নরেন্দ্র মোদী ও নীতীশ কুমার।—ফাইল চিত্র।
সামনে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বিড়ম্বনা বাড়ল মোদী সরকারের। তিন তালাক নিয়ে তাদের পাশে নেই বিহারের নীতীশ কুমার সরকারও। বরং তাঁর সংযুক্ত জনতা দলের (জেডিইউ) তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তিন তালাক প্রথা উঠে যাওয়াই উচিত। কিন্তু এই প্রথাকে ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করতে যে রকম তাড়াহুড়ো করছে মোদী সরকার, তাতে সায় নেই তাদের। রাজ্যসভায় ভোটাভুটি হলে কেন্দ্রের বিরুদ্ধেই মত দেবে তারা।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে দলের প্রবীণ নেতা বশিষ্ঠ নারায়ণ সিংহ বলেন, ‘‘বিলটি নিয়ে বড্ড বেশি তাড়াহুড়ো করছে মোদী সরকার। এটা না হওয়াই উচিত ছিল। দরকার ছিল সকলের সঙ্গে শলা-পরামর্শ করার।’’ বিল নিয়ে রাজ্যসভায় ভোটাভুটি হলে তাঁদের অবস্থান কী হবে? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেব।’’
তিন তালাক নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর যদিও প্রকাশ্যে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি নীতীশ কুমার। তবে দলীয় সূত্রে খবর, রাজ্য আইন কমিশনকে ইতিমধ্যেই চিঠি লিখেছেন তিনি। তাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থে দলের কী পদক্ষেপ করা উচিত, সে ব্যাপারে পরামর্শ চেয়েছেন। কারণ এই মুহূর্তে বিহারের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ মুসলিম। লালুপ্রসাদের রাষ্ট্রীয় জনতা দল এবং কংগ্রেসের পক্ষেই সাধারণত ভোট দেন তাঁরা। তিন তালাক নিয়ে বিজেপি-কে সমর্থন করলে দলের উপর তার প্রভাব কতখানি পড়তে পারে তা বিচার করতেই নীতীশের এমন পদক্ষেপ বলে ধারণা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন: বকেয়া ডিএ চলতি মাসেই, বললেন মুখ্যমন্ত্রী, প্রতারণামূলক ঘোষণা, বলছে কর্মী সংগঠনগুলি
আরও পড়ুন: ‘কারা ব্যবহার করছে কে জানে’! আফগানিস্তানে মোদীর গ্রন্থাগার নিয়ে বিদ্রুপ ট্রাম্পের
পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে সম্প্রতি হার জুটেছে বিজেপির কপালে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে তাই তিন তালাক প্রথা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে চেয়েছিল তারা। বিরোধীদের আপত্তি উড়িয়ে শুধুমাত্র নম্বরের জোরে লোকসভায় বিলটি পাশ করিয়ে নিলেও, সেখানেও বেঁকে বসেছিলেন নীতীশের দলের দুই সাংসদ। ভোটাদান থেকে বিরত ছিলেন তাঁরা। এখন রাজ্যসভায় বিলটি পাশ করাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। সেখানে বিলটিকে মুসলিম বিরোধী তকমা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বিলটিকে সংসদের যৌথ কমিটির হাতে তুলে দেওয়ার, যাতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়।
এমন পরিস্থিতিতে বিরোধীদের পাল্লাই খানিকটা ভারি হল। বরং বিপদ বাড়ল মোদী সরকারের। কারণ বিহারে আসন বাঁটোয়ারা নিয়ে ইতিমধ্যেই আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে টানাপড়েন চলছে। চাহিদা মতো আসন পেতে বিজেপি ও অমিত শাহের উপর চাপ বাড়াচ্ছে রাম বিলাস পাসোয়ানের লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি)।রাম মন্দির নিয়েও নীতীশ সরকারকেই অনুসরণ করেছে তারা। জানিয়ে দিয়েছে, বিজেপির নীতিকে সমর্থন করে না তারা। এ ছাড়াও অন্যা রাজ্যের বিভিন্ন আঞ্চলিক দলও বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে চাহিদা মতো আসন দিতে হবে, নইলে সংসদের যাবতীয় বৈঠক-অনুষ্ঠান বয়কট চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের আপনা দল।
শুধু তিন তালাক বিল-ই নয়, রাফাল দুর্নীতি নিয়ে শরিক দল শিবসেনা এবং জেডিইউয়ের অবস্থানও মোদী-অমিত শাহদের দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। জেপিসি তদন্তে অন্যায়ের কিছু নেই বলে বুধবারই জানিয়ে দিয়েছে শিবসেনা। জেপিসি তদন্ত নিয়ে সুর না চড়ালেও রাফালের সঙ্গে বফর্স দুর্নীতির তুলনা টানতে দেখা গিয়েছে জেডিইউয়ের রাজ্যসভা সাংসদ কেসি ত্যাগীকে। তাঁর কথায়, বফর্স দুর্নীতি নিয়ে হইচই-ই হয়েছে শুধু। হাতে আসেনি কিছু। রাফালের ক্ষেত্রেও তা-ই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy