এম জে আকবর
তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা নিয়ে মুখ খুলেছেন অনেকেই। তার মধ্যে প্রথম অভিযোগকারী সাংবাদিক প্রিয়া রামানির বিরুদ্ধে আজ মানহানির ফৌজদারি মামলা দায়ের করলেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। দিল্লির পাতিয়ালা কোর্টে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ (মানহানি) ধারা এবং ৫০০ (মানহানির শাস্তি) ধারায় এই মামলা করা হয়েছে। ৯৭ জন আইনজীবীর একটি দলকে মাঠে নামিয়েছেন আকবর! তার মধ্যে আবার ৩০ জন মহিলা। যাদের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ‘সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন তথ্য নিয়ে নিছক বদনাম ছড়ানোর জন্য প্রিয়া কুৎসা রটিয়েছেন।’ এই ধারায় শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ ২ বছরের হাজতবাস হতে পারে।
প্রিয়া অবশ্য দমেননি। বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন, লড়ার জন্য তিনি তৈরি। সত্য এবং নিরঙ্কুশ সত্যই তাঁর হাতিয়ার। প্রিয়া দাবি করেছেন, আকবর মামলা ঠুকে অভিযোগকারিণীদের মুখ বন্ধ করতে চাইছেন, কিন্তু সেটা হবে না।
যৌন হেনস্থার একের পর এক অভিযোগের মুখে আকবর ইস্তফা দেবেন কি না, তাই নিয়ে জল্পনা চলছিল কিছুদিন ধরে। গত কাল দেশে ফিরেই আকবর বুঝিয়ে দেন, পদ ছাড়ার প্রশ্ন উঠছে না। বরং দীর্ঘ বিবৃতি দিয়ে তিনি প্রতিটি অভিযোগ ধরে ধরে সব ক’টি মিথ্যা এবং সাজানো বলে দাবি করেন। আকবরের বিরুদ্ধে সবচেয়ে দীর্ঘ এবং বিশদ অভিযোগ যিনি এনেছিলেন সেই গাজালা ওয়াহাব, আজ প্রত্যুত্তরে অভিযোগ করেন, আকবরই মিথ্যা বলছেন অথবা বুড়ো বয়সে তাঁর ভীমরতি ধরেছে! গাজালার আনা অভিযোগ উড়িয়ে আকবর গত কাল বলেছিলেন, অফিসে যে কামরাটিতে তিনি বসতেন সেটি খুবই ছোট এবং অফিস হলের মধ্যে ছিল। সেখানে আপত্তিকর কিছু ঘটানো সম্ভবই নয়। আজ গাজালা বিস্তারিত ভাবে ফের অভিযোগ তুলেছেন, আকবরের অফিসঘরটি ছিল বিশাল এবং সম্পুর্ণ ভাবে শব্দ নিরোধক।
এখন প্রশ্ন হল, ভোটের মরসুমে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ এখনও আকবরের পাশে কেন? দলের মধ্যে অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, রাজনাথের সিংহের মতো নেতারা কিন্তু মনে করেন, ভোটের আগে আকবরকে রেখে দেওয়া মানে দলের ভাবমূর্তিতে ধাক্কা লাগা। আকবরের এমন কোনও গণভিত্তিও নেই যে তিনি সরে গেলে ক্ষতি হবে দলের। পাশাপাশি আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারও আকবরের বিরুদ্ধে এই সব অভিযোগকে সুনজরে দেখছে না। নাগপুরের বক্তব্য, এই ধরনের অভিযোগ ওঠা ব্যক্তির সঙ্গে সংস্রব রাখা মানে সঙ্ঘের আদর্শকেই চ্যালেঞ্জ জানানো। কিন্তু এখনও অবধি আকবরের কাছ থেকে পদত্যাগপত্রটি চাননি মোদী-শাহ। কারণ, রাজনৈতিক সূত্রের মতে, মোদীরা মনে করছেন, সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, এই বার্তাটি যাওয়া ঠিক নয়। আজ আকবরকে সরিয়ে দিলে অদূর ভবিষ্যতে আরও ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠবে এবং সেগুলিকেও সমধিক গুরুত্ব দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি হবে। রাফালের মতো বিষয় নিয়ে এই মুহূর্তে সরব বিরোধী দলগুলি। এক জায়গায় নতি স্বীকার করলে বৃহত্তর অস্বস্তির ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে বলেই মনে করছেন মোদীরা।
তবে বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, আজ না হোক কাল আকবরকে সরতেই হবে। কিন্তু মোদী তখনই তা করবেন, যখন তিনি নিজে তা মনে করবেন। বিজেপির এক শীর্ষ পর্যায়ের নেতার মন্তব্য, ‘‘এই মুহূর্তে আকবরকে সরিয়ে দিলে কার্যত মোদীকে স্বীকার করে নিতে হবে যে এই ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভায় শামিল করে তিনি ভুল করেছিলেন।’’ বরং এই মিটু ঝড় কমলে মন্ত্রিসভার রদবদলের মাধ্যমে নিঃশব্দে আকবরকে সরিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানাচ্ছে বিজেপির শীর্ষ সূত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy