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল দশটা নাগাদ বিমানবন্দরে নামেন তিনি। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী পশু মহাবিদ্যালয় ও শ্রীকৃষ্ণ মেমোরিয়াল হলের অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। পরে পটনা বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে মুজফফরপুরে আসেন দেড়টা নাগাদ। সকাল ১১টা থেকেই সভাস্থল ছিল ভিড়ে ঠাসা। ভিড় সামলাতে হিমসিম খান নিরাপত্তারক্ষীরা। একটা সময়ে ভেঙে যায় ব্যারিকেডও। কোনও রকমে তা সামাল দেন পুলিশ কর্মীরা। তিনটে নাগাদ উঠে নরেন্দ্র মোদী টানা একঘন্টা ভাষণ না।
কৃষ্ণের কালীয় দমনের উল্লেখ করে লালুপ্রসাদকেও কটাক্ষ করেন তিনি। মোদীর কথায়, ‘‘বিষ অতিষ্ঠ যাদবদের বাঁচাতে কৃষ্ণ কালীয় নাগকে হত্যা করেছিলেন। আর আপনি কিনা বিষ পান করলেন!’’ ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার জন্য যাদবদের লালুপ্রসাদ বিপাকে ফেলছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। নীতীশের সাপ-চন্দন বিতর্ককে ফের উসকে দেন প্রধানমন্ত্রী। ‘‘নিজেদের সমস্যা ঘরে বসে মিটিয়ে নিন। বিহারের মানুষকে বিপাকে ফেলছেন কেন!’’
তবে নাম না করে এবিপি-নিয়েলসন সার্ভে নিয়েও কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ‘‘ভিড় দেখেই বোঝা যাচ্ছে কার সরকার হবে। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসব আমরা। একশো দিন পরে এদের ছুটি করে দেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy