মেজর নিতিন লিতুল গগৈ।
শ্রীনগরে উপনির্বাচনের সময়ে এক স্থানীয় বাসিন্দাকে জিপের সামনে বেঁধে ঘুরিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তিনি। গত কাল সেনা তাঁকে সম্মানিত করায় সেই বিতর্ক নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। এই অবস্থায় আজ সেই মেজর নিতিন লিতুল গগৈ দাবি করলেন, ওই বাসিন্দাকে জিপে বেঁধে ঘোরানোর ফলে রক্তপাত ছাড়াই বেশ কিছু জীবন রক্ষা করতে পেরেছেন তিনি।
মেজর স্তরের কোনও সেনা অফিসারের সংবাদমাধ্যমের সামনে এ ভাবে মুখ খোলার নজির কার্যত নেই। রাজনীতিকদের মতে, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে সেনার পাল্টা গোলাবর্ষণের পাশাপাশি মেজর গগৈকে ঘিরে জাতীয়তাবাদের হাওয়ায় আরও জোর দিতে চাইছে বিজেপি। ক্রিকেটার বীরেন্দ্র সহবাগের মতো অনেকেই গগৈকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব প্রাক্তন সেনা অফিসারদেরই একাংশ। তাঁদের মতে, ওই ঘটনা সেনার মূল্যবোধের বিরোধী। আজ মেজর গগৈ দাবি করেন, ফারুক আহমেদ দার নামের ওই ব্যক্তি পাথর ছোড়ায় উস্কানি দিচ্ছিলেন।
সে দিনের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে গগৈ জানান, সে দিন তিনি চার জওয়ানকে নিয়ে বীরওয়াহা এলাকার একটি বুথে পৌঁছতেই দার সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। জওয়ানরা তাঁকে ধরে ফেলেন।
গগৈয়ের কথায়, ‘‘তখন চার দিক থেকে পাথরবৃষ্টি হচ্ছে। হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। ওই লোকটাকে জিপের বনেটের সঙ্গে বেঁধে ফেলি। সঙ্গে সঙ্গে পাথর ছোড়া বন্ধ হয়ে যায়।’’ গগৈয়ের দাবি, সেনা অন্য ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে গেলে আরও রক্তপাত হতো।
গগৈয়ের এই ব্যাখ্যা নিয়ে গোড়া থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। বীরওয়াহার ছিল গ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমেদ দারের দাবি, তিনি ওই দিন ভোট দিতেই বেরিয়েছিলেন। প্রমাণ হিসেবে নিজের ভোটার স্লিপও দেখিয়েছেন।
গগৈকে সেনা সম্মানিত করায় ক্ষুব্ধ দার এ দিন বলেন, ‘‘নিজেদের তদন্তের জন্যও অপেক্ষা না করে সেনা ওই অফিসারকে সম্মানিত করল! বিচার পাব, এমন আশা করাই ভুল হয়েছিল। আমি কি জন্তু যে বেঁধে লোকজনকে দেখাতে হবে?’’
আরও পড়ুন:পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছি, বলছে সেনা
সেনাকর্তারা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, মেজর গগৈকে কাশ্মীরে সন্ত্রাস দমন অভিযানে দীর্ঘ সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ার জন্য ‘কমেন্ডেশন কার্ড’ দেওয়া হয়েছে। শ্রীনগর লোকসভা কেন্দ্রে ভোটের দিনের ঘটনা তার একটি অংশমাত্র। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, তারা আলাদা ভাবে এই ঘটনার তদন্ত করছে। সেই তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।
গগৈকে সম্মানিত করার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সিপিএম, জেডিইউয়ের মতো দল। ক্ষোভ জানিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। সকলেরই বক্তব্য, এর ফলে উপত্যকার মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে।
যদিও এ দিন তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভিন্ন সুর নিয়েছে কংগ্রেস। মেজরের সম্মান পাওয়ার পক্ষে আগেই সওয়াল করছিলেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ। আজ দলীয় মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালাও বলেন, ‘‘সেনার কোন অফিসারকে সম্মান দেওয়া হবে, তা সেনাই স্থির করতে পারে। অন্য কেউ নয়।’’
বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, রাহুল গাঁধীর নেতিবাচক রাজনীতিতে ফল হচ্ছে না। তাই কংগ্রেসও জাতীয়তাবাদের হাওয়া ধরতে চাইছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy