লন্ডন থেকে এসেছে ভিক্টোরিয়ার আমলের জুড়িগাড়ি। তাতে বসে সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিংহ যাদব। রয়েছেন তাঁর ছেলে অখিলেশ যাদব এবং তাঁরই দলের নেতা আজম খানও। রামপুরে। ছবি: পিটিআই।
রানি ভিক্টোরিয়ার আমলের ঘোড়ার গাড়িতে বসে আছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান মুলায়ম সিংহ যাদব। আর তাকে ঘিরে রয়েছেন অন্তত ৪০ জন মন্ত্রী ও হাজার খানেক সমর্থক। শোভাযাত্রা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে জওহর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে।
রাস্তার দু’পাশে মুলায়ম সিংহ যাদবের বড় বড় পোস্টার। আর এক হাত অন্তর ফুল-মালা, বেলুন দিয়ে সাজানো মোট শ’দুয়েক গেট। থিকথিক করছে পুলিশ। লখনউ ছেড়ে ভিভিআইপি, মন্ত্রী-আমলাদের ঠিকানা যে এখন রামপুর। ছোট্ট শহরটাকে তাই এখন চেনা দায়। উপলক্ষ সপা প্রধান মুলায়মের ৭৫তম জন্মদিন।
তাঁরই দলের নেতা আজম খান নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র রামপুরে দলীয় প্রধানের ৭৫তম জন্মদিন পালনে লাখ লাখ টাকা খরচ করে এলাহি আয়োজন করেছেন। আবার দিনের শেষে নিজেই বিতর্ক উস্কে দিয়ে বলেছেন, “কে আবার, টাকা দিয়েছে তালিবান, আবু সালেম, দাউদ...।”
আসলে জাঁকজমক, অনুষ্ঠানসূচি এবং নিমন্ত্রিতদের তালিকা দেখে চোখ কপালে উঠেছে নিন্দুকদের। রামপুরে এই মুহূর্তে হাজির অন্তত ৫০ জন মন্ত্রী। তাঁদের জন্য রয়েছে ৩২টি লালবাতি লাগানো অ্যাম্বাস্যাডর গাড়ি। এ ছাড়াও আছে ২০টি ইনোভা। আজ-কাল দু’দিন ধরে চলবে অনুষ্ঠান। সে জন্য লন্ডন থেকে আনা হয়েছে রানি ভিক্টোরিয়ার আমলের ঘোড়ার গাড়ি। তাতে চেপে নবাবি কায়দায় মুলায়ম সিংহকে নিয়ে শোভাযাত্রা পৌঁছেছে জওহর বিশ্ববিদ্যালয়ে। জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে সেখানেই। উদ্যোক্তা যে চ্যান্সেলর আজম খান স্বয়ং। রাত বারোটা বাজলে সেখানেই ৭৫ ফুট দীর্ঘ কেক কাটবেন মুলায়ম।
অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিতদের তালিকাও বেশ দীর্ঘ। মন্ত্রীদের পাশাপাশি রয়েছেন কয়েক ডজন আমলা। বেশ কিছু সেলিব্রিটিও থাকছেন। হোটেল, গেস্ট হাউস স্কুলের ঘরগুলো পর্যন্ত ফাঁকা নেই। অনেকের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে মোরাদাবাদ ও বরেলীতে।
রামপুরের ম্যাজিস্ট্রেট রাম সিংহ জানান, শহরেরই দু’টি হোটেলে উঠেছেন মন্ত্রীরা। বরেলীর হোটেলে রয়েছেন বিধায়ক, সাংসদেরা। রাম সিংহ বলেন, “এখানে এতটুকু জায়গা নেই। তাই ওঁদের বরেলীতে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।” ভিভিআইপিদের নিরাপত্তার জন্য সুবিশাল আয়োজন করা হয়েছে। দায়িত্বে রয়েছেন দু’জন এসপি, ২৭ জন ডেপুটি এসপি ও ১২০০ জন কনস্টেবল। দলীয় সমর্থকেরা উঠেছেন স্থানীয় স্কুলে। তাই দু’দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে সেখানে।
এই এলাহি আয়োজন দেখেশুনে আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন উদ্যোক্তা আজম খান। কোথা থেকে এত টাকা এল? জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “এ সব নিয়ে কেন এত মাথাব্যথা আপনাদের? তার পর নিজেই সহাস্যে বলেন, “কিছু টাকা দিয়েছে তালিবান, কিছু দিয়েছে আবু সালেম, কিছু দাউদ, আর কিছু টাকা দিয়েছে জঙ্গিরা...।”
বিরোধীরা অবশ্য ছেড়ে কথা বলছেন না। বিজেপির মুখপাত্র মণীশ মিশ্র বলেন, “উত্তরপ্রদেশের মতো গরিব রাজ্যে নেতামন্ত্রীদের জন্মদিনের উৎসব লজ্জাজনক ঘটনা।” একই বক্তব্য কংগ্রেসেরও। তাদের মুখপাত্র দ্বিজেন্দ্র ত্রিপাঠী কটাক্ষ করে বলেন, “আজম খানের বৌকে তো মুলায়ম সাংসদ বানিয়ে দিয়েছে। মনে হয়, তারই পাল্টা উপহার দিচ্ছেন উনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy