Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

সংসদ আর অচল রাখতে নারাজ মমতা

গত কয়েক বারের মতো সংসদের শীতকালীন অধিবেশন আর অচল করে রাখতে চান না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারের কাজের ব্যাপারে অনেক সমালোচনা, অনেক মতপার্থক্য রয়েছে আমাদের। কিন্তু সংসদ না-চললে সেই বিষয়গুলি নিয়ে আমাদের কণ্ঠস্বর শোনানো যাবে না। সংসদে সেগুলি নথিভুক্তও করা যাবে না।’’

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:০৯
Share: Save:

গত কয়েক বারের মতো সংসদের শীতকালীন অধিবেশন আর অচল করে রাখতে চান না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারের কাজের ব্যাপারে অনেক সমালোচনা, অনেক মতপার্থক্য রয়েছে আমাদের। কিন্তু সংসদ না-চললে সেই বিষয়গুলি নিয়ে আমাদের কণ্ঠস্বর শোনানো যাবে না। সংসদে সেগুলি নথিভুক্তও করা যাবে না।’’ সেই কারণে চলতি মাসের শেষ থেকে শুরু হতে চলা সংসদের অধিবেশনে গোড়া থেকেই বিক্ষোভের পথে না-হাঁটার জন্য তৃণমূল সাংসদদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বিহার ভোটে বিজেপি ধরাশায়ী হওয়ার পরে সংসদ ঘিরে বিরোধীদের পরিকল্পনায় বদল ঘটতে শুরু করেছে। এর আগের বেশ কয়েকটি অধিবেশন অচল করে রেখে সরকারকে ধাক্কা দিয়েছিল কংগ্রেস, বাম, তৃণমূল। কিন্তু এখন বিরোধীরা মনে করছেন, বিহারে হারের পরে নরেন্দ্র মোদীর কর্তৃত্বে ক্ষয় ধরেছে। বিভিন্ন প্রশ্নে তাঁকে কোণঠাসা করার এটাই সেরা সময়। সংসদ অচল করে রাখলে সেটা তো হবেই না, উল্টে সংস্কার করতে না-পারার দায় বিরোধীদের উপরে চাপানোর সুযোগ পেয়ে যাবে মোদীর সরকার।

বিহারের ফল প্রকাশের আগে কংগ্রেস খোলাখুলিই বলেছিল, অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে সরকারের অবস্থান বদল না-হলে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনও অচল করে রাখা হবে। কিন্তু গত সোমবার মত পাল্টে রাহুল গাঁধী তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, সংসদ পুরোপুরি অচল করে রাখা উচিত হবে না। বরং সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ নেওয়া উচিত দলের।

প্রায় একই পথে হাঁটতে চাইছেন মমতাও। এক দিকে তিনি যেমন বিভিন্ন প্রশ্নে সরকারের সমালোচনা করতে চান, তেমনই অন্য দিকে আলোচনা করতে চান গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিল সংসদে আটকে রয়েছে। সেগুলি নিয়ে আলোচনা না-হলে গোটা দেশেরই লোকসান। এই বিলগুলির মধ্যে অন্যতম পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) আইন। ইউপিএ আমলে ভাবা এই করব্যবস্থা এনডিএ আমলের দেড় বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও কার্যকর হয়নি। ইউপিএ আমলে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি জিএসটির কিছু ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। আর এখন আপত্তি জানাচ্ছে কংগ্রেসি রাজ্যগুলি। তৃণমূল অবশ্য এই করব্যবস্থার পক্ষে। গত লোকসভা ভোটে তাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে এই আইন সমর্থন করার কথা বলা আছে।

কিন্তু জমি অধিগ্রহণ বিল নিয়ে নিজের আপত্তিতে অনড় তৃণমূল নেত্রী। মমতার কথায়, ‘‘জমি বিলের যে খসড়া সরকার দিয়েছে, সেটা আমরা সমর্থন করতে পারছি না।’’ তৃণমূল সূত্র বলছে, জিএসটি নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হলেও সরকার যদি গায়ের জোরে জমি বিল পাশ করাতে চায়, তা হলে প্রতিবাদ করা হবে। মমতার মতে, প্রতিটি অধিবেশন অচল করে রাখতে হবে, এর কোনও মানে নেই। তবে সরকার যদি কোনও অগণতান্ত্রিক কাজ করে, তা হলে রণকৌশল বদলানো যেতেই পারে।

চলতি দফায় বিজেপি ক্ষমতায় আসা ইস্তক সংসদ অধিবেশনের সময় একের পর এক বিক্ষোভ দেখিয়েছে

তৃণমূল। কখনও সিবিআইয়ের অপব্যবহার নিয়ে, কখনও কালো টাকা দেশে ফেরানোর দাবিতে। বিক্ষোভের নানা অভিনব উপায়ও বের করেছিলেন তৃণমূল সাংসদরা। কখনও তাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন লাল ডায়েরি নিয়ে, কখনও কলসী কাঁখে, কখনও আবার কালো শাল গায়ে দিয়ে মুখে কালো ফেট্টি বেঁধে। তৃণমূলের পাশাপাশি অন্য বিরোধী দলগুলিও সংসদে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। লাগাতার স্লোগানে অচল করে দিয়েছে অধিবেশন। তা নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি।

প্রতিদিন লোকসভার অধিবেশন চলে গড়ে ছ’ঘণ্টা এবং রাজ্যসভার অধিবেশন চলে গড়ে পাঁচ ঘণ্টা। প্রতি মিনিট অধিবেশন চালাতে খরচ হয় প্রায় তিরিশ হাজার টাকা। সংসদ অচল হয়ে থাকার ফলে লোকসানের পরিমাণ অন্তত ৩৫ হাজার কোটি টাকা। শুধু টাকার অঙ্কেই নয়, বিভিন্ন জরুরি বিল আটকে যাওয়ার কারণেও লোকসানের পরিমাণ কিছু কম নয়।

কিন্তু মোদী সরকারের পায়ের তলার মাটি তখন যে হেতু শক্ত ছিল, তাই সংসদ অচল রেখেই তাদের মোকাবিলা করা সহজ বলে মনে করেছিল বিরোধী দলগুলি। এখন বিহার ভোটের পরে তাদের কৌশলে বদল এসেছে। এখন তারা সংসদ সচল রেখে দেশে অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ, কাশ্মীরের অশান্ত পরিবেশ, ডাল-তেলের মতো খাদ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, নেপালে কূটনৈতিক বিপর্যয়— ইত্যাদি নিয়ে সরকারের কৈফিয়ত তলব করতে চায়।

এই পরিস্থিতিতে বিজেপির রণকৌশল কী হবে?

এত দিন তাদের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যের, বিরোধীদের গণ্য না-করার যে অভিযোগ উঠেছিল, গত কয়েক দিনে তা দৃশ্যতই মুছে গিয়েছে। এখন তাঁরা বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে এগনোর কথাই বলছেন।

সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু আজ বলেন, ‘‘আমরা সব পক্ষের সমর্থন আদায় করেই সংসদ চালাতে চাই। সে জন্য সব দলের সঙ্গে আলোচনা করব।’’

জাতীয় রাজনীতিতে বিহার ভোটের প্রথম প্রভাব সম্ভবত সংসদের আসন্ন অধিবেশনেই পড়তে চলেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

mamata bandopadhay stall parliament
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE