Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

মোদী রুখতে ভাবনায় ’৭৭, একযাত্রায় লালুরা

মন্ত্রটা ১৯৭৭ সালের। ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধে সফল প্রয়োগ করেছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। ২০১৪-য় সেই মন্ত্রেই নরেন্দ্র মোদীকে রোখার ছক কষছেন জয়প্রকাশের শিষ্য লালু প্রসাদ-নীতীশ কুমারেরা। জরুরি অবস্থার পর ১৯৭৭-এর নির্বাচনে জয়প্রকাশের ডাকে সাড়া দিয়ে জনসঙ্ঘ, ভারতীয় লোক দল ও কংগ্রেসের কিছু বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী একজোট হয়ে গড়ে তোলে জনতা পার্টি।

নয়া লক্ষ্যে পুরনো পরিবার। মুলায়ম সিংহ, এইচ ডি দেবগৌড়া, শরদ যাদব, লালু প্রসাদ এবং নীতীশ কুমার। নয়াদিল্লির বৈঠকে।  ছবি: পিটিআই

নয়া লক্ষ্যে পুরনো পরিবার। মুলায়ম সিংহ, এইচ ডি দেবগৌড়া, শরদ যাদব, লালু প্রসাদ এবং নীতীশ কুমার। নয়াদিল্লির বৈঠকে। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদাদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫০
Share: Save:

মন্ত্রটা ১৯৭৭ সালের। ইন্দিরা গাঁধীর বিরুদ্ধে সফল প্রয়োগ করেছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ। ২০১৪-য় সেই মন্ত্রেই নরেন্দ্র মোদীকে রোখার ছক কষছেন জয়প্রকাশের শিষ্য লালু প্রসাদ-নীতীশ কুমারেরা।

জরুরি অবস্থার পর ১৯৭৭-এর নির্বাচনে জয়প্রকাশের ডাকে সাড়া দিয়ে জনসঙ্ঘ, ভারতীয় লোক দল ও কংগ্রেসের কিছু বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী একজোট হয়ে গড়ে তোলে জনতা পার্টি। পাশে ছিল বাবু জগজীবন রামের কংগ্রেস ফর ডেমোক্রেসি (যারা পরে মিশে যায় জনতা পার্টিতে), সিপিএম, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, ডিএমকে, অকালি দল। সেই ভোটে ইন্দিরা হারেন, মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সেই প্রথম কেন্দ্রে আসে অ-কংগ্রেসি সরকার।

চলে আসুন বর্তমানে। মাঝের ৩৭ বছরে সেই জনতা পরিবার অসংখ্য টুকরো হয়েছে। তার কোনওটির নেতা লালু, কোনওটির নীতীশ, কোনওটির দেবগৌড়া। আজ দিল্লিতে মুলায়ম সিংহের বাসভবনে এক জরুরি বৈঠকে একত্র হলেন তাঁরা। ছিলেন আইএনএলডি-র নেতারাও। বিজেপির বাড়বাড়ন্ত রুখতে সপা, আরজেডি, জেডিইউ, জেডিএসের মতো দলগুলিকে একসঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে একটি অভিন্ন বৃহত্তর দল গড়ার ব্যাপারে আলোচনা করলেন জনতা পরিবারের এই প্রাক্তন সতীর্থরা। পরে নীতীশ বলেন, “ইতিমধ্যেই বিহারে বিজেপিকে রুখতে হাত মিলিয়েছে আরজেডি ও জেডিইউ। পাশাপাশি, মুলায়ম ও দেবগৌড়ার দলকে সঙ্গে নিয়ে একটি বৃহত্তর সমাজবাদী পরিবার গঠনই আমাদের লক্ষ্য।”

একদা রামমনোহর লোহিয়ার সমাজবাদী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ‘লোহিয়া কে লোগ’ তকমা পেয়েছিলেন লালু-নীতীশ-মুলায়ম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আজ প্রেক্ষাপট বদলে গিয়েছে। লালুরা ফের সমাজবাদী ছাতার তলায় একজোট হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করলেন মূলত অস্তিত্ব-সংকটের মোকাবিলায়। কারণ, কেন্দ্রে ক্ষমতা দখলের পর

এ বার পর রাজ্য দখলেও ছুটতে শুরু করেছে মোদীর বিজয় রথ। মাঝে উপনির্বাচনে তা কিছুটা ধাক্কা খেলেও মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিধানসভায় বিজেপি একক বৃহত্তম দল হিসেবেই উঠে এসেছে। আগামী বছর বিহারে এবং তার পর ২০১৭-য় উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। গো-বলয়ের ওই দুই রাজ্যেও ক্ষমতা দখল করতে মরিয়া বিজেপি। তাই এখন থেকেই তাদের রুখতে চান লালু-নীতীশ। সম্প্রতি বিহারের উপনির্বাচনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ে বিজেপিকে পিছনে ফেলেছিলেন তাঁরা। আজকের পর স্পষ্ট, ঝাড়খণ্ডের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনেও লালু-নীতীশ জোট হচ্ছে।

অভিন্ন বৃহত্তর দল গড়া অবশ্য সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে তাই সমাজবাদী জোট হিসেবেই তাঁরা কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে সরব হবেন বলে জানিয়েছেন নীতীশ। লোকসভায় এই দলগুলির মোট সদস্য সংখ্যা ১৫ এবং রাজ্যসভায় ২৫। ফলে জোট বেঁধেও সংসদে বিজেপিকে কতটা বেকায়দায় ফেলা যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। তবে আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীদের জয় আটকাতে সর্বসম্মত প্রার্থী দিতে চলেছে সমাজবাদী দলগুলি।

এর পাশাপাশি, আজকের বৈঠকে স্থির হয়েছে, বিজেপিকে রুখতে যদি আগামী দিনে কংগ্রেস বা সিপিএমের মতো দলগুলি এগিয়ে আসতে চায়, তা হলে তাদের স্বাগত জানানো হবে। দরজা খোলা থাকছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা মায়াবতীর জন্যও। নীতীশ যদিও বলেছেন, “এখনই অন্য দলগুলি নিয়ে কোনও কথা হয়নি। আগে সমাজবাদী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ দলগুলি এক হোক। তার পরে অন্য দলের কথা ভাবা হবে।” তবে মমতা এক বার লোকসভা ভোটের আগে ফেডারেল ফ্রন্ট গড়তে গিয়ে হাত পুড়িয়েছেন। তাই তিনি নীতীশদের, বিশেষ করে বামেদের সঙ্গে এক মঞ্চে আসবেন কি না, সেটা বড় প্রশ্ন।

সিপিএম বরাবরই কেন্দ্রে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের অন্যতম কারিগর হিসেবে কাজ করে এসেছে। সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে কংগ্রেসের চেয়ে বিজেপিকেই বড় শত্রু বলে মেনে এসেছে তারা। দলের একাংশ এখনও মনে করে, বিজেপির সঙ্গে লড়তে গেলে সবক’টি অ-বিজেপি দলকে এক ছাতার তলায় আনা উচিত। কিন্তু সম্প্রতি পার্টি কংগ্রেসে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তৃতীয় ফ্রন্ট তো নয়ই, মুলায়ম বা নীতীশের দলের সঙ্গেও কোনও ভাবেই নির্বাচনী আঁতাঁত করা হবে না। তার চেয়ে সিপিএম ওই দলগুলিকে ইস্যুভিত্তিক সমর্থন দিতে পারে। নীতীশরা অবশ্য এখনই এই জোটকে তৃতীয় ফ্রন্ট বলতে নারাজ। আপাতত সমাজবাদী জোট গঠনই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য।

কেউ কেউ এই বৃহত্তর সমাজবাদী দল গঠনের উদ্যোগকে ১৯৮৮ সালে ভি পি সিংহের নেতৃত্বে জনতা দল গঠনের সঙ্গেও তুলনা করছেন। সাবেক জনতা পার্টির বিভিন্ন শাখা, লোক দল, জন মোর্চা মিশিয়ে জনতা দল গড়েছিলেন ভিপি। ১৯৮৯-এর ভোটে কংগ্রেসের থেকে কম আসন পাওয়া সত্ত্বেও একই সঙ্গে বাম ও বিজেপির সমর্থন নিয়ে সংখ্যালঘু সরকার গড়েছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকে সেই জনতা দলও ভেঙে যায়। লালু-নীতীশ-মুলায়মরা একে একে নিজেদের দল গড়েন। ক্ষমতা দখল করেন বিহার, উত্তরপ্রদেশে। কিন্তু মোদীর উত্থানে এখন তাঁদের সেই রাজ্যপাট ধরে রাখাও দায় হয়ে উঠেছে।

অগত্যা তাই স্মরণ করছেন ‘পুরানো সেই দিনের কথা।’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE