এতগুলো মাস আশায় আশায় ছিলেন— একদিন ফিরবেই ছেলে বিদ্যাভূষণ! কিন্তু আজ বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঘোষণা জানাজানি হওয়ার পর আর সামলানো যাচ্ছিল না বৃদ্ধ মকসূদন তিওয়ারিকে। সব প্রতীক্ষা শেষ! বৃদ্ধ পিতা জেনে যান, এতদিন সরকারের দেওয়া আশ্বাসই সার। কফিনবন্দি হয়ে বাড়ি ফিরবে ছেলে বিদ্যাভূষণ।
সিওয়ানের আন্দর থানার সাসারাও গ্রামের বাসিন্দা বিদ্যাভূষণ ২০১১ সালে নির্মাণ সংস্থার কাজ নিয়ে ইরাকে গিয়েছিলেন। বছরখানেক পরে ২০১২ সালের ১৪ জুন থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। তার পরে মকসূদন বার বার শুনেছেন, নিখোঁজ হলেও বেঁচে রয়েছে ছেলে। সরকারি তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে অনেক বারই।
বস্তুত সাসারাও গ্রাম আজ থমথমে। কারণ, ইরাকের মসুলে অপহৃত এবং নিহত ভারতীয়দের মধ্যে দু’জন এই গ্রামেরই বাসিন্দা। বিদ্যাভূষণ (৩০) ছাড়াও সাসারাওয়ের বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সি সন্তোষ সিংহেরও প্রাণ গিয়েছে ইরাকে।
সে সময়ে আইএস জঙ্গিদের হাত থেকে পালিয়ে এসে পঞ্জাবের বাসিন্দা হরজিত মাসিহ জানিয়েছিলেন, হত্যা করা হয়েছে সহকর্মীদের। নিজের চোখে সে দৃশ্য দেখেছেন তিনি। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক সেই বক্তব্য মানতে রাজি হয়নি। বরং বলা হয়েছিল, অপহৃতেরা বেঁচে আছেন, খোঁজ চলেছে। সরকারি সেই আশ্বাসেই ভরসা পেয়েছিল বিদ্যাভূষণের পরিবার। আজ সরকারি ঘোষণার পর থেকে কান্না থামছে না বিদ্যাভূষণের স্ত্রীর। বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।
সন্তোষ অবিবাহিত ছিলেন। তাঁর বাবা চন্দ্রমোহন ছেলের এমন পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না কিছুতেই। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বারবার বলেন, ‘‘ও দেশ ছাড়তে চায়নি। এখানেই কাজ করতে চেয়েছিল। আমিই জোর করেই ওকে ইরাকে কাজ করতে পাঠিয়েছিলাম। কেন যে আমার এমন দুর্মতি হল! তখন তো বুঝতেই পারিনি। ছেলেটাকে বরাবরের মতো হারালাম।’’ এজেন্টের মাধ্যমেই কাজ করতে গিয়েছিলেন সন্তোষ।
আরও পড়ুন: মিথ্যে বলিনি, আজ প্রমাণ হয়ে গেল: হরজিত
সন্তোষের ভাই পাপ্পু সিংহ বলেন, ‘‘২০১২ সালের ১২ জুন শেষ বার দাদার সঙ্গে কথা হয়েছিল। সে সময়ে ও বলেছিল, ওদের কোম্পানি অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে সকলকে। তার পরে আর ফোন করেনি দাদা। ১৪ জুন হঠাৎ ইরাক থেকে ফোন করে একজন জানায়, ওকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু যে ফোন করেছিল, তার পরিচয় কিন্তু দেয়নি।’’
তবে ওই ফোনের পরও সরকারি আশ্বাসের জোরে সন্তোষের ফেরার অপেক্ষায় ছিল পরিবার। আজ যা শেষ হল রাজ্যসভায় বিদেশমন্ত্রীর এক ঘোষণায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy