Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

‘জোশ’ দেখাচ্ছেন তেজস্বী, আতঙ্কে গৌরীর পরিবার

গৌরীর ছোট বোন কবিতা লঙ্কেশ থাকেন প্রায় আট কিলোমিটার দূরে। দিদির সঙ্গে অনেক মিল, চেহারায় এবং ভাবনায়। খুনের ঘটনার দেড় বছর পরেও সন্ত্রস্ত।

গৌরীর বোন কবিতা লঙ্কেশ। —নিজস্ব চিত্র।

গৌরীর বোন কবিতা লঙ্কেশ। —নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত বসু
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৪৫
Share: Save:

এখানে গাছের পাতা ঝরলেও যেন বুক কেঁপে ওঠে!

ভরদুপুরে বেঙ্গালুরুর রাজেশ্বরী নগরের এমন এক সুনসান এলাকায় একটি বাংলো দেখিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ভি কৌশিক বললেন, “ঠিক এই গেটের সামনে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছিল গৌরী লঙ্কেশকে।”

চারপাশে লোক বলতে আমরা দু’জন। অনেকটা কয়েক দশক আগের সল্টলেকের মতো। দুপুরেই এখানের এই চেহারা! ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় যখন খুনিরা গৌরীর উপর বুলেট-স্প্রে করে চলে যায়, তখন কার্যত এলাকার কেউই জানতেই পারেননি। কৌশিক বলেন, “এখানে এমন শব্দ শুনে একটু অবাক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, গণেশ পুজোয় কেউ বাজি ফাটিয়েছে। একটু পরে টিভি থেকে খুনের কথা জানতে পারলাম। এখনও সন্ধ্যার পর ভয়ে আর এ দিকে আসি না।”

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

গৌরীর ছোট বোন কবিতা লঙ্কেশ থাকেন প্রায় আট কিলোমিটার দূরে। দিদির সঙ্গে অনেক মিল, চেহারায় এবং ভাবনায়। খুনের ঘটনার দেড় বছর পরেও সন্ত্রস্ত। খুনের প্রধান অভিযুক্ত পরশুরাম ওয়াগমোরে ধরা পড়েছে। চক্রান্তের অভিযোগে ধরা পড়ছে আরও ১৫ জন। তা হলে আতঙ্ক কেন?

“আতঙ্ক তো শুধু আমার নয়, আমাদের মতো সকলের। কারণ, এ বারের লোকসভা ভোটে বেঙ্গালুরু দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে এমন এক জনকে প্রার্থী করা হয়েছে, যিনি ওই সময়ে খোলাখুলি এই কাজকে সমর্থন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন।” গৌরীর সহকর্মী ভাসু এইচভি-ও বলেন, “ধরা পড়ার পরে পরশুরাম পুলিশকে জানিয়েছে, ধর্মরক্ষার জন্যই তাকে এই খুন করতে বলা হয়েছিল। এরা সবাই কট্টর হিন্দুত্ববাদী সনাতন সংস্থার সদস্য। এম কলবুর্গীকেও এরাই খুন করেছিল। তাদের সমর্থনকারীরা ভোটে দাঁড়ানো মানে আমাদের অবস্থাটা বুঝতে পারছেন! ”

যাঁর দিকে কবিতাদের অভিযোগের তির, তিনি বিজেপি প্রার্থী তেজস্বী সূর্য। ঝকঝকে চেহারার ২৮ বছরের যুবক পেশায় আইনজীবী। কিন্তু এই কট্টরবাদী যুবককে যে দক্ষিণ বেঙ্গালুরু থেকে প্রার্থী করা হবে, তা এলাকার কোনও বিজেপি কর্মী ভাবেননি। এখানে বিজেপি সাংসদ ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্তকুমার। গত বছর তাঁর মৃত্যুর পর দলীয় স্তরে ঠিক হয়, স্ত্রী তেজস্বিনীকে এই কেন্দ্রের প্রার্থী করা হবে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি বিএস ইয়েদুরাপ্পা তাঁর নাম দিল্লিতে পাঠিয়েও দেন। বিষয়টি এতটাই স্বাভাবিক ছিল যে তেজস্বিনীকে নিয়ে কার্যত প্রচারে নেমেও পড়েন কর্মীরা। কিন্তু তালিকা বার হতেই দেখা যায়, তেজস্বিনীর জায়গায় ঢুকে পড়েছে তেজস্বী সূর্যের নাম। তখন থেকেই ফের সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কবিতা, ভাসু-রা।

তবে বিজেপির একাংশ যে তেজস্বীকে একেবারেই পছন্দ করছেন না, তা আড়ালে তাঁদের সঙ্গে কথা বললেই বোঝা যায়। এক বিজেপি নেতার কথায়, এ রকম কট্টর লোক উত্তরপ্রদেশ-বিহারে চলতে পারে, কিন্তু কর্নাটকের সংস্কৃতির সঙ্গে একদমই মানায় না। তাই শহুরে শিক্ষিত মানুষ তাঁকে কতটা নেবেন, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, গত ২৮ বছর ধরে এই কেন্দ্র বিজেপির দখলে। কিন্তু এ বারই প্রথম কংগ্রেস প্রার্থী বিকে হরিপ্রসাদ জেডি(এস)-এর সঙ্গে জোট বেঁধে জবরদস্ত প্রচার চালাচ্ছেন। তাই তেজস্বিনীকে দাঁড় করালে এই কেন্দ্র ধরে রাখতে বিজেপির অসুবিধা হত না। তাঁদের আশঙ্কা, ভাবমূর্তির জন্য শেষ পর্যন্ত তেজস্বী সূর্য দলের বোঝা না হয়ে দাঁড়ান।

তেজস্বী তা মানছেন না। বলছেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টের জন্যে প্রধানমন্ত্রী যদি আমাকে দলের বোঝা মনে করতেন, তা হলে তিনি আমাকে প্রার্থী করতেন না। উনি আমায় ভরসা করছেন, এটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।” প্রচারের সময় সেই শক্তির প্রকাশও অবশ্য দেখছেন দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর ভোটারেরা। মাইক হাতে নিয়েই তিনি বলছেন, “হাউ ইজ দ্য জোশ!” সঙ্গে থাকা নওজওয়ানেরা সমস্বরে বলছেন, “হাই, স্যর!”

নিজের বাড়িতে বসে কবিতা বলছিলেন, “দিদি খুন হওয়ার কিছু দিন আগে বলেছিল, সামনের নির্বাচনে রামমন্দির কাজ না করলে, এটাই করা হবে। কেমন মিলে গেল দেখুন!”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE