কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সংসদে বামেরা বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগছে। আগামিকাল থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলও তেড়েফুঁড়ে নামবে বলে মনে করছেন নরেন্দ্র মোদীরা। তার মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গে সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার দুর্নীতি এ বারে সংসদে আলোচনায় সামিল করার প্রস্তাব নিয়ে আসছে নরেন্দ্র মোদীর দল।
বিজেপি সূত্রের মতে, মূলত কংগ্রেস ও বামেরা মিলেই সুষমা স্বরাজ, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের ইস্তফার দাবিতে সরব হচ্ছে। কিন্তু সংসদে বামেরা বিরোধী পরিসরটি এ ভাবে দখল করে নিক, মমতা নিশ্চয়ই তা চাইবেন না। আর যা-ই হোক, তৃণমূল যে বিজেপির বি-টিম হয়ে গিয়েছে, এমন বার্তাও তিনি দিতে চাইবেন না। আজ যে ভাবে ধর্মতলার সভা থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছেড়েছেন মমতা, তাতে স্পষ্ট কাল থেকেই আসরে নামছে তাঁর দল। মমতাকে রুখতে তাই অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি ও মগরাহাটে এক নাবালিকার অপহরণ নিয়ে সংসদে আলোচনার নোটিস দিতে শুরু করেছেন বিজেপি সাংসদেরা।
বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান, সংসদে রাজ্যের বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার রীতি নেই। রাজ্যের বিধানসভায় এগুলি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু যে ভাবে বিরোধীদের একাংশ ব্যপম ও ললিত মোদী কাণ্ড নিয়ে শিবরাজ-বসুন্ধরার ইস্তফার দাবিতে আলোচনা চাইছে, তাতে বিজেপিও বিভিন্ন রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা চাইবে। সে জন্য প্রাথমিক ভাবে ছ’টি রাজ্যের দুর্নীতিকে বেছে নোটিস দেওয়া হচ্ছে। তার মধ্যে কেরলের ঘুষ ও সোলার কেলেঙ্কারি, হিমাচলে বীরভদ্র সিংহের দুর্নীতি, উত্তরাখণ্ডে ত্রাণ কেলেঙ্কারির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের সারদা ও মগরাহাট কাণ্ডকে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, বাকি রাজ্যগুলিতে বিজেপির নিশানায় রয়েছে কংগ্রেস। এক মাত্র অ-কংগ্রেসি ও অ-বিজেপি দল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে তৃণমূলকে। এমনকী উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির সরকারের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ এর মধ্যে নেই। যা মুলায়মের সঙ্গে বিজেপির অলিখিত সমঝোতার জল্পনা উস্কে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের পাশে বাম ছাড়া আর কেউ নেই। অন্য সব দলই সংসদ চালাতে আগ্রহী।’’
বিজেপি নেতারা ভাবছেন, কাল থেকে মমতার দল যদি সংসদে আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনায় তৃণমূলকে চাপে রাখা সম্ভব হবে। বামেরাও তখন বিজেপির দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। বিরোধী জোট ছত্রভঙ্গ হবে। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট।
কিছু দিন আগেই কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব দিয়েছেন অমিত শাহ। রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে সংসদে আলোচনার প্রস্তাবের বিষয়টি নজরদারির দায়িত্ব তাঁকেই দিয়েছে দল। আগামিকাল পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছেন কৈলাসের সহকারী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। কৈলাসেরও রাজ্যে আসার কথা ছিল। কিন্তু সংসদে বিরোধী আক্রমণ রোখার বিষয়টি গুরুত্ব পাওয়ায় তিনি আপাতত দিল্লিতেই থাকবেন। কৈলাস সাংসদ নন। কিন্তু তাঁকে রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সাংসদদের সহায়তা করতে বলা হয়েছে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে তৃণমূলকে কোনও রাজনৈতিক জমি ছাড়া হবে না। তৃণমূলও যেমন বিজেপির বি-টিম হওয়ার বার্তা দিতে চায় না, বিজেপিও তেমন সখ্যের ভাবমূর্তি ঘুচিয়ে নিজেদের শক্তি আরও বাড়াতে চায়।’’ ওই বিজেপি নেতার মতে, সংসদে তৃণমূলের সমর্থন প্রয়োজন। কিন্তু জমি বিলে তারা সমর্থন করবে না। পণ্য ও পরিষেবা করে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সেখানে সমর্থন করতে তৃণমূল এমনিতেই বাধ্য।
বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতা ভাঙতেও কৌশল তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে জোট তৈরির জন্যই এখন বাম ও কংগ্রেস হাতে হাতে মিলিয়ে চলছে বলে প্রচার চালাবে তারা। ইতিমধ্যেই এ নিয়ে মুখ খুলেছে বিজেপি। আজ জবাব দিয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘সংসদে সমাজবাদী পার্টি থেকে বসপা, ডিএমকে থেকে এডিএমকে, সকলেই এক বাক্যে মন্ত্রীদের ইস্তফার দাবি তুলেছে।’’ তাঁর দাবি, সংসদে কোনও দলের সঙ্গে সুর মেলানোর সঙ্গে কোনও রাজ্যে তাদের সঙ্গে হাত মেলানোর কোনও সম্পর্ক নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy