২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রয়াত দলিত নেতা কাঁসিরামকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মান দেওয়ার কথা ভাবছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। মায়াবতীকে কাছে টানতে তাঁর রাজনৈতিক গুরু তথা প্রয়াত দলিত নেতাকে মরণোত্তর এই সম্মান দেওয়ার ভাবনাটি কিছু বিজেপি নেতার। দলের সূত্র বলছে, মায়াবতী বেশ কয়েক বছর ধরেই সরকারের কাছে এই প্রস্তাব রেখেছেন। মায়ার ঘনিষ্ঠ অনুগামী তথা রাজ্যসভার নেতা সতীশ মিশ্র বলেন, ‘‘মনমোহন সিংহ যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখনও আমরা এই দাবি তুলেছিলাম। তখন এই প্রস্তাব মানা হয়নি। এখন সরকার যদি এই দাবি মেনে নেয়, আমরা স্বাগত জানাব।’’
উত্তরপ্রদেশে রাহুল গাঁধী ও অখিলেশ যাদব জোট গড়ে তাতে মায়াবতীকে তাতে সামিল করেছেন। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী এখনও পর্যন্ত বিজেপি বিরোধী এই জোটের শরিক হিসেবেই আছেন। এই জোটের কাছেই গত কয়েকটি উপনির্বাচনে গো-হারা হেরেছে বিজেপি। স্বাভাবিক ভাবেই লোকসভার আগে দেশের বৃহত্তম রাজ্যে বিপর্যয় ঠেকাতে এই জোট ভাঙতে সক্রিয় হয়েছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের সভাপতি অমিত শাহের কৌশল অনুসারে বিজেপির এক নেতা সতীশ মিশ্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছেন। প্রথমত, কাঁসিরামকে মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন’ সম্মান দিয়ে মায়াবতীর সমর্থন আদায় করা। দ্বিতীয়ত, মায়াবতীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে চলতে থাকা এনফোর্সমেন্ট দফতর ও সিবিআইয়ের সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। মায়াবতীর সবচেয়ে কাছের এই ভাই দিল্লিতে থাকেন। মালচা মার্গে তাঁর বাড়িতে কিছু দিন আগে তল্লাশি চালায় কেন্দ্রীয় সংস্থা। খোদ মায়ার বিরুদ্ধেও তাজ করিডর মামলা বা হিসাব-বহির্ভূত আয়ের তদন্ত আছে। সেগুলি নিয়েও বিজেপি দরকষাকষির করতে চায়। বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক আজ দিল্লিতে নবনির্মিত অম্বেডকর ভবনে করাটা এই অঙ্কে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
অবশ্য দলিত তাস কতটা খেলা উচিত, তা নিয়ে বিজেপি এবং আরএসএসের মধ্যে বিতর্ক আছে। কাঁসিরামকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়ার প্রস্তাবে আরএসএসের মত হল, খুব বেশি দলিত তাস খেলতে গিয়ে বিজেপি তার চিরাচরিত উচ্চবর্ণের হিন্দু ভোট না হারায়। কংগ্রেস যে ভাবে ব্রাহ্মণ এবং হিন্দু তাস খেলছে, তাতে বিজেপির এই দলিত-প্রেম দলের অন্দরেই সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে। উত্তরপ্রদেশের বহু বিজেপি নেতা, যেমন রাজনাথ সিংহ বা যোগী আদিত্যনাথ কিন্তু খুব বেশি দলিত রাজনীতির পক্ষে নন।
২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই কাঁসিরামকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কেন্দ্রকে। সরকারি ভাবে সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন একটি বিচারকমণ্ডলী। তারা নামের তালিকা দেবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তিনি সেটি দেবেন প্রধানমন্ত্রীকে। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এখন বিদেশে। তিনি দেশে ফিরলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ অবশ্য মরিয়া যাতে মায়াবতী জোট থেকে বেরিয়ে না যান। কিন্তু মায়া দরকষাকষি করার জন্য অনেক বেশি আসন চাইছেন। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের কমল নাথ চাইছেন, যে কোনও মূল্যে মায়াবতীর সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে। কারণ বিজেপি মায়াকে পাল্টা প্রস্তাব দিয়েছে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা ভোটে বিএসপি স্বাধীন ভাবে প্রার্থী দিক। তাতে মায়ার দলের আসন সংখ্যা বাড়বে। নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুসারে জাতীয় দলের মর্যাদাও পাবে বিএসপি। এমনকি কংগ্রেসের জোটকে ঠেকাতে প্রয়োজনে মায়াবতীকে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে মেনেও নিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে বিজেপি।
কমল নাথ এবং আহমেদ পটেলের মাধ্যমে রাহুল নিজে মায়াবতীকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন, যাতে বিজেপির মায়াজালে দলিত নেত্রী জড়িয়ে না পড়েন। অখিলেশও মায়ার ওপর চাপ রাখছেন। সব মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশের দলিত নেত্রীকে নিয়ে দড়ি টানাটানি এখন চরমে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy