Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

রাজনীতিতে পা লালু-পরবর্তী প্রজন্মের

লালু-রাবড়ীর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী মিসা নন, তেজস্বী-তেজপ্রতাপই। আজ বিজেপি-বিরোধী মহাজোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর এই সার কথাটি স্বীকার করে নিলেন আরজেডি নেতৃত্ব।

তেজস্বী ও তেজপ্রতাপ

তেজস্বী ও তেজপ্রতাপ

নিজস্ব সংবাদদাতা
পটনা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:৪৫
Share: Save:

লালু-রাবড়ীর রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী মিসা নন, তেজস্বী-তেজপ্রতাপই। আজ বিজেপি-বিরোধী মহাজোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর এই সার কথাটি স্বীকার করে নিলেন আরজেডি নেতৃত্ব।

আজ জেডিইউ সদর দফতরে, জোটের তরফে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাঁর এক পাশে আরজেডি রাজ্য সভাপতি রামচন্দ্র পূর্বে ও অন্য পাশে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অশোক চৌধুরিকে বসিয়ে ২৪২টি আসনের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন। সেখানেই সামনে উঠে আসে লালুর দুই ছেলে তেজস্বী ও তেজপ্রতাপের নাম। এবং তাত্পর্যপূর্ণ ভাবেই ছিল না লালু-রাবড়ীর বড় মেয়ে মিসা ভারতীর নাম। যদিও গত লোকসভা নির্বাচনে আরজেডি-র তালিকায় সব থেকে বড় চমক ছিলেন মিসা। এবং তাঁর মনোনয়ন ঘিরে উদ্ভূত বিতর্কে লালুকে ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন তাঁর দীর্ঘ দিনের ভ্রাতৃসম-সহযোগী তথা আরজেডির ‘সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড’ রামকৃপাল যাদব। পরে রামকৃপালের অভিমান সামলাতে দিল্লিতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যান মিসা। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও দেখা পাননি তিনি।

সেই মিসার নাম কেন বিধানসভার প্রার্থী তালিকায় নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এ বার। লোকসভায় হারের পরে তাঁকে বিধানসভায় দাঁড় করাতে পারেন লালু, এমন জল্পনা যে ছিল না, তা নয়। এখন তালিকা দেখার পরে দলের প্রবীণ নেতার কথায়, ‘‘বংশরক্ষা ছেলেরাই করে। রাজনৈতিক উত্তরাধিকারও শেষ পর্যন্ত ছেলেদের উপরেই বর্তায়।’’

তেজস্বী ও তেজপ্রতাপ দু’জনেই এই প্রথম নির্বাচন লড়বেন। বড় ছেলে তেজপ্রতাপ লড়বেন বৈশালী জেলার মহুয়া আসন থেকে। ছোট ছেলে তেজস্বী লড়বেন পার্শ্ববর্তী রাঘোপুর থেকে। রাঘোপুরও যাদব প্রভাবিত বৈশালী
জেলারই অন্তর্গত।

গত বিধানসভায় জেডিইউ প্রার্থী রবীন্দ্র রায় প্রায় ১৫ হাজার ভোটে আরজেডি প্রার্থীকে হারিয়ে মহুয়া কেন্দ্র থেকে জেতেন। সেই জেতা কেন্দ্রই লালু প্রসাদের ছেলের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন ‘চাচাজি’ নীতীশ কুমার। লালুর ছোট ছেলে তেজস্বীকে দেওয়া হয়েছে রাঘোপুর কেন্দ্র। যাদব দুর্গ রাঘোপুরেরও দখল নিয়েছিল জেডিইউ। ২০১০-এ খোদ লালু-পত্নী রাবড়ী দেবীকে হারিয়ে এই আসনে জেতেন সতীশ কুমার। মর্যাদার লড়াইয়ে জেতার জন্য লালু তাঁর ছোট ছেলেকে এই কেন্দ্রেই দাঁড় করিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। জেতা আসন হাতছাড়া হচ্ছে বুঝতে পেরে দিন কয়েক আগে সতীশ কুমার দিল্লি গিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। লালু-পুত্রের বিরুদ্ধে এই কেন্দ্রে বিজেপির ঘোড়া তিনিই। শুধু দুই ছেলেই নয়, নিজের দুই ঘনিষ্ঠ নেতা, দলের রাজ্য সভাপতি রামচন্দ্র পূর্বে ও পরিষদীয় দলনেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকিকেও নির্বাচনে নামিয়েছেন লালু। রামচন্দ্র লড়বেন পরিহার ও সিদ্দিকি লড়বেন আলিনগর থেকে। এ ছাড়া দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ভোলা যাদবকেও টিকিট দেওয়া হয়েছে বাহাদুরপুর কেন্দ্রে।

বিহারের জাতপাতের কথা মাথায় রেখেই যে প্রার্থী বাছাই হয়েছে, তালিকার দিকে তাকালে সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। এ দিন ২৪২টি আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে নীতীশ কুমারের জোট। ৩৯টি আসনে প্রার্থী করা হয়েছে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, ভূমিহার ও রাজপুতদের। তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য ছাড়া হয়েছে ৪০টি আসন। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রার্থীরা ৩৩টি আসনে লড়বেন। এবং পিছড়ে বর্গের (ওবিসি) প্রার্থীরা লড়বেন ১৩০টি আসনে। মহাজোটের মোট আসনের ১০ শতাংশ অর্থাত্ ২৫টি আসনে মহিলা প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এক জেডিইউ নেতা অবশ্য জানান, স্রেফ জাতপাতের রাজনীতি নয়, জাতি-ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রার্থী বাছাই হয়েছে।

নীতীশ কুমার ভোটে না লড়লেও তাঁর মন্ত্রিসভার প্রায় হাফ-ডজন সদস্য প্রার্থী হয়েছেন। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রামধনী সিংহের টিকিট কাটা গিয়েছে। ক্ষুব্ধ রামধনী আজই সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝির কেন্দ্র মকদুমপুর গিয়েছে আরজেডির ভাগে। সেখানে দল প্রার্থী করেছে সুবেদার দাসকে। এর পরেই ইমামগঞ্জ থেকেও নির্বাচনে লড়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন জিতনরাম মাঁঝি। ওই কেন্দ্রে এখনও এনডিএ-র তরফে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। সেখানেও জবরদস্ত জেডিইউ প্রার্থী, বিধানসভার অধ্যক্ষ উদয়নারায়ণ চৌধুরি। বিজেপির দিনারা কেন্দ্রের ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী তথা সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ রাজেন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে লড়বেন জেডিইউয়ের বর্তমান বিধায়ক জয়কুমার সিংহ। কংগ্রেসের সদানন্দ সিংহ ও অখিলেশপ্রসাদ সিংহও ভোটে লড়ছেন। লড়ছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অশোক চৌধুরিও।

অন্য বিষয়গুলি:

Lalu electoral debut bihar police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE