দেশজুড়ে কৃষক অসন্তোষই নির্বাচনী বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে আরএসএস-বিজেপির একটা বড় অংশ। এ জন্য কৃষিঋণ মাফের পথে হাঁটার কথাও উঠছে। কিন্তু সে পথে না হেঁটে বরং কৃষিঋণ মাফ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় রাহুল গাঁধী তথা কংগ্রেসকেই আক্রমণের পথ বেছে নিলেন নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সঙ্গীরা।
বিজেপির এক নেতা আজ বলেন, ‘‘তিন রাজ্যে ক্ষমতায় আসার দশ দিনের মাথায় কৃষিঋণ মাফ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাহুল। পনেরো দিনের মাথায় সেই প্রতিশ্রুতি পালন না হলে বিজেপি সমর্থিত কৃষকরাই আন্দোলনে নামবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।’’ বিজেপি যে সত্যিই এমন একটি কর্মসূচি আয়োজন করতে চলেছে, তার আভাস আজ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সনিয়া গাঁধীর নির্বাচনী কেন্দ্র রায়বরেলীতে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস কৃষকদের বরাবর ধোঁকা দিয়েছে। ঋণ মাফ নিয়ে বড় বড় কথা বলে, কিন্তু কাজের কাজ করে না। বিজেপি ঘরে ঘরে গিয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচার করবে।’’
তিন রাজ্যেই রাহুল গাঁধী প্রতিশ্রুতি দেন, তাঁর দল সরকার গড়লে তিন দিনের মাথায় কৃষিঋণ মাফ হবে। ভোটের ফল প্রকাশের পরেও তিনি বলেন, তিন রাজ্যেই কৃষকদের ঋণ মাফ হবে। মোদী আজ সভায় কর্নাটকের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘সেখানেও দশ দিনে কৃষিঋণ মাফ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু ছ’মাস পরেও স্রেফ এক হাজার জন সেই সুবিধা পেয়েছেন। উল্টে শ’খানেক কৃষক গ্রেফতার হয়েছেন। ২০০৮ সালেও যেখানে ৬ লক্ষ কোটি টাকার কৃষিঋণ মাফ করার দরকার ছিল গোটা দেশে, কংগ্রেস করেছে মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকার।’’
হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে হারের পর মোদী সরকারের উপর চাপ বাড়ছে লোকসভা ভোটের আগে কৃষিঋণ মাফের। কিন্তু গত সপ্তাহেই সংসদে কেন্দ্রীয় কৃষি প্রতিমন্ত্রী পুরুষোত্তম রূপালা জানান, এই মুহূর্তে সরকারের এমন কোনও পরিকল্পনা নেই। যার পাল্টা আগামিকাল মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিতে চলা কমলনাথ বলেছেন, ‘‘রাজস্ব বাড়িয়ে আমরা এই প্রতিশ্রুতি পালন করব।’’
সরকারের একটি অংশ বলছে, কৃষিঋণ মাফের মতো ঘোষণা অনেক সময় জনপ্রিয় হয়। ছত্তীসগঢ়ে হারের একটিই বড় কারণ, কৃষিঋণ ছাড়াও কংগ্রেস ধানের বেশি দাম দেওয়ার কথা বলেছে। কৃষকরা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু এই পদক্ষেপ সাময়িক। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনও সম্প্রতি কৃষিঋণ মাফের বিরুদ্ধেই মত দিয়েছেন। এখন লোকসভার আগে জল কোন দিকে গড়ায়, তা দেখে মোদী সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মোদী সরকারের আমলে দেশজুড়ে কৃষকদের দুরবস্থা বেড়েছে বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। বেড়েছে কৃষক অসন্তোষও। তবে কৃষকদের দুরবস্থার দায় কংগ্রেসের ঘাড়ে চাপিয়ে মোদী বলেন, ‘‘দশ বছর ক্ষমতায় থেকেও স্বামীনাথন কমিটির রিপোর্ট রূপায়ণ করেনি কংগ্রেস। আমাদের সরকার সহায়ক মূল্য বাড়িয়েছে। বিমার প্রিমিয়াম থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা এসেছে, কিন্তু ফসল খারাপের পরে কৃষকদের ৩৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। চার গুণ বেশি ফেরানো হয়েছে। কংগ্রেসের মতো ধোঁকা আমাদের সরকার দেয় না।’’ যা শুনে কংগ্রেসের কটাক্ষ, ওই ফসল বিমাতেও তো মোদীর বন্ধুদের সংস্থাকেই সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy