মায়ানমারের মাটিতে জঙ্গি দমন অভিযান চালানোর পরে নাগাল্যান্ডের খাপলাং জঙ্গি গোষ্ঠীকে ফের নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
মণিপুর ও অরুণাচল প্রদেশে সেনার উপরে সাম্প্রতিক হামলার পরে মায়ানমারে উত্তর-পূর্বের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির ঘাঁটিতে আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। ৯ জুন সরে দেশে ঢুকে হামলা চালায় ভারতীয় সেনার বিশেষ বাহিনী। সেই হানার অন্যতম লক্ষ্য ছিল খাপলাং গোষ্ঠী। ২০০১ সালে ওই গোষ্ঠী অস্ত্র ছেড়ে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথে আসে। ফলে, তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের এপ্রিলে সংঘর্ষ বিরতি ভাঙে খাপলাং গোষ্ঠী। তার পর থেকেই তাদের ভারত-বিরোধী কার্যকলাপ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে ওই গোষ্ঠীকে ফের নিষিদ্ধ করা উচিত কিনা তা নিয়ে আজ একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তার পরেই ফের নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মায়ানমারে কাজ এখনও শেষ হয়নি বলেই মনে করছে কেন্দ্র। তাই আরও জঙ্গি-দমন অভিযানের সম্ভাবনা নিয়ে সে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করতে ১৭ জুন অজিত ডোভাল মায়ানমারে যাচ্ছেন বলে সরকারি সূত্রে খবর। সেই সঙ্গে দু’দেশের সীমান্ত রক্ষার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
৯ জুনের অভিযানে মায়ানমার সরকারের গোপন সম্মতির কথা আগেই বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু ওই অভিযানে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আঘাত হানার পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল হয়নি বলে মনে করছে দিল্লি। তাই ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও অভিযান চালাতে আগ্রহী ভারতীয় সেনা। তারই রূপরেখা তৈরি করতে মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট উ থ্যান সেন-সহ সে দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন ডোভাল। মায়ানমারে সেনা অভিযানের নীল নকশা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ডোভালের। পরেও এই বিষয়ে মূলত তাঁর উপরেই নির্ভর করতে চাইছে মোদী সরকার।
মায়ানমারের মাটিতে অভিযানের পাশাপাশি সে দেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত পাহারা দেওয়ার বিষয়টিও ফের খতিয়ে দেখতে চায় কেন্দ্র। এত দিন ওই সীমান্ত রক্ষার কাজ করত আসাম রাইফেলস। কিন্তু মোদী সরকারের শীর্ষ কর্তাদের মতে, পুরো সীমান্ত সঠিক ভাবে পাহারা দেওয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। ফলে, ওই সীমান্ত দিয়ে সহজেই জঙ্গিরা যাতায়াত করতে পারে। সীমান্ত রক্ষার জন্য নতুন ভাবে কী ব্যবস্থা করা যায় তা দেখতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, আসাম রাইফেলস, বিএসএফ, আইটিবিপি ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসারেরা রয়েছেন। এক মাসের মধ্যে ওই টাস্ক ফোর্স রিপোর্ট জমা দেবে।
মায়ানমারের অভিযানে রাজনৈতিক লাভের সুযোগ থাকলেও রাজ্যবর্ধন রাঠৌর বিজেপিকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছেন বলে মনে করছেন নরেন্দ্র মোদী-সহ শীর্ষ নেতৃত্ব। ৫৬ ইঞ্চি ছাতি না থাকলে মায়ানমারে এই ধরনের সেনা অভিযান চালানো যেত না বলে মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী রাঠৌর। এই ধরনের বুক চাপড়ানো উচিত নয় বলে মোদী সরকারকে কটাক্ষ করেছিলেন বিরোধীরা।
সরকারি সূত্রে খবর, রাঠৌরের ওই মন্তব্যে কিছুটা বিপাকে পড়েছে মায়ানমার সরকারও। কিছুদিন পরেই সে দেশে নির্বাচন হওয়ার কথা। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনার সীমান্ত পেরিয়ে অভিযান চালানোর দাবি মায়ানমার সরকারের পক্ষে যথেষ্ট অস্বস্তিকর। বিজেপি সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মোদী। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, এই মন্তব্য না করলেও চলত। মোদী-সহ শীর্ষ নেতাদের মতে, রাঠৌরের এই মন্তব্য ভবিষ্যতে মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাঁর আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। এই পরিস্থিতিতে আজ রাঠৌরকে ডেকে পাঠান
রাজনাথ সিংহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy