রাজনীতির উঠোনে হঠাৎই ঢুকে পড়েছে সাপ! যা কি না জড়িয়ে রয়েছে চন্দন গাছের গায়ে! ভোটের তিন মাস আগে সেই ‘চন্দন গাছ’ আর ‘সাপ’ নিয়েই সরগরম বিহার।
সব কিছুর মূলে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের একটি টুইট। কাল তিনি রহিম দাসের একটি দোঁহা টুইট করেন। ‘‘যো রহিম উত্তম প্রকৃতি, কা করি সকত কুসঙ্গ/ চন্দন বিষ ব্যাপত নহি, লিপটে রহত ভুজঙ্গ।’’ অর্থাৎ খারাপ মানুষ ভাল মানুষের কোনও ক্ষতি করতে পারে না। যেমন সাপ চন্দন গাছে জড়িয়ে থাকে, কিন্তু তাতে চন্দন গাছের কোনও ক্ষতি হয় না।
প্রশ্ন উঠেছে, সাপটি কে? এ দিন দুপুরে নীতীশ নিজেই বলেন, ‘‘বিজেপিকেই সাপের সঙ্গে তুলনা করে ওই মন্তব্য লেখা হয়েছে।’’
যদিও তা মানতে নারাজ অনেকেই। তাঁদের মতে, লালু প্রসাদকে কটাক্ষ করেই ওই টুইট করেছেন নীতীশ। নীতীশের সঙ্গে বোঝাপড়ার পরে লালু বাঁকা হেসে মন্তব্য করেছিলেন, সাম্প্রদায়িকতাকে রুখতে তিনি বিষ খেতেও রাজি! সমালোচকরা বলছেন, লালুর বিষের পাল্টা হিসেবেই এ দিন হিসেব কষে সাপ খেলেছেন নীতীশ।
কাল টুইটারে নানা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন নীতীশ। মুম্বইয়ের বাসিন্দা সুনীল চন্দক নীতীশের কাছে জানতে চান— ধরা যাক লালুজির সঙ্গে নির্বাচনে লড়াই করে আপনি জিতলেন, কিন্তু আসনের দিক থেকে লালু এগিয়ে রয়েছেন, তা হলে কী ভাবে আপনি উন্নয়নের কাজ করবেন?
উত্তরে নীতীশ লেখেন, ‘‘আমার একমাত্র লক্ষ্য বিহারের উন্নয়ন।’’ এর পরেই হিন্দিতে রহিম দাসের ওই দোঁহাটি লেখেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।
ইতিমধ্যেই লালু-নীতীশের জোটকে কেন্দ্র করে বিহারে ফের ‘জঙ্গলরাজ’ কায়েম হওয়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। দলের সভাপতি অমিত শাহ থেকে রাজ্য শাখার সহ-সভাপতি সঞ্জয় ময়ূখ— সকলেই লালুর আমল তুলে ধরে নীতীশকে কটাক্ষ করছেন। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ নীতীশ। নির্বাচন কাছে আসতেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে চাপের খেলা শুরু হয়েছে লালু ও নীতীশের দলের মধ্যে। টুইটারে নিজেকে চন্দন গাছ আর লালুকে সাপ হিসেবে বর্ণনা করে সেই চাপের খেলাতেই এগিয়ে থাকতে চাইছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী।
নীতীশ-লালুর এই দর কষাকষি ইতিমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। সরকারি ভাবে জোট ঘোষণার আগেই শুধুমাত্র নিজের ছবি দেওয়া হোর্ডিং দিয়ে নীতীশ প্রচার শুরু করেছেন। তা নিয়ে আরজেডি-র সহ-সভাপতি রঘুবংশপ্রসাদ যাদব ক্ষোভ প্রকাশ করে নীতীশের সমালোচনাও করেন। এর পর দুই নেতাকে এক সঙ্গে সভা করতে দেখা যায়নি। লালুর জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে ফুলের তোড়া নিয়ে নীতীশ তাঁর বাড়ি গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু কয়েক মিনিট থেকেই চলে আসেন। তার পরেও বরফ গলেছে বলে খবর পাওয়া যায়নি।
এ হেন লালু-নীতীশকে এক মঞ্চে আনতে বিস্তর পরিশ্রম করছেন জেডিইউ সভাপতি শরদ যাদব। দিন দুয়েক আগে নীতীশের সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকও করেছেন তিনি। সেই বৈঠক সেরে রাতে একান্তে লালুর সঙ্গেও তিনি আলোচনা করেন। জেডিইউ সূত্রের খবর, লালুর সঙ্গে সভা করার বিষয়ে নীতীশকে কিছুটা হলেও নরম করতে পেরেছেন শরদ। কিন্তু তার পরেও লালুকে নিয়ে নীতীশ যে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছেন, তা বুঝতে পারছেন শরদও।
আজ লালুর অবস্থানেও থেকেছেন শরদ। ২৬ জুলাই অনশন-ধর্নাতেও তাঁর থাকার কথা। কিন্তু পরের দিন বিহার বন্ধ ডাকা নিয়ে কিছুটা ক্ষুব্ধ নীতীশও। তাঁর মতে, বিহার বন্ধে সরকারি সমর্থন থাকলে ভোটে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে।
এই পরিস্থিতিতে নীতীশের ‘ভুজঙ্গ’ টুইট গোটা ঘটনায় অন্য মাত্রা যোগ করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy