পাতিয়ালা হাউস কোর্টে ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার। ছবি: এএফপি।
কানহাইয়া কুমারকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠাল দিল্লির পাতিয়ালা হাউজ কোর্ট। আইনজীবীদের একাংশের তৈরি করা তীব্র বিশৃঙ্খলায় আদালতে ঢোকার সময়েই এ দিন আক্রান্ত হয়েছেন জেএনইউ ছাত্র সংসদের অধ্যক্ষ কানহাইয়া। তাঁকে দু’বার আক্রমণ করে বিজেপি সমর্থক ওই আইনজীবীরা। নির্বিচারে চলে কিল, চর, ঘুঁসি। গুরুতর জখম হয়েছেন ওই ছাত্র নেতা। কানহাইয়া কুমার আক্রমণকারীকে চিহ্নিত করেছেন। ‘‘আমার জীবন বিপন্ন’’ অভিযোগ কানহাইয়ার। অভিযুক্ত আইনজীবীরাও অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, কানহাইয়াকে চড় মেরে তাঁরা গর্ব বোধ করছেন। তা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি।
পাতিয়ালা হাউজ কোর্ট কানহাইয়াকে জেল হেফাজতে পাঠিয়ে এ দিন জানিয়েছে, মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ৩ মার্চ। এ দিন কানহাইয়াকে এজলাসে ঢোকানোর আগেই দু’দল আইনজীবীর মধ্যে মারামারি বাধে। আক্রান্ত হন সাংবাদিকরা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা আদালত চত্বরকে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা দিয়েছেন। গোটা ঘটনায় দর্শকের ভূমিকা পালন করে দিল্লি পুলিশ এবং সিআরপিএফ। গত সোমবারও একই রকম ভাবে সাংবাদিক এবং জেএনইউ-এর ছাত্রছাত্রীদের পেটানোর অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি সমর্থক আইনজীবীদের বিরুদ্ধে।
কানহাইয়া কুমারকে মারধরের কথা জানার পর সুপ্রিম কোর্টের তরফে আইনজীবীদের একটা দলকে পাতিয়ালা হাউস কোর্টে পাঠানো হয়। সেই দলে কপিল সিব্বলও ছিলেন। এ দিনের ঘটনার পরে বর্ষীয়ান আইনজীবী সোলি সোরাবজি বলেন, ‘‘আমি সত্যিই লজ্জিত। যাঁরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁরা আইনজীবী হতে পারেন না, গুন্ডা।’’
আরও খবর
• সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পাতিয়ালা হাউস কোর্টে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা
প্রথম দফায় তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার পরে গত সোমবার কানহাইয়া কুমারকে আদালতে তোলা হয়। সেই খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বেধড়ক মার খেয়েছিলেন সাংবাদিকেরা। পেটানো হয় জেএনইউ-এর একাধিক ছাত্রছাত্রীকেও। অভিযুক্ত বিজেপি সমর্থক আইনজীবী এবং দলীয় সমর্থকদের বিরুদ্ধে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে এক মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলার শুনানি ছিল এ দিন। সেই সময়ে সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি পুলিশকে পাতিয়ালা হাউস কোর্ট চত্বরে নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি আদালত চত্বরে সাংবাদিক এবং ধৃত ছাত্রের পরিবার-বন্ধুবান্ধবের প্রবেশের ক্ষেত্রেও নির্দেশিকা জারি করে। সেই মতো ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু, কোনও কিছুকেই আমল না দিয়ে ফের রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় দিল্লির ওই আদালতের বাইরের চত্বর।
এ দিন দুপুরে বিজেপি সমর্থক একদল আইনজীবীর হাতে আক্রান্ত হন সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিনিধি। তাঁকে যখন মারধর করা হচ্ছে, সেই সময়ে অন্য একদল সাংবাদিক তাঁকে ঠেকাতে আসেন। সেই সময় দু’পক্ষের মধ্যে বচসা বেধে যায়। পরে তা গড়ায় মারধরে। আর এই দু’দলের মাঝে পড়ে যান একাধিক সাংবাদিক এবং জেএইউ-এর ছাত্রছাত্রীরা। এক পক্ষের গলায় ছিল ‘ভারত মাতা কি জয়’ স্লোগান, অন্য পক্ষ নিজেদের দেশদ্রোহী বলে চিত্কার করতে থাকে। দু’পক্ষের মারামারিতে জায়গাটা তত ক্ষণে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। এ দিনও আইনজীবী বিক্রম চৌহানকে দেখা যায় স্বমহিমাকে। সোমবারও তিনি সাংবাদিক নিগ্রহের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন। বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সেই ছবি প্রকাশের পরেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি তাঁর বিরুদ্ধে। এ দিনও সাংবাদিক পেটাতে পেটাতে তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলায় সংবাদ মাধ্যম সবাইকে ‘হিরো’ বানিয়ে দিল। আর আমরা তার প্রতিবাদ করায় গুন্ডা হয়ে গেলাম!’’
জলকামান, বিশাল বাহিনী নিয়ে এ দিন আদালতের বাইরে হাজির ছিল দিল্লি পুলিশ এবং সিআরপিএফ। কিন্তু, ঘটনার সময় তাদের ভূমিকা ছিল কার্যত দর্শকের। আগের দিনও একই অভিযোগ উঠেছিল তাদের বিরুদ্ধে। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কী ভাবে পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকল, উঠছে সেই প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy