জিয়ন-যান: সাত মাসের শিশু মিন্হাকে কাপড়ে মুড়ে তুলেছিলেন অ্যালুমিনিয়ামের গামলায়। তার পরে সেটা ঠেলতে ঠেলতে কোমর-জল ভেঙে এগোচ্ছিলেন বাবা-মা। ১৬ অগস্টের বৃষ্টিতে কেরলের মেপ্রাল গ্রামে প্রতি মূহূর্তে জল বেড়ে যাচ্ছিল। মাত্র তিন কিলোগ্রাম ওজনের শিশুকে ওই ভাবে নিয়ে যেতে যেতে ভয়ে কাঁটা হয়েছিলেন বাবা-মা। প্রায় এক কিলোমিটার পথ ওই ভাবে পেরনোর পরে দেখেন, ক্যানোয় যাচ্ছেন দুই স্থানীয় বাসিন্দা। তাঁরাই শিশু-সহ দম্পতিকে ক্যানোয় তুলে পৌঁছে দেন তিরুভালায় আত্মীয়ের বাড়ি। ছবি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে
তামিলনাড়ুর একটি জেলার পুলিশ সুপার বুধবারই পালাক্কাডের সাংসদ এম বি রাজেশের হাতে তুলে দিয়েছেন এক কোটি টাকার ত্রাণ সামগ্রী। উপসাগরীয় নানা দেশ তো বটেই, জাপানের সরকারও জেলা ধরে ধরে পরিস্থিতির খোঁজ নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। অগণিত সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিনিয়ত সহমর্মিতার বার্তা এবং সহায়তা এসে পৌঁছচ্ছে। কিন্তু গোটা দেশে একমাত্র যে রাজ্যে তাঁর দলেরই সরকার এবং তারা বিপর্যয়ের সঙ্গে অমানুষিক লড়াই করছে, সেখানকার ‘ভূমিপুত্রে’র সাড়াশব্দ কই?
পালাক্কা়ড জেলার বর্ধিষ্ণু গ্রাম এলাপ্পুল্লিতে তাঁর আদিবাড়ি। তিনি নিজে অবশ্য সেখানে গিয়েছেন কালেভদ্রে। পড়াশোনা চেন্নাই থেকেই শুরু। তবু তাঁর আত্মীয়-পরিজন ওই এলাপ্পুল্লির ঠিকানাতেই থাকেন। এ বারের জলস্রোতে ডুবেছে এলাপ্পুল্লিও। বৃষ্টি ধরার পরে এখন অবশ্য পরিস্থিতি উন্নতির পথে। ভরতাপ্পুঝা এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত চার নদীর জলই শান্ত হয়েছে। মলমপুঝা বাঁধের জলস্তরও নিয়ন্ত্রণে। যদিও পালাক্কাড শহরেই এখনও হাজারখানেক মানুষ ঘর হারিয়ে শিবিরে আছেন। অথচ এতগুলো দিন গড়িয়ে গেলেও পালাক্কাডের ‘ভূমিপুত্র’ প্রকাশ কারাট কেরলের বন্যা নিয়ে রা কাড়ছেন না! লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর সময়ে যে ভাবে একটি শব্দও খরচ না করে মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন, এখনও তা-ই। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেরলের কেউ কেউ সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, ‘‘আপনার কাছে অনেক প্রত্যাশা। কেরলের জন্য কিছু আবেদন করুন। নইলে অন্তত এই মেসেজটাই শহর করুন।’’ তাতেও কোনও লাভ হয়নি।
দুর্যোগের পরে কেরলের ত্রাণ শিবিরে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। রাজ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কী ভয়াল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কী ধরনের সাহায্য প্রত্যাশিত, তা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছেন তিনি। আবার দিল্লির গোল মার্কেটের রাস্তায় ইয়েচুরিই বাক্স হাতে গণ-সাহায্য তুলতে নেমেছেন। একটু পরে হলেও দিল্লির পথে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন প্রকাশ-জায়া এবং পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট। কিন্তু প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সকালে গোল মার্কেটের দলীয় দফতরে থাকলেও বিকেলে গণ-দরবারে বেরোননি। ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আগরতলার দোকানে দোকানে ঢুকে কেরলের জন্য টাকা তুলেছেন। কলকাতায় হাত লাগিয়েছেন বিমান বসু। বাংলার সিপিএম ২৫ অগস্ট বিশেষ ত্রাণ সংগ্রহ দিবসের ডাক দিয়েছে। কিন্তু কারাট?
আরও পড়ুন: বন্যায় বিদেশি সাহায্যে ‘না’ কেন্দ্রের, কেরল বলল টাকা পাব কোথায়
সাংসদ রাজেশ বলছিলেন, ‘‘জল নামছে, এলাকা যথাসাধ্য পরিষ্কার করেছি। কিন্তু আবার বৃষ্টি হলে কী ভাবে মোকাবিলা হবে, সেটাই মাথায় রাখতে হচ্ছে।’’ মলমপুঝা বাঁধ যে এলাকায়, সেখানকার বিধায়ক এবং প্রবীণ নেতা ভি এস অচ্যুতানন্দন যোগাযোগ রাখছেন ইয়েচুরির সঙ্গে। এই বয়সে তিনিও ত্রাণ তুলতে নামতে চান বলে জানিয়েছেন। কিন্তু কারাট? তিনি কি তবে অন্তরালেই চলে গেলেন? দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের জবাব, ‘‘আমাদের কেউ তো দলের ঊর্ধ্বে নন। দল যা করছে, তাতে সকলেই সামিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy