ছবি: এপি।
আর কয়েক ঘণ্টা পরেই পরীক্ষায় বসবে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র।
সাত দফা ভোট-পর্বের প্রথম দফায় বৃহস্পতিবার কুড়িটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে ভোট হবে ৯১টি আসনে। এই তালিকায় আছে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ার— এই দুই জেলাও।
এ বারের ভোট অনেক দিক থেকেই অন্য রকম বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভোট-যুদ্ধের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত অনেকের বক্তব্য, এ বারের ভোটে সভা-সমাবেশে ভিড় হলেও তার চেহারা যেন অন্য রকম। এই ‘অন্য রকম’ চেহারাটার কথা মানছেন নেতারাও। দিল্লির এক নেতার কথায়, ‘‘এ বারের ভোট অনেকটা এ রকম— নরেন্দ্র মোদীকে ক্ষমতায় ফেরাতেই হবে, তেমন তাগিদ নেই। আবার তাঁকে যে কোনও মূল্যে উৎখাত করতেই হবে, তেমনও নয়।’’ আর এই আবহেই নিজেদের জনসমর্থন যাচাইয়ের ময়দানে নামছে দলগুলি। মোদী থেকে রাহুল গাঁধী, মায়া-মমতা থেকে চন্দ্রবাবু। কে কত বেশি আসন বের করে আনতে পারেন।
বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা এনডিএকে দৌড়ে এগিয়ে রাখলেও তাল ঠুকে কেউই বলতে পারছে না যে শাসক গোষ্ঠী ম্যাজিক সংখ্যা ছুঁতে পারবে। একা বিজেপির পক্ষে তো সম্ভবই নয়। তাদের ত্রাতা হিসেবে অবতীর্ণ হতে পারেন অন্ধ্রের জগন্মোহন রেড্ডি এবং তেলঙ্গানার কে চন্দ্রশেখর রাও। আবার বিজেপির একার পক্ষে সরকার গড়া কঠিন— এই সম্ভাবনা আশা জাগাচ্ছে বিরোধী শিবিরেও। আগামিকালের প্রথম দফায় ভোট হবে অন্ধ্র এবং তেলঙ্গানাতেও। অন্ধ্রের বিধানসভা ভোটও হবে একই সঙ্গে। দিল্লিতে বিজেপির হিসেব, এই দুই রাজ্য মিলিয়ে ৪২টি আসনের মধ্যে জগন এবং কেসিআর একযোগে মিলিয়ে ৩০টি পেলেই অন্য রাজ্যে আসন হারানোর ক্ষত অনেকটা মেরামত করতে পারবে বিজেপি।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের যে আটটি আসনে আগামিকাল ভোট, সেখানে গত বার সব ক’টিই পেয়েছিল বিজেপি। এ বারে মায়াবতী-অখিলেশ- অজিত চৌধরীর জোট বদলে দিয়েছে সমীকরণ। তার সঙ্গে রয়েছে রাহুলের আক্রমণাত্মক চাল, যা বিজেপির সমস্যা বাড়াচ্ছে।
বিজেপির এক নেতা বলছেন, ‘‘সহারনপুর, কৈরানা, মুজফ্ফরনগর, বিজনৌর, মেরঠ, বাগবত, গাজিয়াবাদের মতো কেন্দ্রে মেরুকরণ করে জাতপাতের সমীকরণ মুছে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। মায়াবতীর দলিত ভোটব্যাঙ্কে সিঁধ কাটারও চেষ্টা হয়। কিন্তু বুয়া-বাবুয়া আর অজিতের জাঠের সমীকরণ লড়াইটি জাতপাতে নিয়ে এসেছেন। ফলে লোকসান অবধারিত।’’ গোটা উত্তরপ্রদেশে ৩০-৪০টি আসন খোয়ানোর আশঙ্কায় বিজেপি। কংগ্রেসের এক নেতার দাবি, ‘‘এর মধ্যে দশটির মতো আসন পাব আমরা। আগামিকালের ভোটেও দুটি আসন আসতে পারে।’’ তবে সপা-বসপা শিবির বলছে, ‘‘কংগ্রেস সহারনপুর, বিজনৌরে ওজনদার সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়ে বিরোধী জোটের ভোট কাটবে, কিন্তু আসন বের করতে পারবে না।’’
উত্তর-পূর্বেও নজর রয়েছে বিজেপি-কংগ্রেসের। যেখানকার আটটি রাজ্যের মোট ২৫টির মধ্যে ১৪টিতে ভোট হবে কাল। গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেস ও বিজেপি উভয়েই তাদের বন্ধু দল নিয়ে এখানে ১১টি করে আসন পেয়েছিল। গত পাঁচ বছরে এখানে বিজেপি অনেকটা বাড়লেও কংগ্রেস সম্প্রতি কড়া টক্কর দিচ্ছে। কংগ্রেস স্বীকার না করলেও অসমে বদরুদ্দিন অজমল তাদেরই সমর্থন করছেন। মেঘালয়ে আগাথা সাংমার মোকাবিলায় কংগ্রেস প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমাকে আসরে নামিয়েছে। অরুণাচলে কিরেণ রিজিজুর বিপক্ষে কংগ্রেসের প্রার্থী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকি। মিজোরামেও বিজেপিকে হারাতে নির্দলকে সমর্থন করছে কংগ্রেস। ত্রিপুরায় বিজেপির ঘর ভাঙা প্রার্থীকেই দাঁড় করিয়েছেন রাহুল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
ওড়িশায় কাল যে চার কেন্দ্রে ভোট, সেটি মূলত বিজেডির দখলে। এর মধ্যে আর্থ-সামাজিক মাপকাঠিতে পিছিয়ে থাকা কালাহান্ডি যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে তেলুগু অধ্যুষিত কেন্দ্রও। বিজেপির নজর সেখানে। মহারাষ্ট্রে নিতিন গডকড়ীর নাগপুর-সহ বিদর্ভের এলাকাগুলিতে ভোট কাল। যেখানে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা প্রায় শিরোনামে আসে। নকশাল অধ্যুষিত গড়চিরৌলিতে ভোট, যেখানে আজই মাওবাদী হামলা হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ের বস্তারেও ভোট কাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy