Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

‘স্বৈরাচারী’ কেজরীকে চ্যালেঞ্জ প্রশান্ত-যোগেন্দ্রর

ফাটল ক্রমশ চওড়া হচ্ছে আম আদমি পার্টির অন্দরে। আগামিকাল দলের জাতীয় পরিষদের বৈঠক। তার আগে দলের আহ্বায়ক তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের ‘স্বৈরাচারী’ মনোভাব নিয়ে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুললেন আপের দুই শীর্ষ নেতা প্রশান্ত ভূষণ ও যোগেন্দ্র যাদব। যদিও দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বিদ্রোহী ওই দুই নেতাকে দলের সর্ব্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটি থেকে আগেই ইস্তফা দিতে বাধ্য করেছে দল।

নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে প্রশান্ত ভূষণ ও যোগেন্দ্র যাদব।  ছবি: পিটিআই।

নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে প্রশান্ত ভূষণ ও যোগেন্দ্র যাদব। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

ফাটল ক্রমশ চওড়া হচ্ছে আম আদমি পার্টির অন্দরে। আগামিকাল দলের জাতীয় পরিষদের বৈঠক। তার আগে দলের আহ্বায়ক তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের ‘স্বৈরাচারী’ মনোভাব নিয়ে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুললেন আপের দুই শীর্ষ নেতা প্রশান্ত ভূষণ ও যোগেন্দ্র যাদব।

যদিও দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বিদ্রোহী ওই দুই নেতাকে দলের সর্ব্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটি থেকে আগেই ইস্তফা দিতে বাধ্য করেছে দল। কিন্তু আগামিকালের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের আগে যে ভাবে কেজরীবালকে আজ আক্রমণ শানিয়েছেন দুই নেতা, তাতে নতুন করে অস্বস্তিতে আপ শিবির। সূত্রের খবর, কমিটির পর এ বার ওই দুই নেতাকে এখন দল থেকে দ্রুত ছেঁটে ফেলতে মরিয়া আপ নেতৃত্ব।

চলতি বিতর্কের মধ্যেই আজ রাতে একটি অডিও টেপে কেজরীবালের সঙ্গে দলীয় নেতা উমেশ সিংহের কথোপকথন সামনে আসায় নতুন করে অস্বস্তিতে পড়ে যায় আপ শিবির। ওই অডিও টেপে বিদ্রোহীদের সম্পর্কে কেজরীবালকে অশালীন ভাষা প্রয়োগ করতে শোনা যাওয়ায় নতুন অস্ত্র হাতে পেয়ে যান বিরোধীরা। এ দিকে আগামিকালের বৈঠকে কেজরীবাল-বিরোধিতা কী ভাবে সামলানো হবে, তা ঠিক করতে আজ রাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে বৈঠকে বসেন মণীশ সিসৌদিয়া, গোপাল রাই, সঞ্জয় সিংহের মতো কেজরী-ঘনিষ্ঠরা।

কেজরীবালের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তুলেছেন বিদ্রোহীরা?

গত লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকেই আপ শিবিরে বেসুরে বাজছিলেন প্রশান্ত ভূষণ ও যোগেন্দ্র যাদব। এমনকী দিল্লিতে গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে সে ভাবে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি ওই দু’জনকে। আজ ওই দুই নেতা যে পাঁচটি প্রশ্ন দলের সামনে রেখেছেন তার মূল সুরটিই হল কেজরীবালের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের সমালোচনা। দুই নেতার অভিযোগ, গত লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব বাঁচাতে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দিল্লিতে সরকার গড়ার সওয়াল করেন কেজরীবাল, যার বিপক্ষে ছিলেন বেশ কিছু নেতা। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে ভোটাভুটি হলে হেরে যায় কেজরীবাল গোষ্ঠী। কিন্তু তার পরেও নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন কেজরীবাল। উল্টে দলীয় বৈঠকে তিনি জানান দলের সংবিধান অনুযায়ী কর্মসমিতি যে সিদ্ধান্তই নিক, দলের আহ্বায়ক হিসাবে তার বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তাঁর। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে বিতর্ক হওয়ায় শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হন কেজরীবাল।

যোগেন্দ্রের কথায়, “প্রশাসনকে স্বচ্ছ করা ও প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলির আচরণের বাইরে গিয়ে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক একটি দল গড়াই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। সেই কারণে আম আদমি পার্টির গঠন হয়। আমাদের প্রতি মানুষের অনেক আশা রয়েছে। কিন্তু দলে যা চলছে, তাতে আমার মতো অনেকেই দুঃখ পাচ্ছেন।” যোগেন্দ্র শিবিরের অভিযোগ, কেজরীবালের ওই মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এখন দলের ওয়েবসাইট থেকে সংবিধানটিই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে কেজরী ঘনিষ্ট আপ নেতা সঞ্জয় সিংহ গোটা ঘটনার পিছনে বিরোধীদের চক্রান্তের তত্ত্বই খাড়া করেছেন। তিনি বলেন, “যোগেন্দ্রদের পাঁচটি অভিযোগ ছিল। দল সেই বিষয়গুলির সমাধানের জন্য তৎপর ছিল। কিন্তু হঠাৎ কোনও কারণে আজ দু’জনে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন। কী এমন কারণ ঘটল যে ওই নেতারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে বাধ্য হলেন, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।” আর কেজরীবালের অশালীন শব্দ প্রয়োগের সাফাই দিতে গিয়ে আপ নেতা আশুতোষ বলেন, “মাথা গরম করে ওই কথা বলে ফেলেছিলেন কেজরীবাল!”

এ দিকে আজ দলের সম্পর্কে আমজনতার তথ্য জানার অধিকার নিয়েও কেজরীবালকে আক্রমণ শানিয়েছে বিদ্রোহী জুটি। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক দলগুলিকে তথ্য আইনের আওতায় আনার বিতর্ক শুরু হলে সেই সিদ্ধান্ত সব থেকে আগে সমর্থন করেছিল আপ। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে তার বিপরীত। এমনকী দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ লোকপাল চালু করার সিদ্ধান্ত হলেও তা রূপায়িত হয়নি। প্রশান্ত ভূষণের অভিযোগ, “দলে কেউ কোনও প্রশ্ন তুললেই তাঁকে বিদ্রোহী তকমা দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্নের পরিবর্তে সেই প্রশ্ন তোলার পিছনে স্বার্থ কী রয়েছে, সেটাই বেশি করে আলোচনা হচ্ছে। অন্য রাজনৈতিক দলগুলির মতো আপ-ও এক জন লোকের কথা শুনেই চলছে। যা মোটেই কাম্য ছিল না!”

বাস্তবে গত এক বছর ধরেই যোগেন্দ্র ও প্রশান্তের সঙ্গে নেতৃত্বের সংঘাত চলছে কেজরীবালের। দিল্লি জয়ের পরে উভয় পক্ষের তিক্ততা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে কেজরীবাল ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়ে দেন ওই দু’জন দলে থাকলে তিনি সুষ্ঠু ভাবে সরকার চালাতে পারবেন না। প্রয়োজনে অন্য দল গড়ার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু করেন তিনি। আজ অডিও টেপে কেজরীবালকে সেই কথাই বলতে শোনা গিয়েছে। যোগেন্দ্রদের অভিযোগ, কেজরীবালের ইচ্ছেয় দলের সর্ব্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কমিটি থেকে ওই দুই নেতাকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন মুখ্যমন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ শিবির। কিন্তু এর পরেও যে ভাবে ওই দুই নেতা বিভিন্ন প্রশ্নে সরব হয়েছেন তাতে এখন নেতৃত্ব চাইছেন তাঁরা প্রথমে জাতীয় পরিষদ ও পরে দল থেকেই ইস্তফা দিন।

আগামিকালের বৈঠকে সে ভাবেই রণকৌশল নেওয়ার পক্ষপাতী কেজরী-ঘনিষ্ঠ শিবির। সূত্রের খবর, ওই সভায় কেজরীবালের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হতে পারে। যা ধ্বনি ভোটে খারিজ হয়ে যাবে। বিরোধী শিবিরের ওই দাবি খারিজ করে দিয়ে প্রশান্ত-যোগেন্দ্রকে দলে কার্যত অপাংক্তেয় করে দেওয়ার কৌশলই নেওয়া হয়েছে। এর পরে একঘরে হয়ে পড়া দুই নেতা যাতে নিজেরাই দল থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হন, সে জন্য চাপ দেওয়া হতে পারে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE