Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

রোগ ঠেকাতেও ‘গাঁধীগিরি’র দাওয়াই কেন্দ্রের!

উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবিটিসের মতো অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচিতে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে ‘রোল মডেল’ করছে মোদী সরকার!

গাঁধীর ইসিজি রিপোর্ট

গাঁধীর ইসিজি রিপোর্ট

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:২১
Share: Save:

উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবিটিসের মতো অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচিতে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে ‘রোল মডেল’ করছে মোদী সরকার!

রাজঘাটে গাঁধী সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত নথিপত্র থেকে জানা যায়, উচ্চ রক্তচাপ ছিল গাঁধীজির। কখনও সেটা ১৬০/১০০ আবার কখনও ১৮০/ ১১০। সেই সঙ্গে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশির কিছু সমস্যা ছিল। শরীরে শর্করার মাত্রা মাঝেমধ্যেই কমে যেত। ওজনও যথেষ্ট কম ছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সব শারীরিক সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ করে তিনি অসম্ভব পরিশ্রম করতেন, প্রচুর হাঁটতেন। মানসিক পরিশ্রমও ছিল খুব। ঘন ঘন চিকিৎসকের দ্বারস্থ না হয়ে পরিমিত খাবার, ব্যায়াম, আয়ুর্বেদিক ওষুধের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ করতেন। গাঁধীজির এই স্বাস্থ্যনীতিই জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করবে কেন্দ্র। তার মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ বা আইসিএমআর-কে।

কিছু দিন আগেই আইসিএমআর-এর অধিকর্তা বলরাম ভার্গব (যিনি নিজে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ) রাজঘাটের গাঁধী সংগ্রহশালায় গিয়ে ১৯২৪ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত গাঁধীজির যাবতীয় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রিপোর্ট ও নথির প্রতিলিপি সংগ্রহ করে এনেছেন। তিনি জানান, সংযত জীবনধারার মাধ্যমে গাঁধী কী ভাবে রোগ বাড়তে দিতেন না, সেটাই হবে এই স্বাস্থ্য কর্মসূচির বার্তা। রোগ প্রতিরোধে গাঁধীর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নভেম্বরে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করবে আইসিএমআর। তার পরেই শুরু হবে দেশ জু়ড়ে সচেতনতা অভিযান।

রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ অবশ্য মনে করছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচন এবং গাঁধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকীকে সামনে রেখে কংগ্রেসের থেকে গাঁধীজিকে ছিনিয়ে নিতে এটা বিজেপির মোক্ষম চাল। ঠিক যে ভাবে স্বচ্ছ্ব ভারত অভিযানে তারা জুড়ে নিয়েছিল গাঁধীকে।

আরও পড়ুন: কাঁটার আসনে বসেছি, ফিরে বলছেন সোমেন

অতি সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে আইসিএমআর, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া এবং ‘ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন’ একত্রে দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ‘ইন্ডিয়া স্টেট লেভেল ডিজিজ বার্ডেন ইনিশিয়েটিভ’ নামের সেই রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, অসংক্রামক রোগে ভারতের অবস্থা ভয়াবহ। ১৯৯০ থেকে ২০১৬-র মধ্যে ভারতে হৃদরোগ ও স্ট্রোক ৫০ শতাংশ বেড়েছে। স্ট্রোকের সংখ্যায় পশ্চিমবঙ্গ দেশে শীর্ষে। ডায়াবিটিসের রোগী দেশে ২ কোটি ৬০ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ কোটি ৫০ লক্ষ।

বলরাম ভার্গবের কথায়, ‘‘এখন আমাদের যুদ্ধ লাইফস্টাইল ডিজিজ নিয়ে। তাতে জাতির জনকের দেখানো পথেই সরকার হাঁটতে চায়। গাঁধীজি যদি অত কাজের মধ্যে নিজের উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তা হলে অন্যরাও পারবেন।’’

গাঁধীর শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যসচেতনতা নিয়ে গবেষণা খুব কম বলে মত রাজঘাটে সংগ্রহশালার অধিকর্তা এ আন্নামালাইয়ের। তাঁর কথায়, ‘‘স্বল্পাহার, হাঁটা, ব্যায়াম, ধ্যানের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের পথ গাঁধী দেখিয়েছিলেন। তিনি জানতেন, শরীর না-থাকলে লড়াই লড়া যাবে না। এই বার্তাই আমরা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।’’

ওই সংগ্রহশালায় রাখা ৭ মার্চ ১৯৩৯ সালের একটি রিপোর্টে গাঁধীর উচ্চ রক্তচাপের প্রমাণ রয়েছে। আবার ১৯৩৭ সালের ২৮ অক্টোবর কলকাতার এলগিন রোডের একটি কেন্দ্রে করা ইসিজি রিপোর্ট বলছে, তিন বছর আগের তুলনায় গাঁধীর হৃদযন্ত্রের অবস্থা অনেক ভাল হয়েছে।

গাঁধী বিশেষজ্ঞ সুপর্ণা গুপ্তুর কথায়, ‘‘গাঁধীজির জীবনদর্শনের মূল কথাই ছিল পরিমিতিবোধ, ভারসাম্য এবং নিয়মানুবর্তিতা। তিনি কিন্তু কিছু চাপিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। চাইতেন, তাঁকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানুষ স্বেচ্ছায় তা অনুসরণ করুক।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE