—ফাইল চিত্র।
গ্রেফতার রাহুল গাঁধী। কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল মন্দসৌরে যাওয়ার জন্য মধ্যপ্রদেশে ঢুকতেই গ্রেফতার করা হল কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে। গ্রেফতার করার পর পুলিশ তাঁকে কোনও অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়েছে বলে খবর। মঙ্গলবার মন্দসৌরের পিপলিয়ামন্ডিতে কৃষক বিক্ষোভ ভাঙতে গুলি চালায় পুলিশ। তাতে ৫ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়। তার পর থেকে শুধু মন্দসৌরে নয়, গোটা মধ্যপ্রদেশেই বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মৃত কৃষকদের পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে আজ মধ্যপ্রদেশে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। কিন্তু পুলিশ তাঁকে মন্দসৌর পৌঁছতে দেয়নি।
মন্দসৌর যাওয়ার জন্য রাহুল গাঁধী আজ সকালেই দিল্লি থেকে রওনা দেন। তিনি রাজস্থান হয়ে মধ্যপ্রদেশ ঢোকেন। পথে রাহুল গাঁধী টুইট করে জানান, তাঁর মন্দসৌর পৌঁছনো আটকাতে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ সরকার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাহুলের মধ্যপ্রদেশ ঢোকা অবশ্য পুলিশ আটকাতে পারেনি। মধ্যপ্রদেশ ঢোকার পর তিনি বাইকে চড়ে মন্দসৌরের দিকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু নিমচের কাছে রাস্তায় ব্যারিকেড করে রেখেছিল পুলিশ। সেখানেই রাহুলকে থামানো হয় এবং গ্রেফতার করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। রাহুলকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা পুলিশ জানায়নি।
মঙ্গলবার পুলিশ গুলি চালানোর পর বুধবার আরও উত্তপ্ত ছিল মন্দসৌর। আগুন লাগানো হয় একাধিক গাড়িতে। বৃহস্পতিবার অবশ্য এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণেই। ছবি: পিটিআই।
কংগ্রেস সহ-সভাপতি এ দিন গ্রেফতার হওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকার এবং মধ্যপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি কৃষকদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলাম। আমাকে যেতে দেওয়া হল না। কী কারণে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তা পুলিশ জানাচ্ছে না।’’ রাহুল আরও বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর সরকার ধনীদের জন্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকার ঋণ মকুব করে দিয়েছে। কিন্তু কৃষকদের ঋণ সরকার মকুব করবে না। কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন না, কৃষক ক্ষতিপূরণ পাবেন না, কৃষক শুধু গুলি খাবেন।’’
আরও পড়ুন: কৃষক-বিক্ষোভে উত্তাল মধ্যপ্রদেশ, পুলিশের গুলিতে হত ৫
মন্দসৌরের য়ে এলাকায় মঙ্গলবার গুলি চলেছিল, সেখানে আজ দুই কোম্পানি র্যাফ মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় কার্ফু জারি হয়েছে। রতলাম রেঞ্জের ডিআইজি নিজে মন্দসৌরের পিপলিয়ামন্ডিতে রয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি যাতে না হয়, ডিআইজি নিজেই তার তদারকি করছেন। মন্দসৌরের পরিস্থিতি আজ শান্ত বলেও মধ্যপ্রদেশ প্রশাসনের দাবি। গত কয়েক দিন সেখানে টানা কৃষক বিক্ষোভ চলছিল। ফসলের ন্যায্য মূল্য, ঋণ মকুব-সহ নানা দাবি নিয়ে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ। অনেকগুলি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর আসছিল। খবর আসছিল সরকারি কর্তাদের আক্রান্ত হওয়ার। বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ পুলিশ মঙ্গলবার গুলি চালায় বলে অভিযোগ। তাতেই ৫ কৃষকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর মন্দসৌরের জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে বদলি করে দিয়েছে মধ্যপ্রদেশ সরকার।
কৃষক বিক্ষোভে পুলিশের গুলির প্রতিবাদে বুধবার মধ্যপ্রদেশে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবারও রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তারা। ছবি: পিটিআই।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ অবশ্য দাবি করছে, পুলিশের গুলিতে কৃষকদের মৃত্যু হয়নি। কিছু সমাজবিরোধী মন্দসৌরে গোলমাল পাকিয়েছে বলে কয়েক জন বিজেপি নেতার দাবি। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পুলিশের গুলিচালনার কথা মেনে নিয়েছেন। পুলিশের গুলিতেই যে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যু হয়েছে, তাও তিনি স্বীকার করেছেন। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মধ্যপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই স্বীকারোক্তিতে খুশি নন। দলের জাতীয় মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্রের মন্তব্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ এ ধরনের মন্তব্য করে ঠিক করেননি। তদন্তের জন্য তাঁর অপেক্ষা করা উচিত ছিল।
মন্দসৌরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন অংশ কিন্তু এ দিন শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকারের বিরুদ্ধে কৃষক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। নিমচে পুলিশ রাহুল গাঁধীর পথ আটকেছে জেনেই সে এলাকায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ, ছিন্দওয়াড়ার কংগ্রেস সাংসদ কমলনাথ, প্রবীণ জেডিইউ নেতা শরদ যাদব। পুলিশ তাঁদেরও নিমচে পৌঁছতে দেয়নি বলে খবর। রাহুল গাঁধীর সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজস্থানের কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সচিন পাইলটকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy