কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পে ব্যাপক রদবদল নিয়ে আসতে চলেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর ফলে অগুনতি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ, টাকা খরচ ঠিক মতো হল কি না তা নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে দর কষাকষির দিন প্রায় শেষ হতে চলেছে। নরেন্দ্র মোদী সরকার এ বার একশো দিনের কাজ, সামাজিক সুরক্ষা, তফসিলি জাতি-উপজাতি ও সংখ্যালঘু উন্নয়নের মতো হাতে গোনা দশটি প্রকল্পেই জোর দিতে চলেছে।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সংখ্যা এক ধাক্কায় ৫৫ থেকে ২৭টিতে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে সরকার। সরকারি সূত্রের খবর, এর মধ্যে ১০টি প্রকল্পের ব্যয়ভার কেন্দ্র নিজে বহন করবে। মূলত দারিদ্র দূরীকরণ, গ্রামে আয়ের সুযোগ তৈরি, সমাজের একেবারে পিছিয়ে থাকা মানুষদের সাহায্য, চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও রোগ নিয়ন্ত্রণের দিকে তাকিয়ে এই ১০টি প্রকল্পকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু সরকারি ঘোষণার অপেক্ষা।
২৭টির মধ্যে বাকি ১৭টি প্রকল্পে কেন্দ্র নিজের দায়ভার কমিয়ে ফেলবে। মিড-ডে মিল, সর্ব শিক্ষা অভিযান, আইসিডিএস, স্বচ্ছ ভারত অভিযান, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মতো প্রকল্পে এখন থেকে শতকরা ৬০ ভাগ অর্থ দেবে কেন্দ্র। বাকি ৪০ ভাগ রাজ্যকেই দিতে হবে। এত দিন এই প্রকল্পগুলির পুরোটাই কিংবা ৭৫ শতাংশ অর্থ কেন্দ্র দিত। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় অর্থসচিব রতন ওয়াটাল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
এমনিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্র টাকা কেটে নিচ্ছে বলে নিয়মিত অভিযোগ তুলছেন। অতীতে বামেরা যেমন বঞ্চনার রাজনীতি করতেন, সেই একই রাস্তায় হাঁটছেন তিনি। এ বার মিড-ডে মিলের মতো প্রকল্পে কেন্দ্রের টাকা কমলে সেই অভিযোগের সুর স্বাভাবিক ভাবেই আরও চড়বে। কংগ্রেসও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ কাটছাঁট করার অভিযোগ তুলেছে। আজ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ দাবি করেন, বিহারে এই গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পে অবহেলার মূল্যই দিতে হয়েছে বিজেপিকে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে মোদী সরকারের নতুন ভাবনা নিয়ে বিরোধীদের প্রবল ক্ষোভ জানানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সামাজিক বা গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পে টাকা কাটছাঁট করার রাজনৈতিক ঝুঁকির কথা ভেবেই মোদী সরকার ১০টি প্রকল্পের পুরো দায়ভার নিতে চাইছে। যার মধ্যে রয়েছে ইউপিএ-জমানায় তৈরি একশো দিনের কাজের প্রকল্প। কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সংখ্যা ও অধিকাংশ প্রকল্পে বরাদ্দ কমানোর পিছনে সরকারের যুক্তি, নীতি আয়োগের অধীনে মুখ্যমন্ত্রীদের কমিটির সুপারিশ মেনেই এই সিদ্ধান্ত। রাজ্যের তরফেই এত দিন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার দাবি তোলা হতো। যুক্তি ছিল, কাশ্মীরে যে প্রকল্প দরকার, কন্যাকুমারিকায় তার দরকার নেই। তাই সার্বিক ভাবে দারিদ্র দূরীকরণ বা সামাজিক সুরক্ষার প্রকল্পগুলিই শুধু চালানো হোক। সেই যুক্তি মেনে ইউপিএ-সরকারের আমলেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সংখ্যা ১৪৭ থেকে কমিয়ে ৬৬ করা হয়। এর পর মোদী জমানায় আরও কিছু প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ায় পর এখন ৫৫টি কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু রয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের নেতৃত্বাধীন মুখ্যমন্ত্রীদের কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ২৭ অক্টোবর কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সংখ্যা কমিয়ে আনার সুপারিশ করেছিল। ওই কমিটিতে জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, মণিপুর, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীরাও ছিলেন। বেশ কিছু কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কেন্দ্রের আর্থিক দায় কমানোরও সুপারিশ করে ওই কমিটি। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের যুক্তি, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে এখন কেন্দ্রীয় কর বাবদ আয়ের ৪২ শতাংশ রাজ্যগুলিকে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তাই বাড়তি খরচের দায় সামলাতে রাজ্যের সমস্যা হবে না। কেন্দ্রের বক্তব্য, যে সব প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে কোনও প্রকল্প একটি রাজ্যের জন্য বিশেষ ভাবে প্রয়োজন মনে করলে রাজ্য সরকার তা চালিয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাজ্যকে শুধু অর্ধেক খরচ জোগালেই হবে। বাকি অর্ধেক কেন্দ্র দেবে। উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জন্য অবশ্য বিশেষ ছাড় থাকবে। তাদের শুধু ২০ শতাংশ দিলেই চলবে। যে ১৭টি প্রকল্পে এমনিতে কেন্দ্র ৬০ শতাংশ অর্থ জোগাবে, সেগুলিতেও উত্তর-পূর্বের জন্য ৮০ শতাংশ অর্থ দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy