Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Rath Yatra

উল্টোরথেও প্রভু জগন্নাথের সেবায় ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’

সিক্সপ্যাক অ্যাব দেহ থেকে ধাপে ধাপে মিস্টার ওড়িশা বা মিস্টার ইন্ডিয়া সচেতন তাঁর ‘মাসলের’ গয়নাগাঁটি নিয়ে।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০২০ ০৪:২৩
Share: Save:

তাঁর ছাতি ৫৬ ইঞ্চি কি না, মেপে দেখেননি। তবে কাছাকাছিই হবে নিশ্চিত।

পুরীর বাহুবলী অনিল গোছিকর, বাক্যবলে বিশ্বাসী নন। সিক্সপ্যাক অ্যাব দেহ থেকে ধাপে ধাপে মিস্টার ওড়িশা বা মিস্টার ইন্ডিয়া সচেতন তাঁর ‘মাসলের’ গয়নাগাঁটি নিয়ে। “ছাতি আছেই! আমার আসল বিউটি কিন্তু কাঁধে।”— মঙ্গলবার, বাহুড়া যাত্রা বা উল্টোরথের আগের বিকেলে ফোনে বলছিলেন অনিল। তাঁর সাফ কথা: “ছাতির কথায় লাভ নেই। রোজ দু’ঘণ্টা জিম করি। কাঁধের জোরই আসল।”

তবে সেই অতিমানব স্কন্ধ এ রথযাত্রায় আলাদা ‘অ্যাডভান্টেজ’ দিয়েছে কি না, জানতে চাইলে ফোনেই সশব্দে ছি-ছি করে উঠবেন বাহুবলী। বলবেন, “প্রভুর সামনে বডির ঘামন্ড (গর্ব) মহাপাপ! বিশ্বাস করুন, আমি শুধু দড়ি ছুঁয়েছিলাম। যে রথের রশি ছুঁতে হাজারো লোক কাড়াকাড়ি করে, এ বার তিন-চারশো সেবায়েতকে নিয়ে তা আপনিই হেঁটে গেল। এটা প্রভুরই চমৎকার!” বংশপরম্পরায় শ্রীমন্দিরের প্রতিহারী অনিল। জগন্নাথদেবের বডিগার্ড। লোকমুখে জগন্নাথের বাহুবলী সেবায়েত। ৪২ বছরের দেহসৌষ্ঠববিলাসীর কথায়, “রথে আমাদের অন্য কাজ থাকে। খুব ছোটবেলায় এক বার বাবার কাঁধে উঠে রথ টেনেছি। এই প্রথম প্রভুর গুন্ডিচাযাত্রার পথ পুরোটা হেঁটে গেলাম।” বলভদ্রের রথ ধরে ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রায় হাঁটার সময়ে ফোস্কা পড়ে পায়ের দফারফা। তবু আনন্দে টগবগ করছেন অনিল।

বাহুবলীর ভোগ

• সকাল ৬-৩০: ২৫০ গ্রাম কল-বেরোনো ছোলা, আধখানা নারকেল, ১৪-১৫টা কাঠবাদাম, আধ লিটার দুধ।

• বেলা ১০-৩০: ভাত, ব্রকোলির তরকারি, স্যালাড।

• বেলা ১২-৩০: ৩৫০ গ্রাম পনির, ভাত, ডালফ্রাই।

• বিকেল ৩টে: বাদামের সরবত। (দু’ঘণ্টা জিম)

• বিকেল ৫টা: ভাত, ২০০ গ্রাম মিষ্টি আলু, ২৫০ গ্রাম সয়াবিন

• সন্ধ্যা ৭টা: আধ লিটার দুধে দু’চামচ প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট।

• রাত ১০টা: চারটে রুটি, বিটগাজর বা পনিরের তরকারি। (ইচ্ছে হলে দুধ)

স্বর্গদ্বারেই গোছিকরদের প্রসিদ্ধ হোটেল। আলমবাজারে বাবার বন্ধুর সূত্রে অনিলের পশ্চিমবঙ্গ সংযোগও গভীর। ২০১৯-এ চেন্নাইয়ে ৭০ কেজির ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ অনিল। সে-বার ৮০ কেজির ব্রোঞ্জজয়ী সমীরণ নন্দী, ৮৫ কেজির ব্রোঞ্জজয়ী নীলকণ্ঠ ঘোষেরা অনিলের বন্ধু। ঝরঝরে বাংলায় বলছিলেন, পকেট হারকিউলিস মনোহর আইচের কথা অনেক শুনেছি! বাহুবলের চর্চাও জগন্নাথ-সংস্কৃতির অঙ্গ বলে মনে করেন তিনি। আগে পুলিশ ছিল না। প্রতিহারীরাই সব। দাদা দামোদরও জাতীয় স্তরের বডিবিল্ডার ছিলেন। স্নাতক স্তরে আইনশিক্ষার পাঠ শেষ করেননি অনিল। প্রতিযোগিতায় ঢোকা খানিক বেশি বয়সেই। ২০১২-য় ৬৫ কেজির মিস্টার ওড়িশার দিনেই ওজন একটু বেড়ে গিয়েছিল। ছুটে ঘাম ঝরিয়ে তখনই ছেঁটে ফেলে চ্যাম্পিয়ন। বাহুবলী হাসেন, “জগন্নাথের দয়ায় আর পিছনে তাকাইনি। মুম্বই, দুবাইয়ে শক্ত আন্তর্জাতিক লড়াইয়ে ব্রোঞ্জ, সোনাও পেয়েছি।”

অনিলের বড় চ্যালেঞ্জ, আমিষ স্পর্শ করবেন না। তাঁর কৌশল, বার বার খানিকটা করে খাওয়া। বলেন, “দুধ খুব সে খাই। তিন দফা ভাত, এক বার রুটি। প্রতিযোগিতা নেই বলে, একটু তেল খাচ্ছি। ডিম, চিকেন খেলেই বাড়তি প্রোটিন জমে, সেটা কাজের নয়।”

এ দিন রাত থেকেই ফের দু’দিনের কার্ফু শ্রীক্ষেত্র জুড়ে। আরও ৪০০০ সেবায়েত, পুলিশ, পুরকর্মী কোভিড-পরীক্ষা করে চাঙ্গা। এক জন পুলিশ কনস্টেবল ছাড়া কারও ভাইরাস মেলেনি। আজ, বুধবার বাহুড়াযাত্রার জন্য পুরীর বাহুবলীও তৈরি।

অন্য বিষয়গুলি:

Rath Yatra Festival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy