Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
National

কোঝিকোড়ে মোদীর চ্যালেঞ্জ: পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করবই

উরির হামলার ঘটনার পর প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানকে এই প্রথম সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, সন্ত্রাসের রাস্তায় হেঁটে হাজারো চেষ্টা করেও ভারতের উন্নয়নের রথের চাকাকে থামাতে পারবে না পাকিস্তান।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২০:০২
Share: Save:

উরির হামলার ঘটনার পর প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানকে এই প্রথম সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, সন্ত্রাসের রাস্তায় হেঁটে হাজারো চেষ্টা করেও ভারতের উন্নয়নের রথের চাকাকে থামাতে পারবে না পাকিস্তান। একই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদকে আঁকড়ে থাকা পাকিস্তানকে বিশ্বের অন্য দেশগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ারও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। মনে করিয়ে দিলেন, উরিতে পাক হামলায় ১৮ জন জওয়ানের ‘বলিদান’ ব্যর্থ হবে না। ওই জওয়ানদের বলিদানই সন্ত্রাসবাদের আঁতুড় ঘর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিজ্ঞাকে দৃঢ়তর করে তুলবে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জোট বাঁধার প্রক্রিয়াটাকে আরও শক্তিশালী ও গতিশীল করে তুলবে।

শনিবার কেরলের কোঝিকোড়ে বিজেপি-র দলীয় সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে ভারতের প্রাধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ মানবতার দুশমন। সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে জোট বেঁধে দাঁড়াতে হবে এ বার গোটা বিশ্বের মানবতাবাদীদের। এশিয়ার যেখানে যেখানে সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে তারা সকলেই একটি দেশের (পড়ুন, পাকিস্তান) দিকে আঙুল তুলছে। তাকেই দোষী মানছে। গোটা এশিয়ায় তারা আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি করছে। তা সে ভারতেই হোক বা বাংলাদেশে বা আফগানিস্তানে। এই দেশটির জন্যই গোটা এশিয়া রক্তাক্ত হয়ে উঠছে! সন্ত্রাসবাদ নিরীহ লোককে খুন করছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশটিকে মনে করিয়ে দিতে চাই, না হিন্দুস্তান ঝুকা হ্যয়, না হিন্দুস্তান ঝুকে গা। সন্ত্রাসবাদকে নিকেশ করেই ছাড়বে হিন্দুস্তান।’’

কেন, তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বলেছেন, ‘‘এই সন্ত্রাসবাদ সর্বত্রই উন্নয়নের রথের চাকাটাকে থমকে দিচ্ছে। অথচ, ‘সবকে সাথ, সবকা বিকাশ’, এই ‘মন্ত্র’ নিয়েই গোটা বিশ্ব দ্রুত গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এগিয়ে যেতে চাইছে। তার জন্য দেশ থেকে বেকারত্ব দূর করতে হবে। দারিদ্র্য নির্মূল করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন ঘটাতে হবে। যাবতীয় অন্যায়, দুর্নীতির বেড়াজাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে হবে।’’

আর এই সবচেয়ে জরুরি লড়াইটা জেতারই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন এ দিন প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানের দিকে। তাঁর মিনিট চল্লিশেকের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, ‘‘হিম্মত হো তো আও! যদি হিম্মত থাকে তো পাকিস্তান দেশ থেকে গরিবি হঠাক। দেখি কোন দেশ থেকে আগে গরিবি হঠে! পাকিস্তানের জওয়ানদের বলছি, দেখো তো কে আগে গরিবি হঠাতে পারে দেশ থেকে! অশিক্ষার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেখি কে আগে জেতে! কোন দেশ আগে জেতে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, হিন্দুস্তান নাকি পাকিস্তান? হিন্দুস্তানেও প্রসূতি মারা যায়। সদ্যোজাত শিশুও মারা যায়। পাকিস্তানেও মারা যায়। আসুন, সেই মৃত্যু রোখার লড়াই করি। দেখি, কে জেতে? গরিবি হঠানোর লড়াইয়ে আমি নিশ্চিত, আমরাই আগে জিতব। হিন্দুস্তান এমন একটা দেশ হোক, যা যাবতীয় অন্যায় থেকে মুক্ত হবে, শীঘ্রই। বেকারত্বের সমস্যা থেকে মুক্ত হবে। ন্যায়ের যুদ্ধে জিতবে। স্বাচ্ছ্যন্দের যুদ্ধে জিতবে। রোজগারির যুদ্ধে জিতবে। দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্ম শতবর্ষে সেই প্রতিজ্ঞাই করছি আমরা।’’

একই সঙ্গে দু’টি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও আজ ভারত আর পাকিস্তানের অবস্থানটা দুনিয়ার অন্য সব দেশের কাছে কোথায়, সেটা মনে করিয়ে দিতে চেয়ে মোদী বলেছেন, ‘‘আমি ওঁদের বলতে চাই, ১৯৪৭ সালের আগে আপনাদের পূর্ব পুরুষও এই হিন্দুস্তানের মাটিকেই প্রণাম করতেন। ভারত আর পাকিস্তান, দু’টি দেশ একই সঙ্গে স্বাধীন হয়েছে। আজ হিন্দুস্তান সফ্‌টওয়্যার এক্সপোর্ট করে আর পাকিস্তান টেররিস্ট এক্সপোর্ট করে। প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক নেতাদের জোর গলায় কথা বলার শক্তি এখন হারিয়ে গিয়েছে। তাঁরা এখন জঙ্গিদের কথায় ওঠা-বসা করেন। এক সময় পূর্ব বঙ্গ আপনাদেরই (পড়ুন, পাকিস্তান) অঙ্গ ছিল। আপনারা কিছুই সামলাতে পারেননি! আর এখন কাশ্মীরের কথা বলছেন! যা আপনাদের সঙ্গে আছে, সেটাই আগে সামলে দেখান! কিন্তু সেটাই ওরা করে উঠতে পারছে না! উরিতে আমাদের প্রতিবেশী দেশ আমাদের ১৮ জন জওয়ানকে খতম করেছে। কয়েক মাসের মধ্যে মোট ১৭ বার এই দেশ আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সীমান্ত পেরিয়ে তারা আমাদের দেশে বেশ কয়েক বার ঢুকেও পড়েছে। কিন্তু আমাদের সাহসী সেনারা তাদের সকলকেই উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। শাস্তি দিয়েছে। ১১০ জন জঙ্গিকে খতম করে দিয়েছে। ওই ১৭ বার হামলার হাত থেকে আমাদের বাঁচিয়েছে আমাদের বীর সেনারা। দেশের মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে তারা লড়েছে। আমাদের গর্ব এই সেনারা। জওয়ানদের শক্তিই দেশের মনোবল। এটাই আমাদের তাকত। আমাদের শক্তি। ওই ১৭টি হামলার ঘটনায় যদি সেনারা পাশে না থাকত, আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারতাম না।’’

এ দিন কোঝিকোড়ে দলীয় সমাবেশে ভাষণ দিতে আসার আগে সকালে দিল্লিতে স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গেও জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও। উরি হামলার পরে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে কোণঠাসা করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। উরি হামলার পর পরই প্রধানমন্ত্রী টুইট করে বলেছিলেন, “যারা এই হামলা চালিয়েছে তাদের কোনও ভাবেই ছেড়ে দেওয়া হবে না।” কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকরও কড়া বার্তা দেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে উরির হামলা নিয়ে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে শুরু হয়ে যায় তত্পরতা। উরির হামলাকারী জঙ্গিদের কাছে যে সব জিনিস উদ্ধার হয়েছে, তাতে এই হামলায় পাক যোগের স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করে ভারত। ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিতকে তলব করে হামলায় পাক যোগের প্রমাণও দেখান। কিন্তু পাকিস্তান সরাসরি তা অস্বীকার করে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ভারত যে ভাবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। উরি হামলা নিয়ে শুক্রবারই বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব বলেছিলেন, “দাঁতের বদলে গোটা চোয়ালটাই খুলে নেওয়া হবে।” উরি নিয়ে ধেয়ে আসা প্রশ্নবাণের মুখে প্রবল অস্বস্তির মধ্যেও রাম মাধবকে দলের দুর্গ সামলাতে হয়েছে। তিনি বলেন, কূটনৈতিক স্তরে অনেক পদক্ষেপ হয়েছে এব‌ং আরও হবে। তবে পাকিস্তানকে জবাব দিতে কূটনীতি ছাড়া আর কোনও পদক্ষেপের হদিশ দিতে পারেননি তিনি।

কোঝিকোড়ের দলীয় সমাবেশে এ দিন হাজির ছিল বিজেপি-র গোটা জাতীয় পরিষদই। সভামঞ্চে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ছিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, পূর্বতন সভাপতি নিতিন গড়কড়ী, দুই বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীও। এ দিন মোদীর ভাষণে বার বার উঠে আসে মহাত্মা গাঁধী, রাম মনোহর লোহিয়া ও দীনদয়াল উপাধ্যায়ের নাম।'

আরও পড়ুন- ঘনাচ্ছে আশঙ্কার মেঘ, নিয়ন্ত্রণরেখায় জোর প্রস্তুতি দুই দেশেরই

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE