রাহুল গাঁধী। ফাইল চিত্র।
রাহুল গাঁধী দেশের ৫ কোটি পরিবারকে ফি মাসে ৬ হাজার টাকা দেবেন প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেই প্রশ্ন ওঠে, এই বিপুল খরচ কি দেশের রাজকোষ থেকে বহন করা সম্ভব?
আজ কংগ্রেস নেতা তথা ইউপিএ-সরকারের অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম দাবি করলেন, ‘‘ন্যায় বা ন্যূনতম আয় যোজনায় খরচ হবে দেশের জিডিপি-র ১.৮ শতাংশ।’’ যে খরচ বহন করা সম্ভব বলেই চিদম্বরমের দাবি।
৫ কোটি পরিবারকে মাসে ৬ হাজার টাকা, অর্থাৎ বছরে ৭২ হাজার টাকা করে দিলে প্রয়োজন ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এই ‘ন্যায়’ প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করার আগে রঘুরাম রাজনের মতো অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন রাহুল। রঘুরামেরও যুক্তি, ন্যায় প্রকল্পের রূপায়ণ সম্ভব। কিন্তু কী ভাবে, সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
এক সাক্ষাৎকারে রাজন বলেন, ‘‘নিচু স্তরে যাতে উন্নয়ন পৌঁছয়, তার জন্য কোনও প্রকল্পের কাঠামো তৈরির নানা রাস্তা রয়েছে। এর ফলে মানুষ নিজের মতো আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। কিন্তু প্রশ্ন হল— চালু প্রকল্পের সঙ্গে এই প্রকল্প যোগ হবে, না কি সব কিছু ঢেলে সাজা হবে?’’ চিদম্বরমের যুক্তি, ‘‘এখন অর্থনীতির বহর প্রায় ২০০ লক্ষ কোটি টাকা। মূল্যবৃদ্ধি হিসেব না করলে তা বছরে ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে। ফলে ২০১৪-এ জিডিপি ৪০০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছবে। কেন্দ্র রাজ্য মিলিয়ে সরকারের মোট রাজস্ব আয় ৬০ লক্ষ কোটি টাকা। তা-ও বছরে ১৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। এই প্রকল্প ধাপে ধাপে চালু হবে। কিন্তু কোনও সময়ই মোট খরচ জিডিপি-র ২ শতাংশ ছাপিয়ে যাবে না।’’ প্রশ্ন হল, ২০১৪-তেও মাসে ৬ হাজার টাকা পেলে কি কোনও লাভ হবে?
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এখনই নানা দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পে ৩.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হয়। তার সঙ্গে আরও ৩.৬০ লক্ষ কোটি টাকা যোগ হলে খরচ প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছবে। কংগ্রেস জানিয়েছে, কোনও প্রকল্প বন্ধ হবে না। রাজনের মতে, কোনও ভাবেই এই ৭ লক্ষ কোটি টাকা খরচ সম্ভব নয়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসি-র অধ্যাপক এ আর ভানুমূর্তি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘সকলের জন্য আবাসনের মতো বহু গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্প ২০২২-এ শেষ হয়ে যাবে। ফলে নতুন খরচের জায়গাও তৈরি হবে। দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পে দরিদ্রের সংখ্যা কমলে খরচও কমতে থাকবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর যুক্তি, খাদ্য সুরক্ষা আইন ও ন্যূনতম আয় প্রকল্প একই সঙ্গে চালানোর কোনও অর্থ হয় না।
যোজনা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য, অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ সেনের মতে, রাহুল গাঁধীর ন্যায় বা মোদী সরকারের পিএম-কিষাণ, কোনওটিই খুব ভেবেচিন্তে করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। পিএম-কিষাণ প্রকল্পে বছরে চাষিদের ৬ হাজার টাকা দেওয়ার প্রকল্পে আদৌ চাষিদের হাতে কতটা টাকা পৌঁছবে, সেই প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ভোটের মরসুমে সবাই নগদ হস্তান্তর নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। ইউপিএ-সরকারের আমলেও কিছু বাছাই করা মানুষের হাতে ন্যূনতম আয় তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সেখান থেকে সরে আসি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, এটা বোকামি। শুধু নগদ টাকা দিয়ে গরিবি দূর করা যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy