প্রতীকী ছবি।
দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার পরে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কাশ্মীর উপত্যকাতেও মহিলাদের চুল কাটা নিয়ে প্রবল আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। ছড়াচ্ছে তার জেরে অশান্তিও। শুক্রবার শ্রীনগরের চোপন মহল্লায় জনতা দু’জনকে গণধোলাই দিয়েছে। তাঁরা মহিলাদের চুল কাটছেন বলে অভিযোগ তুলে সামির আহমেদ খান ও তাহির আহমেদ বেগের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে একদল লোক। তাঁদের কিল, লাথি, ঘুসি মারতে থাকে। ধারালো জিনিস দিয়ে আঘাতও করে। সেই সময়ে পুলিশ এসে পড়ায় কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে যান দু’জনে। সারা গায়ে রক্ত আর কালশিটে নিয়ে সামির-তাহির পুলিশকে বলেছেন, তাঁরা আদৌ কারও চুল কাটেননি।
আরও পড়ুন: যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে শৈশব, উদ্বেগে রাষ্ট্রপুঞ্জ
কাশ্মীরে এ পর্যন্ত ৪০ জনেরও বেশি মহিলার বেণী কাটা হয়েছে। জায়গায় জায়গায় মানুষ ফেটে পড়ছেন ক্ষোভে। মারধরের খবরও আসছে নানা প্রান্ত থেকে। উত্তর কাশ্মীরের দেলনা গ্রামে এক যুবক তাঁর বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। বিনুনি কাটার কুশীলব সন্দেহে তাঁর উপরে চড়াও হয় জনতা। শ্রীনগরে বোরখা পরা দুই মহিলা বিনা নিমন্ত্রণে একটি বিয়েবাড়িতে ঢুকে পড়লে তাঁদেরও একই সন্দেহে মারধর করা হয়।
কুপওয়ারা গ্রামের দুই শ্রমিককে বেধড়ক মারধর করা হয় পট্টনে। তাঁদের দেখে চেঁচিয়ে উঠেছিল এক জন— ‘‘এরা বিনুনি কাটে!’’ কিন্তু কেন এ কথা মনে হল, জবাব মেলেনি। অনন্তনাগ জেলায় শুক্রবার রাতে সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধকে পাথর ছুড়ে মেরেই ফেলা হয়েছে বলে খবর। রাতের প্রার্থনা সেরে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন।
একের পর এক এমন ঘটনায় অত্যন্ত চিন্তিত পুলিশ। কারণ, এই হঠাৎ-হুজুগে উপত্যকায় জঙ্গিদমনের প্রক্রিয়াও ধাক্কা খেয়েছে। কাশ্মীর পুলিশের ইনস্পেক্টর জেনারেল মুনির আহমেদ খানের আক্ষেপ, ‘‘আমাদের লোকজন তো এখন এই চুল কেটে নেওয়ার ঝামেলা সামাল দিতেই ব্যস্ত।’’
জুলাই থেকেই উত্তর ভারতের গ্রামে-শহরে শুরু হয় ‘বেণীসংহার’ রহস্য। চুল কেটে নেওয়ার পরে অনেক ক্ষেত্রেই মহিলারা নাকি অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন। ফলে লোকের মুখে মুখে ঘুরছে দেবতা, অপদেবতা, ভূত, ডাইনি, বেড়ালের মতো প্রাণীর নানা গল্প। কয়েকটি গ্রামে বিনুনি বাঁচাতে রীতিমত ঝা়ড়ফুঁক, ভূত নামানো, পুজোও শুরু হয়ে গেছে। গ্রামের পাহারা কড়া হয়েছে। কিন্তু চুল কাটার যতগুলি খবর এসেছে, একটিতেও আক্রান্ত মহিলার শরীরে আঁচড়মাত্র পড়েনি।
রহস্য তাই ঘনীভূত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy