ইউপিএ জমানায় জোরদার বিরোধিতা করে এলেও এখন আধার কার্ডেই আস্থা রাখছে বিজেপি ও তার সরকার। শুধু তা-ই নয়, দেশের যে শ’তিনেক জেলায় ৮০ শতাংশ মানুষকে আধার কার্ড দেওয়া সম্ভব হয়েছে, সেখানে রান্নার গ্যাস, পেনশন ও ছাত্রবৃত্তির টাকা ওই কার্ডের মাধ্যমে পৌঁছনোর দ্রুত ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সরকারের এক শীর্ষকর্তা জানান, বিষয়টি নিয়ে আইনি যা বাধা রয়েছে, তা কাটানোর বিষয়টি দেখছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আধার কার্ড আবশ্যিক করতে তিনি চলতি অর্থবর্ষে ইউপিএ জমানার চেয়েও ৪৮৯ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রেখেছেন বাজেটে।
মোদী সরকারের এই তৎপরতাকে স্বাগত জানালেও কংগ্রেস মনে করছে, এতে বিজেপির ভণ্ডামিই দেশবাসীর সামনে চলে এল। আধার কার্ড চালু করতে তৎপর হয়ে মনমোহন সিংহ সরকার যখন ‘আপনার টাকা আপনার হাতে’ স্লোগান তুলেছিল, তখন রাজনৈতিক ভাবে এর তীব্র সমালোচনা করেছিল বিজেপি। সুষমা স্বরাজরা বলেছিলেন, এ হল কংগ্রেসের ‘নগদের বিনিময়ে ভোট’ প্রকল্প। এমনকী, আধার কার্ড চালু করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে যে সব সমস্যা হচ্ছিল, তা নিয়ে মানুষের অসন্তোষে অক্সিজেন জোগাতেও পিছপা হয়নি বিজেপি। কিন্তু ক্ষমতায় এসে সরকারি পরিষেবা ও ভর্তুকির টাকা মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছে দিতে সেই আধার কার্ডকেই আবশ্যিক করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন প্রধানমন্ত্রী। যার অর্থ রান্নার গ্যাস, কেরোসিন থেকে শুরু যাবতীয় ভর্তুকির টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে ফের বাধ্যতামূলক হবে আধার কার্ড।
সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ডেকেছিলেন তাঁর সচিবালয়ে। সেখানে তিনি নির্দেশ দেন, সরকারি পরিষেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে আধার কার্ড আবশ্যিক করার পথে আইনি যে জটিলতা রয়েছে, তা কাটাতে তৎপর হতে হবে। সেই সঙ্গে সংসদে দ্রুত আধার বিল (ন্যাশনাল আইডেনটিফিকেশন অথরিটি বিল) পাশ করাতে যেন সক্রিয় হয় সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর ওই নির্দেশের প্রতিফলন স্পষ্ট অরুণ জেটলির প্রথম বাজেটেও। চলতি অর্থবর্ষে আধার প্রকল্পের জন্য ২,০৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ইউপিএ জমানায় এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ১,৫৫০ কোটি টাকা। জেটলি গত কাল বাজেট বক্তৃতাতেও বলেছেন, “ভর্তুকি ব্যবস্থাকে আগের থেকে অনেক বেশি লক্ষ্যমুখী (টার্গেটেড) করে তুলবে সরকার। প্রকারান্তরে যার অর্থ, আধার কার্ডের ভিত্তিতেই বণ্টন করা হবে ভর্তুকির অর্থ।
মনমোহন সরকার আধার কার্ড চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যাতে সরকারি ভর্তুুকি, ভাতা বা বৃত্তির টাকা শুধু তাঁদের হাতেই পৌঁছয়, যাঁরা তা পাওয়ার যোগ্য। তাতে ভর্তুকি বাবদ সরকারের আর্থিক দায়ও অনেকটা কমে আসবে। কিন্তু গত মার্চ মাসে একটি জনস্বার্থ মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, আধার কার্ডকে আবশ্যিক করতে সরকার কোনও নির্দেশ জারি করে থাকলে তা বাতিল করতে হবে। সর্বোচ্চ আদালত এমন রায় দিতে পারে আঁচ করেই আধারকে বৈধতা দিতে সংসদে বিল পেশ করেছিল সরকার। কিন্তু বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হার নেতৃত্বাধীন স্থায়ী কমিটি সেই বিল খারিজের সুপারিশ করে রিপোর্ট দেয়। এর পরে ভোটের বাজারে বিলটি নিয়ে এগোতে পারেননি মনমোহনরা। এ বার এগোতে চান মোদী।
আধার কার্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ছাড়াও ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী ও আধার কর্তৃপক্ষের ডিরেক্টর জেনারেল বিজয় মদন। সূত্রের খবর, আধার কর্তৃপক্ষ জনিয়েছেন, দেশের ৬৪.২৩ কোটি মানুষকে ইতিমধ্যেই আধার কার্ড দেওয়া হয়েছে। সরকারের একটি সূত্র দাবি করছে, আরও ১০ কোটি মানুষকে আধার কার্ড দেওয়া হতে পারে। দেশের মোট জনসংখ্যার বাকি মানুষকে আধারের পরিবর্তে জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জীকরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে নথিভুক্ত করা হবে।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ বলেন, “এটা খুশির বিষয় যে আধার কার্ডের প্রচলনে সক্রিয় নতুন সরকার। কিন্তু এতে বিজেপির ভণ্ডামিও ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। বিরোধী আসনে থাকার সময়, আধার কার্ডের প্রচলন, বিমা ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি, পণ্য পরিষেবা কর ব্যবস্থা প্রচলনের মতো মনমোহন সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র আপত্তি করেছিল বিজেপি। এখন মোদীই সেই প্রকল্প রূপায়ণে সব থেকে বেশি সক্রিয়। যার অর্থ এত দিন মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছিল বিজেপি।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জেটলির বক্তব্য, “এই সব প্রকল্পের কোনওটিতেই বিজেপির নীতিগত আপত্তি ছিল না। যারা ভারতীয় নাগরিক নয়, অনুপ্রবেশকারীদের আধার কার্ড দেওয়া নিয়ে আপত্তি ছিল বিজেপির। আর বিমা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির নিয়ম নিয়ে কিছু প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।” তবে জেটলির এ-ও বক্তব্য, পণ্য পরিষেবা কর ব্যবস্থা প্রচলন নিয়ে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি থেকে এখনও বাধা রয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে রাজনৈতিক স্তরে আলোচনা শুরু করবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy