জঙ্গি হানার পর দ্রুত সরানো হচ্ছে আহতকে। শুক্রবার বালাজান তিনালিতে। ছবি: পিটিআই।
স্বাধীনতা দিবসের আগে হামলার আশঙ্কা নিয়ে ‘নির্দিষ্ট খবর’ ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। কিন্তু ফের তাঁদের বেকুব বানিয়ে অসমে গণহত্যা চালাল জঙ্গিরা। কোকরাঝাড়ের বালাজান তিনালির বাজারে যে হামলায় নিহতের সংখ্যা আপাতত এক জঙ্গি-সহ ১৪। ঘটনার পিছনে বড়ো জঙ্গি সংগঠন এনডিএফবি সংগ্রামপন্থীর হাত রয়েছে বলে দাবি সরকারের। তবে ওই সংগঠনের নেতা বি আর ফেরেঙ্গা দায় অস্বীকার করেছে।
আজ শুক্রবারের হাট বসেছিল কোকরাঝাড়ের বালাজান তিনালিতে। বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ একটি অটোভ্যানে চেপে সেখানে পৌঁছয় সেনার পোশাক পরা জনাপাঁচেক যুবক। এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে তারা। ছোড়া হয় গ্রেনেডও। গ্রেনেড হামলায় একটি দোকানে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই নিহত হন দুই মহিলা-সহ ১২ জন। তাঁদের মধ্যে ছ’জন বড়ো, চার জন সংখ্যালঘু। রয়েছেন দুই বাঙালিও। মহিলা ও শিশু-সহ জখমের সংখ্যা ২০ জন। পরে হাসপাতালে আরও এক জনের মৃত্যু হয়। জখমদের দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই প্রথম বড়োদের খুন করার অভিযোগ উঠেছে এনডিএফবি-র মতো বড়ো জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে।
হামলা চলাকালীন হঠাৎই ওই এলাকায় এসে পড়ে সেনার একটি কনভয়। সেনা সূত্রে খবর, কনভয়টি ওই এলাকায় টহল দিচ্ছিল। গুলির শব্দ শুনে বাজারে গিয়ে হাজির হয়। পাল্টা গুলি চালাতে শুরু করেন জওয়ানরা। আধ ঘণ্টা গুলির লড়াইয়ের পরে লাগোয়া জঙ্গলে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। বাজার থেকে এক জঙ্গির দেহ উদ্ধার হয়েছে। তার কাছ থেকে এ কে-৫৬ রাইফেল ও গ্রেনেড উদ্ধার করে সেনা। সরকারি সূত্রে খবর, নিহত জঙ্গির নাম মনজয় ইসলারি। ঘটনাস্থলের কাছেই পুলিশ ফাঁড়ি থাকা সত্ত্বেও পুলিশ আসতে দেরি করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। বেলা দেড়টা নাগাদ জঙ্গলে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়। যে অটোভ্যানে চড়ে জঙ্গিরা এসেছিল তার রেজিস্ট্রেশন নেই। নম্বরপ্লেটও ভুয়ো। তাই চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
কিন্তু এই ঘটনা চিন্তায় ফেলেছে রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারকে। প্রায় ছ’মাস রাজ্যে তেমন বড় জঙ্গি গতিবিধির কথা শোনা যায়নি। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, স্বাধীনতা দিবসের আগে আলফা, এনডিএফবি, কেএলও এবং খাপলাং জঙ্গি গোষ্ঠীর যৌথ মঞ্চ ‘ইউএনএলএফডব্লু’ উজানি অসমে হামলা চালাতে পারে বলে তাঁদের কাছে খবর ছিল। কিন্তু জঙ্গিরা তার বদলে হামলার জন্য বেছে নিয়েছে নমনি অসমের কোকরাঝাড়কে।
২০১৪ সালে কোকরাঝাড় ও শোণিতপুরে আদিবাসীদের উপরে হামলা চালিয়েছিল এনডিএফবি সংগ্রামপন্থী। তার পরে ওই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযানে নেমেছিল যৌথ বাহিনী। বেশ কিছু দিন ধরেই প্রশাসনের দাবি, ওই গোষ্ঠী কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছে। ২০১৪ সালের হামলার পাণ্ডা সংবিজিৎ এখন ভুটানের কোথাও আত্মগোপন করে আছে। সে এখন নিজের সংগঠনেই ব্রাত্য। ভারত-ভুটান সীমান্তের কোথাও লুকিয়ে আছে সংগঠনের স্বঘোষিত সেনাপ্রধান জি বিদাই। বাকি শীর্ষ নেতারা হয় ধৃত নয় মৃত।
কিন্তু এ দিনের ঘটনার পরে ফের সেই গোষ্ঠীর দিকেই আঙুল তুলছে রাজ্য ও কেন্দ্র। ফলে প্রশ্ন উঠছে জঙ্গিদের গতিবিধি নিয়ে গোয়েন্দাদের কাছে থাকা তথ্য সম্পর্কেই।
ঘটনার সময়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। খবর পেয়ে তাঁকে দ্রুত রাজ্যে ফিরে যেতে বলেন মোদী। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকেও অসম যেতে নির্দেশ দেন তিনি।
গোয়েন্দাদের মতে, অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই এই হামলা চালিয়েছে এনডিএফবি সংগ্রামপন্থী। কারণ, অনেক শীর্ষ নেতা খতম হয়ে যাওয়ায় তাদের তোলাবাজির পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপরে হামলার ঘটনায় ৬০ জন এনডিএফবি জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ।
এনডিএফবি-র তরফে ঘটনার দায় অস্বীকার করা হলেও তা মানতে রাজি নন গোয়েন্দারা। বরং হামলার কৌশল ও নিহত জঙ্গির চেহারা দেখার পরে এনডিএফবি-যোগ নিয়ে তাঁরা কার্যত নিশ্চিত। ওই সংগঠনের বিরুদ্ধে বড় অভিযানে নামতে চায় সরকার।
কোকরাঝাড় থেকে ভুটান সীমান্তের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারের সঙ্কোশ নদীও ২৫-৩০ কিলোমিটারের মধ্যেই। এক সময়ে ওই এলাকায় কেএলও জঙ্গিদের প্রভাব ছিল। এই ঘটনাতেও কেএলও-র যোগ থাকতে পারে বলে মনে করছেন পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কর্তারা। এক পুলিশ কর্তা জানান, অসম লাগোয়া জেলাগুলিতে লাল সতর্কতা জারি হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy