রাফাল চুক্তির ফাইল নিয়ে নিজের বক্তব্য থেকে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল।
মাত্র দু’দিন আগে বলেছিলেন, ‘চুরি’। আজ বললেন, চুরি নয়, ফোটোকপি! রাফাল চুক্তির ফাইল নিয়ে নিজের বক্তব্য থেকে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেলেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল।
রাফাল রায় পুনর্বিবেচনা মামলার শুনানিতে গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল দাবি করেছিলেন, চুরি হয়ে গিয়েছে রাফাল চুক্তির ফাইল। সেই চুরির তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মতো সুরক্ষিত জায়গা থেকে কী ভাবে ফাইল চুরি হল, খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী কেন তা নিয়ে কিছু জানলেন না— সেই প্রশ্ন তুলে সরকারকে চেপে ধরেছিল বিরোধীরা। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী অভিযোগ করেছিলেন, দুর্নীতি ধামাচাপা দিতেই চুরির তত্ত্ব খাড়া করছে কেন্দ্র।
আজ সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বেণুগোপাল বলেছেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে রাফালের নথি আদৌ চুরি হয়নি। তিনি সুপ্রিম কোর্টে বলতে চেয়েছিলেন যে, মামলাকারীরা তাঁদের আবেদনের সঙ্গে মূল নথির ফোটোকপি ব্যবহার করেছিলেন। সেগুলিই সরকারের ‘গোপন’ নথি। বেণুগোপালের কথায়, ‘‘শুনলাম বিরোধীরা বলছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে ফাইল চুরি হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টে জানানো হয়েছিল। এটা পুরোপুরি ভুল। ফাইল চুরি হয়েছে— এই কথাটা সম্পূর্ণ ভুল।’’
রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্তের আর্জি সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করার পরে সেই রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন অরুণ শৌরি, যশবন্ত সিনহা এবং প্রশান্ত ভূষণ। বেণুগোপালের দাবি, ওই আর্জি পেশ করার সময়ে মূল রাফাল চুক্তির তিনটি নথির ফোটোকপি তাঁরা জমা দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: অযোধ্যা মামলার নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতার পথেই হাঁটল সুপ্রিম কোর্ট, গঠিত হল তিন সদস্যের প্যানেল
তবে একান্তে সরকারি কর্তারাও মানছেন, ‘চুরি’ শব্দটা ব্যবহার না-করলেও পারতেন বেণুগোপাল। তাঁর আজকের দাবির পরে কংগ্রেসের কটাক্ষ— যে সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ফাইল চুরি এবং ফোটোকপির তফাত জানেন না, তারাই কি না ‘দেশ সুরক্ষিত রয়েছে’ বলে দাবি করে! মোদীকে ‘বকবক করা চৌকিদার’ বলে খোঁচা দিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা টুইটারে লেখেন, ‘‘মোদীজি, কাল কোন মিথ্যেটা বলবেন?’’
গত বুধবার কেন্দ্র অভিযোগ তোলে, চুরি যাওয়া গোপন ফাইল প্রকাশ করে সরকারি গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন করেছে ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্র। সেই প্রসঙ্গ তুলে ওড়িশার জয়পুরের সভায় রাহুল গাঁধী আজ অভিযোগ করেন, মোদী যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নেগোশিয়েটিং টিমকে উপেক্ষা করে নতুন রাফাল চুক্তি তৈরি করেছিলেন, ইংরেজি সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনেই তা স্পষ্ট। ‘নিখোঁজ’ রাফাল নথির তদন্ত মনোহর পর্রীকরকে দিয়ে শুরু হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। ওড়িশার সুনাবেড়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হ্যাল’-এর কারখানায় মিগ এবং সুখোই যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি হয়েছে বলে জানিয়ে রাহুল বলেন, ‘‘দেশের প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ওড়িশার। কিন্তু মোদী বায়ুসেনার টাকা চুরি করে অনিল অম্বানীকে দিয়েছেন। হ্যালের থেকে বরাত কেড়ে হাজার হাজার যুবককে চাকরি থেকে বঞ্চিতও করেছেন।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ ‘মুখ খুলেছেন’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মালা সীতারামনও। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল ‘ফোটোকপি’ নিয়ে যা যা বলেছেন, তা হুবহু ‘কপি-পেস্ট’ করে টুইটারে তুলে দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy