Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

অন্তরা খুনের পিছনে কি পরিচিত যুবকই

অফিস থেকে ঘরে ফিরে রোজ কলকাতার বাড়িতে ফোন করত মেয়ে। শুক্রবার যথারীতি ঘড়ির দিকে তাকিয়েই বসেছিলেন বাবা-মা। রাত সোয়া ৯টা বেজে গেল দেখে নিজেই মেয়ের মোবাইলে ফোন করলেন বাবা। ফোনটি ধরল এক অচেনা পুরুষকণ্ঠ।

অন্তরার বাড়িতে। ছবি: অরুণ লোধ

অন্তরার বাড়িতে। ছবি: অরুণ লোধ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৫
Share: Save:

অফিস থেকে ঘরে ফিরে রোজ কলকাতার বাড়িতে ফোন করত মেয়ে। শুক্রবার যথারীতি ঘড়ির দিকে তাকিয়েই বসেছিলেন বাবা-মা।

রাত সোয়া ৯টা বেজে গেল দেখে নিজেই মেয়ের মোবাইলে ফোন করলেন বাবা। ফোনটি ধরল এক অচেনা পুরুষকণ্ঠ। নিজেকে ডাক্তার বলে পরিচয় দিয়ে সেই কণ্ঠ জানাল, ফোনের মালিক হাসপাতালে, আইসিইউ-তে ভর্তি।

পুণেতে কর্মরত তরুণী অন্তরা দাসের উপরে হামলার খবর এই ভাবেই প্রথম পৌঁছয় সরশুনার বাড়িতে। শুক্রবার গভীর রাতে আর একটা ফোন আসে পুণে পুলিশের কাছ থেকে। তখন জানা যায়, অন্তরা আর নেই। শনিবার সকালেই বিমানে চেপে পুণেতে পৌঁছে যান অন্তরার বাবা দেবানন্দবাবু, তাঁর স্ত্রী এবং অন্তরার যমজ বোন সঞ্চারী।

কেটে গিয়েছে দু’রাত। এখনও ধরা পড়েনি অন্তরার আততায়ী। বেহালার সরশুনা মেন রোডের বাসিন্দা অন্তরা (২৩) পৈলানের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাশ করে বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি পান। ওই সংস্থার বেঙ্গালুরু অফিসে প্রশিক্ষণ শেষে মাস ছয়েক আগে তিনি পুণেতে যোগ দেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ কর্মস্থল তালবাড়ের কাছে কেএনবি চকে তাঁকে গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপ দিয়ে খুন করা হয়। রবিবার অন্তরার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশ জানাচ্ছে, সন্দেহভাজন হিসেবে উঠে এসেছে সন্তোষ কুমার নামে অন্তরার পরিচিত এক যুবকের নাম। সন্তোষ এর আগে বেঙ্গালুরুতে অন্তরার সঙ্গে পেশাদারি প্রশিক্ষণে ছিলেন। পরে দু’জনের সম্পর্কে অবনতি হয়। সন্তোষের বিরুদ্ধে খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে অন্তরার পরিবারও। তাঁদের দাবি, সন্তোষ বহু দিন ধরে অন্তরাকে উত্ত্যক্ত করতেন।

পুলিশ জানায়, অন্তরার অফিস ছিল পুণের তালবাড়ে এলাকায়। সেখান থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে নিগড়িতে পেয়িং গেস্ট থাকতেন অন্তরা। সাধারণত সাড়ে ৭টা নাগাদ অফিসের বাস-এই ফিরতেন। রবিবার অন্তরার বাবা বলেন, ‘‘ইদানীং অফিসের কাজের চাপ থাকায় একটু দেরিতে বেরিয়ে কেএনবি চক থেকে ও অটো ধরতো। শুক্রবারও সেটাই করবে বলে ঠিক ছিল।’’ কেএনবি চকের কাছেই আক্রান্ত হন অন্তরা। তালবাড়ের অফিস থেকে কেএনবি চকের রাস্তাটা সাধারণত অন্ধকার ও নির্জন থাকে বলেই জানিয়েছে পুলিশ।

অন্তরার বোন সঞ্চারী বলছিলেন, বেঙ্গালুরুতে থাকার সময় সন্তোষ নামে এক যুবকের সঙ্গে অন্তরার পরিচয় হয়। পরে ওই যুবক নানা ভাবে অন্তরাকে উত্যক্ত করতে থাকেন। অন্তরা একাধিক বার সন্তোষের মোবাইল ফোনের নম্বর ‘ব্লক’ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই সন্তোষ নতুন নতুন নম্বর থেকে ফোন করতেন বা এসএমএস পাঠাতেন। তবে সঞ্চারী এ-ও জানান, অন্তরার ক্ষতি করতে চেয়ে কোনও দিন কোনও হুমকি কিন্তু দেননি সন্তোষ। ‘‘সন্তোষের কথা পুলিশকে জানিয়েছি আমরা। ওই ছেলেটি বিহারের বাসিন্দা বলে শুনেছি। অন্তরার পেয়িং গেস্টের রুমমেটদেরও সন্দেহের বাইরে রাখা যায় না,’’ বলছেন দেবানন্দবাবু।

তদন্ত এখন কোথায় দাঁড়িয়ে? পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই এক প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে একাধিক তদন্তকারী দলকেও নামানো হয়েছে। তবে কাউকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। শনিবার প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছিল, তিন জন আততায়ী একটি মোটরবাইকে চেপে এসেছিল। তারা পিছন থেকে আক্রমণ করে। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নথিভুক্ত করার পরে এ দিন পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে, তিন জন থাকলেও এক জনই অন্তরার গলায় আর মাথায় কোপ মেরেছিল। তখন রক্তাক্ত অবস্থায় প্রাণভয়ে ছুটতে থাকেন অন্তরা। সে সময় এক মোটরবাইক আরোহী তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মারা যান তিনি। ফাঁক বুঝে চম্পট দেয় আততায়ীরাও। ওই প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশকে জানিয়েছেন, এক আততায়ী কালো ও নীল স্ট্রাইপড টি শার্ট পরেছিল। তার স্কেচ আঁকানোর চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।

এ দিন অন্তরাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, সাধারণ একতলা বাড়ি। সামনের ঘরে টিনের ছাউনি। ভিতরে দু’টি শোওয়ার ঘর। পড়শিরা জানালেন, এই এলাকায় দীর্ঘদিন ভাড়া থাকত দাস পরিবার। দেড় দশক আগে এই বাড়িটি কেনেন ভূমি দফতরের অফিসারের দেবানন্দবাবু। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক প়ড়শি জানান, অন্তরা ও সঞ্চারী দু’জনেই মেধাবী ছাত্রী। অন্তরা পুণেতে চাকরি পাওয়ায় নিশ্চিন্ত হয়েছিলেন বাবা-মা। ‘‘কিন্তু তার পরিণতি যে এমন হবে তা দূরতম কল্পনাতেও আসেনি কারও,’’ বলছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Antara Das Murder case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE