কঠোর মন্তব্যে এনএসসিএন (খাপলাং) জঙ্গিদের খেপিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার জেরে সেনা জওয়ানদের পরে ওই জঙ্গিদের নিশানায় এ বার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু।
খাপলাং জঙ্গিরা সম্প্রতি মণিপুরে সেনা কনভয়ে হামলা চালিয়ে ২০ জন জওয়ানকে হত্যা করেছে। তার পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিজিজুকে প্রধান ‘টার্গেট’ করেছে তারা। উত্তর-পূর্বের বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিরা তাঁকে হত্যার ছক কষেছে বলে ১৭ জুন এক বিশেষ বার্তায় সতর্ক করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রিজিজুর জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য,রিজিজু শুধু কেন্দ্রের মন্ত্রী নন, অরুণাচলের বাসিন্দা ও অরুণাচল পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সাংসদ। বছর পঁয়তাল্লিশের রিজিজু উত্তর-পূর্বে বিজেপির মুখ বলেও পরিচিত। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি-র বক্তব্য, মণিপুরে ভারতীয় সেনাকে বড় ধাক্কা দেওয়া গিয়েছে বলে মনে করছে জঙ্গিরা। তাদের ধারণা, এ বার ‘অপারেশন রিজিজু’ সফল হলে ভারত সরকার তথা কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে পাল্টা আঘাত করা যাবে। অন্তত তেমনই খবর আইবি-র অফিসারদের।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বার্তায় বলা হয়েছে, এনএসসিএন (খাপলাং)-এর বিরুদ্ধে রিজিজু গত মাসে যে-কঠোর বিবৃতি দিয়েছেন, তার জবাব দিতেই তাঁকে নিশানা করেছে জঙ্গিরা। ৮ মে রিজিজু মন্তব্য করেন, ভারতীয় নাগাদের স্বার্থরক্ষায় খাপলাং গোষ্ঠীর কোনও ভূমিকা নেই। তিনি বলেন, ‘‘মায়ানমার সরকারের সঙ্গে সংঘর্ষবিরতি চুক্তিতে থাকা খাপলাং গোষ্ঠী নাগা-সমস্যার সমাধান নিয়ে আদৌ চিন্তিত নয়। তারা মায়ানমারে ঘাঁটি গেড়ে ভারতের জমিতে নাশকতা ও তোলাবাজি চালিয়ে যাওয়া একটি সংগঠন মাত্র।’’ এই মন্তব্যের পরে রিজিজুর উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে খাপলাং বাহিনী।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, রিজিজুর ওই মন্তব্যের সপ্তাহ তিনেকের মধ্যেই, ২৫ মে মায়ানমারে ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ওয়েস্ট সাউথ ইস্ট এশিয়া’ নামে জঙ্গিদের সদ্যগঠিত কেন্দ্রীয় সংগঠনের বৈঠক হয়। আইবি-র একটি সূত্রের খবর, গোপন ডেরায় ওই বৈঠকে কেএলও-র চেয়ারম্যান তথা জলপাইগুড়ির কুমারগ্রাম এলাকার বাসিন্দা তমির দাস ওরফে জীবন সিংহও ছিলেন। আলফার পরেশ বরুয়া গোষ্ঠী, খাপলাং বাহিনী, কেএলও এবং এনডিএফবি (সংবিজিত) গোষ্ঠীকে নিয়েই উত্তর-পূর্বে জঙ্গিদের ওই কেন্দ্রীয় সংগঠনটি তৈরি হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের খবর, একটি পড়শি দেশের মদতে এবং পরেশ বরুয়ার পরিকল্পনায় একই ছাতার তলায় একজোট হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রধান চারটি বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন।
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর উপরে হামলা, স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করা, আইইডি তৈরি, গেরিলা যুদ্ধে ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং সীমান্ত পেরিয়ে যাতায়াতের বন্দোবস্ত— এই সব বিষয়ে ওই চারটি সংগঠনই পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবে বলে মায়ানমারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং ওই বৈঠকেরই ১০ দিন পরে, ৪ জুন মণিপুরের চান্ডেলে সেনা কনভয়ে হামলা চালিয়ে ২০ জনকে হত্যা করা হয়।
আইবি-র দাবি, মায়ানমারের ওই বৈঠকেই জঙ্গিরা স্থির করেছে, রিজিজুকে হত্যা করা হবে ও তাঁর রাজ্য অরুণাচলে, বিশেষত মায়ানমার সীমান্তের লাগোয়া ছাংলাং জেলায় চালিয়ে যাওয়া হবে নাশকতা। এক আইবি-কর্তা বলেন, ‘‘জঙ্গিরা বিভিন্ন ধরনের হামলা চালানোর ছক কষেছে। কখনও সেনা ও আধাসেনার বাহিনী, আবার কখনও ব্যক্তিবিশেষকে নিশানা করবে তারা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy