জমি অধ্যাদেশ নিয়ে সরকারকে পিছু হঠানোর আনন্দে সাত দিন পরে দিল্লিতে বিজয় সভা ডাকা হয়েছে! তার আগে আজ থেকেই তাওয়া গরম করতে শুরু করে দিলেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী! লক্ষ্য আরও বড় আকারে সরকার-বিরোধী লড়াইয়ে নামা। কংগ্রেস সদর দফতরে পাঁচ রাজ্যের কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে আজ ফের তাঁদের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার পরামর্শ দিলেন মা-ছেলে।
‘সংসদ ও সংস্কার রুখে দেওয়ার’ জন্য ইদানিং খোলাখুলিই কংগ্রেস সভানেত্রীর সমালোচনা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনকী কংগ্রেসকে ‘হাওয়ালাবাজ’ বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী! পাল্টা আক্রমণে নেমে সরকার-বিরোধী আন্দোলনের মাটি দখল করতে মরিয়া কংগ্রেস। গত বছর লোকসভা ভোটে লজ্জাজনক হারের পর এক বছর আগে ঠিক এই সময়ে কার্যত গর্তে ঢুকে ছিল শতাব্দী প্রাচীন দলটি। আর সেই কংগ্রেসেরই চাপে সম্প্রতি জমি অধ্যাদেশ নিয়ে পিছু হঠতে হয়েছে মোদী সরকারকে! বাম, তৃণমূল-সহ অন্য কিছু বিরোধী দল অধ্যাদেশে আপত্তি করলেও মূলত সনিয়া-রাহুলই এ ব্যাপারে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সংশয়াতীত ভাবেই লোকসভা ভোটের পর এটা কংগ্রেসের প্রথম বড় সাফল্য। মা-ছেলে চাইছেন দলকে বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড় করাতে এই সাফল্যকেই পুঁজি করতে। তারই প্রথম কিস্তি হিসেবে আজ আকবর রোডে কংগ্রেস সদর দফতরে জমি অধ্যাদেশ রুখে দেওয়ার সাফল্য উদ্যাপন করে যুব কংগ্রেস। কংগ্রেস সভানেত্রী ও সহ-সভাপতিকে ‘ধন্যবাদ জানানোর’ জন্য যুব কংগ্রেসের নেতৃত্বে উপস্থিত হন সংলগ্ন রাজ্যগুলির কয়েক হাজার কৃষক। তাঁদের সঙ্গে দেখা করে রাহুল বলেন, ‘‘কথা দিয়েছিলাম, এ ব্যাপারে সরকারকে পিছু হঠিয়েই দম নেব। তবে এটা শুধু কংগ্রেসের সাফল্য নয়, কৃষকদেরও সাফল্য।’’ আর প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘মোদীজি গণতন্ত্রের কথা বলেন, অথচ কৃষক শ্রমিকের কথা ওঁর মনে পড়ে না!’’
কংগ্রেস সদর দফতরে ওই অনুষ্ঠানের পরই আগামী রবিবারের কৃষক সভার আয়োজন নিয়ে আজ একটি কমিটি গড়ে দেন কংগ্রেস সভানেত্রী। পাঁচ মাস আগে কেন্দ্রের আনা অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে দিল্লির রামলীলা ময়দানে প্রথম বড় সভা করেছিলেন রাহুল। বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে সেই ময়দানেই রবিবার ফের বিজয় সভা ডাকা হয়েছে। যা আয়োজনের মূল দায়িত্ব এ কে অ্যান্টনি, দিগ্বিজয় সিংহ, ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা ও শীলা দীক্ষিতকে আজ দিয়েছেন সনিয়া।
প্রসঙ্গত, জমি অধ্যাদেশ রুখে দেওয়া থেকে শক্তি সংগ্রহ করে এখন পণ্য পরিষেবা কর বিলের পথেও কাঁটা ছড়িয়েছে কংগ্রেস। পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, বিলে তিন দফা সংশোধন না করলে তাঁরা তা পাশ করতে দেবেন না। তাই জিএসটি পাশ করাতে বিশেষ অধিবেশন ডাকার পরিকল্পনা করেও পিছোতে হয়েছে সরকারকে। এই অবস্থায় কংগ্রেসের নেতিবাচক রাজনীতি নিয়ে দল ও সরকারকে প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজেও তা করছেন। যদিও গতকাল এবং আজ রাহুল বুঝিয়ে দিয়েছেন, দল এতে মোটেই বিচলিত নয়। বরং প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে রাহুল বলেন, ‘‘সংসদ আরএসএসের শাখা নয়। সংসদে আলোচনা হয়। কিন্তু জমি বিল বা পণ্য পরিষেবা কর নিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করছে না সরকার। বরং মাথার ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে।’’ কংগ্রেসের এক নেতার বক্তব্য, প্রথমত জিএসটি নিয়ে বিজেপি-র অবস্থান গোড়া থেকেই দুর্বল। কারণ, ওঁরাই পাঁচ বছর ধরে বিলের বিরোধিতা করছিল! দ্বিতীয়ত, সরকারকে সফল হতে দিয়ে কংগ্রেসের কোনও লাভ নেই। সংস্কার আটকে গিয়ে সরকার ল্যাজেগোবরে হলে কংগ্রেসেরই রাজনৈতিক লাভ। ওই নেতার কথায়, ‘‘এই রাজনীতিটাই অতীতে করেছে বিজেপি। এ বার ফিরিয়ে দেওয়ার পালা কংগ্রেসের!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy