লোইরপোয়া মডেল স্কুল। — নিজস্ব চিত্র।
আঁতুরঘরেই নষ্ট হতে বসেছে রাজ্যের মডেল স্কুল তথা জওহর নবোদয় বিদ্যালয় প্রকল্প। সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যম এই স্কুলে ‘স্মার্ট ক্লাস রুম’ থেকে শুরু করে আধুনিক লাইব্রেরি, কোনও কিছুরই অভাব নেই। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে রেখে পাঠদানের ব্যবস্থা রয়েছে মডেল স্কুলে। কিন্তু বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার মডেল স্কুলের জন্য আর্থিক অনুদান বন্ধ করে দেওয়ায় সার্বিক প্রকল্পই বিশ বাঁও জলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। শঙ্কিত রাজ্য সরকারও।
রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানের অংশ হিসেবে মডেল স্কুল স্থাপনে উদ্যোগী হয় অসম সরকার। যে বিধানসভা এলাকায় শিক্ষার হার ৬০ শতাংশের কম, সেখানেই মডেল স্কুল স্থাপন করে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষিত করাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য। করিমগঞ্জ জেলার লোইরপোয়াতে স্থাপন করা হয় এরকমই একটি মডেল স্কুল। সেই স্কুলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় গত ২৪ জানুয়ারি। তার পর থেকেই প্রথম শ্রেণি, ষষ্ঠ শ্রেণি এবং নবম শ্রেণির ক্লাস শুরু করা হয়। বিদ্যালয়টির বর্তমান ছাত্র সংখ্যা ২০০। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীরা বিনামূল্যে পোশাক পরিচ্ছদ থেকে আরম্ভ করে পাঠ্যবইও পায় এখানে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের শুধু পাঠ্যবই কিনতে হয়। এ ছাড়া নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা মডেল স্কুলের ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করারও সুযোগ পাবে। দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই সময় মতো বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। এমনকী মেধা থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনা শেষ করতে পারে না। ছেলেদের পড়া চালিয়ে গেলেও অভিভাবকরা ছাত্রীদের অনেক সময়ই স্কুল ছাড়িয়ে দেয়। সেই কারণেই ছাত্রীদের জন্য এই বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা।
করিমগঞ্জ লোইরপোয়া মডেল স্কুলেও তৈরি করা হয়েছে ছাত্রী-আবাস। কিন্তু ছাত্রী-আবাসের আনুষঙ্গিক সামগ্রী না আসায় তা চালু করতে পারছেন না বলে জানান স্কুলের প্রিন্সিপাল বিপ্লব কর্মকার। মডেল স্কুলটি সত্যি আর পাঁচটি বিদ্যালয়ের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ঝকঝকে স্কুল বিল্ডিং, বিশাল স্কুল চত্বর, প্রত্যেকটি ক্লাস রুমে রয়েছে প্রোজেক্টর, কম্পিউটার। কিন্তু এত কিছু থাকা সত্ত্বেও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন সংশ্লিষ্ট সব মহল। কারণ সেই একটাই, কেন্দ্রীয় সরকার রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ফলে অসমের ৮১টি ব্লকে মডেল স্কুল স্থাপন তো দূরের কথা, যে ১৪টি স্কুল চালু করা হয়েছে তার খরচই বা কোথা থেকে আসবে, প্রশ্ন তা নিয়েও। এর ফলে ছাত্রী-আবাস তৈরি হয়ে গেলেও তা চালু করারও অনুমতি দেয়নি রাজ্য।
রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযানে যে সব মডেল স্কুল স্থাপন করা হয়েছে, সেগুলির পরিচালনার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের উপর। কেন্দ্রীয় সরকার এ ক্ষেত্রে আর একটি টাকাও অনুদান দেবে না বলে রাজ্যকে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে মডেল স্কুলের ভবিষ্যত্ খুব একটা উজ্জ্বল বলে মনে করছেন না অভিভাবকদের একাংশ। তাঁদের কথায়, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে মডেল স্কুল তৈরির জন্য যে টাকা দিয়েছিল সেটিও অন্য খাতে ব্যয় করেছে রাজ্য। ফলে প্রস্তাবিত ৮১টি জায়গায় বিদ্যালয় স্থাপন করা যায়নি।
রাজ্য সরকারের মুখপাত্র তথা শিক্ষা বিভাগের উপদেষ্টা প্রদ্যোত বরদলৈ বলেন, ‘‘অন্য কেন্দ্রীয় সাহায্যপ্রাপ্ত প্রকল্পের মতোই রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে, আগাম না জানিয়ে আদর্শ বিদ্যালয় প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। ইউপিএ আমলে তৈরি হওয়া এই প্রকল্পে গুণগত মানের উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছিল। এই স্কুলে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত, আধুনিক শিক্ষা পরিকাঠামো গড়ার মতো বহু পরিকল্পনা ছিল। এখন কেন্দ্র হঠাত্ টাকা দেওয়া বন্ধ করায় আমাদের উপরে বিশাল আর্থিক বোঝা চেপে গিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, গত বছর নভেম্বরে তিনি নিজেই ৮টি স্কুলের উদ্বোধন করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সেগুলি তো হঠাত্ বন্ধ করে দেওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে রাজ্য সরকার নিজের খরচেই স্কুলগুলি চালাচ্ছে।’’
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ এ নিয়ে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে চিঠি পাঠিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, আদর্শ বিদ্যালয় প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সাহায্য বন্ধ হওয়ায় রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে অত্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘প্রতিটি বিদ্যালয় চালাতে বছরে ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা লাগে। সেই হিসেবে যদি ৮১টি বিদ্যালয় চালাতে হয় তবে ৯৪ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা লাগবে। কেন্দ্রীয় সাহায্য ছাড়া এই খরচ রাজ্যের পক্ষে চালানো সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy