Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

মরাঠা মিছিলে থমকে মুম্বই

এ দিন সকাল এগারোটায় বায়কুল্লার জিজামাতা উদ্যান থেকে শুরু হয় মিছিল। উদ্যোক্তা ‘সকল মরাঠা সমাজ’। সন্ধে পাঁচটার পরে মিছিল থামে দক্ষিণ মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে।

সংরক্ষণের দাবিতে মৌনী মিছিলে মরাঠিরা। ছবি: পিটিআই।

সংরক্ষণের দাবিতে মৌনী মিছিলে মরাঠিরা। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

দাবিটা সংরক্ষণের। তার জন্য কম করে ন’লক্ষ মানুষ হাঁটলেন মুম্বই শহরে। তবে নীরবে। আজ মরাঠাদের এই মৌনী মিছিলের জেরে থমকে রইল দেশের বাণিজ্যনগরী। কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় স্বাভাবিক জনজীবন। বাস ট্রেন, গাড়ি একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে দীর্ঘ ক্ষণ। জে জে উড়ালপুলে শুধু দেখা গিয়েছে গেরুয়া ফেট্টিতে লাখ লাখ মাথা। হাতে গেরুয়া-কালো পতাকা।

গত বছর মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদে এই দিনেই শুরু হয়েছিল ‘মূক মরাঠা মোর্চা’। তার পর রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আরও আরও ৫৭ বার এই ধরনের মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। আজ বর্ষপূর্তির স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে ঠাঁই হয়নি কোনও রাজনৈতিক দলের। উদ্যোক্তারা স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছিলেন, মরাঠি হিসেবে কেউ মিছিলে যোগ দিতেই পারেন, তবে নিজের দলের পতাকা ছাড়া আসতে হবে তাঁকে। মরাঠা ভূমিপুত্রদের হয়ে লড়াই করা রাজ ঠাকরের নবনির্মাণ সেনাকেও তাই মিছিলের ধারে কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বিরাজ চহ্বাণও আজ হেঁটেছেন কংগ্রেসের পতাকা ছাড়াই। গিয়েছিলেন মুম্বই বিজেপির প্রধান আশিস শেলার। তাঁর বিরুদ্ধেও স্লোগান ওঠে।

এ দিন সকাল এগারোটায় বায়কুল্লার জিজামাতা উদ্যান থেকে শুরু হয় মিছিল। উদ্যোক্তা ‘সকল মরাঠা সমাজ’। সন্ধে পাঁচটার পরে মিছিল থামে দক্ষিণ মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানে। রাজধানীতে অণ্ণা হজারের আন্দোলনের পরে নাগরিক সমাজের এত বড় আন্দোলন দেশের কোনও শহর দেখেছে কি না, তা মনে করতে পারছেন না অনেকেই।

আরও পড়ুন: যত সব বেয়াদবের দল, মন্ত্রীদের ধমক জেটলির

মহারাষ্ট্রে মরাঠাদের জন্য পৃথক সংরক্ষণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে বিভিন্ন সংগঠন। তাদের মূল দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আর সরকারি সংস্থায় চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হোক মরাঠাদের। সেই সঙ্গেই রয়েছে তফসিলি জাতি-উপজাতি আইন সংশোধন, কৃষক আত্মহত্যা রুখতে কৃষিঋণ মকুবের দাবিও। ২০১৬ সালে আহমেদনগর জেলায় এক নাবালিকার ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষীদের মৃত্যদণ্ডের দাবিও রেখেছেন আন্দোলনকারীরা।

এক দিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে ভারতের স্বাধীনতার লড়াইকে হাতিয়ার করে ‘অখণ্ড ভারত’-এর কথা বলছেন, ‘ভারত ছাড়োর’ স্মৃতি উস্কে দিচ্ছেন। ঠিক সেই সময় বিজেপি-শাসিত একটি রাজ্যে প্রান্তিক সত্তার দাবিতে এত বড় মাপের আন্দোলনে কার্যত অস্বস্তিতে নরেন্দ্র মোদীর দল। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সংরক্ষণের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন কংগ্রসের পৃথ্বিরাজ চহ্বাণ। কিন্তু আদালতের রায়ে ধাক্কা খেতে খেতে হয় তাঁকে। অনেক অঙ্ক কষে দেবেন্দ্র ফডণবীসকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসিয়েছেন মোদী-অমিত শাহ জুটি। সন্ধেবেলা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে স্মারকলিপিও জমা দেয় মরাঠা প্রতিনিধিদের একটি দল। ফডণবীস কিন্তু জানিয়েছেন, মরাঠাদের দাবি মানতে তিনি দায়বদ্ধ।

এর আগে গুজরাতই দেখেছে পতিদার আন্দোলন উত্তাপ। হরিয়ানাতেও জাঠেরা নিজেদের জন্য সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন। দেশ জুড়ে আর্থিক মন্দা, তথ্যপ্রযুক্তিতে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা থেকেই প্রান্তিক সত্তাগুলি এ ভাবে জেগে উঠছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE