নাগাল্যান্ডে আধাসেনা জওয়ানদের উপর হামলার দায় স্বীকার করল এনএসসিএন খাপলাং, আলফা, কেএলও ও এনডিএফবির সংযুক্ত মঞ্চ। যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে মিলিত মঞ্চের কথা ঘোষণা করেন খাপলাং প্রধান এসএস খাপলাং, আলফা সভাপতি অভিজিৎ অসম, কেএলও প্রধান জীবন সিংহ এবং সংগ্রামপন্থী এনডিএফবি-র নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বি সাওরাইগউড়া। তবে, নাগাল্যান্ডে সংঘর্ষবিরতিতে থাকা এনএসসিএন-এর গোষ্ঠীগুলি হামলার নিন্দা করেছে।
সেনা মুখপাত্র এমরন মুসাভি জানান, গত কাল বিকেলে নাগাল্যান্ডের মন জেলার চাংলাংসু এলাকায় ২৩ আসাম রাইফেল্স-এর কনভয়ে হামলা চালায় জঙ্গিরা। আইইডি বিস্ফোরণ ও গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৩ জওয়ান। পরে হাসপাতালে আরও ৫ জওয়ান মারা যান। জখম ৫ জনকে চিকিৎসার জন্য যোরহাটে আনা হয়েছে। জওয়ানদের পাল্টা গুলিতে দুই জঙ্গি জখম হয়। সেনাবাহিনী জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে এক জঙ্গির মৃতদেহ উদ্ধার করে। বাকি জঙ্গিরা মায়ানমারে পালিয়ে যায়।
পরে, খাপলাং বাহিনী হামলার দায় স্বীকার করে। তারা জানায়, নিহত জওয়ানদের তিনটি রাইফেল জঙ্গিরা নিয়ে গিয়েছে। এ দিন যৌথ মঞ্চ ‘দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ওয়েস্টার্ন সাউথ ইস্ট এশিয়া’-র তরফে জানানো হয়— হামলার দায় তাদেরই। খাপলাং বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, আফস্পা, এনএসএ, আসাম সিকিওরিটি অ্যাক্টের মতো দমনমূলক আইন চাপিয়ে অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে চলা নাগা স্বাধীনতা সংগ্রামকে দমন করা যাবে না। ১৪ বছর ধরে সংঘর্ষবিরতি চালিয়ে প্রমাণ হয়েছে ভারত সরকার নাগা সমস্যা সমাধানে আন্তরিক নয়। তারা সমস্যা জিইয়ে রাখতে চায়। তাই সংঘর্ষবিরতি চালিয়ে লাভ নেই। তার সুযোগ নিয়ে ভারত সরকার নাগা সংগঠনগুলির মধ্যে বিভাজন নীতি ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
জঙ্গিদের মিলিত মঞ্চ গড়াকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য— কেএলও, এনডিএফবি ও আলফা নেতারা দীর্ঘ দিন ধরেই টাগা এলাকায় খাপলাং-এর আশ্রয়ে থাকে। তারা সেখানে প্রশিক্ষণও নেয়। তাই, এই মিলিত মঞ্চ কেবল নীতিগত পদক্ষেপ মাত্র। এর ফলে জঙ্গিদের শক্তিবৃদ্ধি হবে না। তাদের সৈন্য ও অস্ত্রসংখ্যা একই থাকবে। তবে এ দিন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, ‘‘জঙ্গিদের মিলিত মঞ্চ শুধু উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জন্যই নয়, দেশের পক্ষেও চিন্তার বিষয়। নাগাল্যান্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উজানি অসম ও নাগাল্যান্ড সীমানায় থাকা জেলাগুলিতে সতর্কতা জারি হয়েছে।
নাগাল্যান্ডের রাজ্যপাল পদ্মনাভ বালকৃষ্ণ আচার্য জঙ্গিহানার নিন্দা করে বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে হিংসার স্থান নেই। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সাধারণত রবিবার সাবাথ ডে-তে খ্রিস্টান নাগা জঙ্গিরা রক্তপাত থেকে দূরে থাকে. ওই দিনটি জঙ্গিরা নিজেদের নিরাপত্তা ও নাগা স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রার্থনা করে। সে ক্ষেত্রে রবিবারের হামলা ব্যতিক্রমী ঘটনা।
খাপলাং বাহিনীর বিরোধী জঙ্গি সংগঠন এনএসসিএন খুলে-কিতোভির পক্ষ থেকে হামলার নিন্দা করে বলা হয়েছে, এতে নাগাল্যান্ডের শান্তি নষ্ট হয়েছে। মায়ানমারে থাকা খাপলাংরা যেন ভারতের নাগাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে। ঘটনায় জড়িত জঙ্গিরা ধরা পড়লে তাদের চরম সাজা দেওয়া হবে। খাপলাংদের নাগাল্যান্ডে কর সংগ্রহ করতে দেবে না বলেও হুমকি দিয়েছে খুলে-কিতোভি শাখা। নবগঠিত এনএসসিএন রিফর্মেশনও সংঘর্ষবিরতি ভেঙে নাশকতার পথ নেওয়া খাপলাংয়ের নিন্দা করেছে।
খাপলাংদের হামলা বেড়ে চলায় রাজ্য সরকার খাপলাং বাহিনী ও কেন্দ্রকে ফের সংঘর্ষবিরতি নবীকরণের আবেদন জানায়। কিন্তু কেন্দ্র জানিয়েছে, তারা এখন খাপলাং বাহিনীকে মায়ানমারের সংগঠন হিসেবে গণ্য করছে। এস এস খাপলাং মায়ানমার সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতিতে রয়েছে। তাদের সঙ্গে কেন্দ্র সংঘর্ষবিরতি করবে না। খাপলাং জঙ্গিদের উপরে রাশ টানার জন্য ইয়াঙ্গনকে অনুরোধ জানিয়েছে দিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy