বাঙালি ত্রিদিব থেকে পশ্চিম এশিয়ায় বেআইনি ভাবে পাড়ি দেওয়া আলু; কায়রো শহরে বহুকাল আগের ইহুদি ব্যবসায়ী ও তাঁর ভারতীয় ভৃত্য থেকে আফিং যুদ্ধের সময়কার চিনা আহ ফাত— সকলে এত দিনে স্বীকৃতি পেলেন ভারতীয় সাহিত্যের পুরস্কারভূমে। ২০১৮ সালের জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত হলেন এই সব চরিত্রের স্রষ্টা, বঙ্গসন্তান অমিতাভ ঘোষ। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা দেবীর স্মৃতিজড়িত জ্ঞানপীঠে এই প্রথম ভারতীয় ইংরেজি সাহিত্য!
অমিতাভ অবশ্য ‘ভারতীয় ইংরেজি’ তকমায় বিশ্বাসী নন। এ দিনও টুইট করেছেন, ‘যে লেখকদের শ্রদ্ধা করি, তাঁদের অনেকের সঙ্গে একাসনে বসতে পেরে আনন্দিত।’
আর সেই ভারতীয় সাহিত্যের ভাষা ও ভূগোল গত কয়েক দশক ধরে ক্রমাগত বাড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। ‘রসগোল্লা’র মতো শব্দ ইংরেজি বানানে অক্লেশে উঠে এসেছে তাঁর লেখায়। মরিচঝাঁপির অত্যাচার ও গঙ্গার বিপন্ন শুশুককে একাকার করে দেন ‘হাংরি টাইড’ উপন্যাসে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এক আড্ডায় রসিকতাচ্ছলে তাঁকে বলেওছিলেন, ‘তুমি তো ইংরেজিতে বাংলা উপন্যাস লেখো গো!’
তাঁর বিশ্ব তাই বহুস্তরীয়, বহুভাষিক। ‘গ্লাস প্যালেস’ উপন্যাসে বর্মার শেষ রাজা, ভারতে নির্বাসিত থিবো দূরবীন দিয়ে জাহাজ দেখেন। ক্রমশ সেই আখ্যান গিয়ে আজাদ হিন্দ হয়ে শেষ হয় আং সান সু চি-তে পৌঁছে। ‘সি অব পপিজ’, ‘রিভার অব ফায়ার’-সহ আইবিস ট্রিলজি মনে করা যেতে পারে। সেখানে আফিং যুদ্ধের শুরুতে ব্রিটিশরা বলে, ‘চিনের সম্রাটটা অসভ্য। এই দেশকে মুক্ত বাণিজ্য আর গণতন্ত্রের স্বাদ দিতেই আমাদের যুদ্ধ করতে হবে।’ আজও জর্জ বুশ-ইরাক, ট্রাম্প-সিরিয়াতে এক কাহিনি। জ্ঞানপীঠ কর্তৃপক্ষ সাধে বলেননি, ‘তাঁর উপন্যাসের পটভূমি ইতিহাসের সঙ্গে আজকের সময়টাকে জুড়ে দেয়।’
লেখক ব্যক্তিজীবনে নিপুণ রাঁধুনি। শুধু নুন-তেল-মশলা মাপা রান্না নয়। ভাল লাগেনি বলে ‘সার্কল অব রিজন’ উপন্যাসের প্রথম খসড়ার তিনশো পাতা লিখেও ফেলে দিয়েছিলেন। অনুপান
ঠিকঠাক চাই। কী রান্নাঘরে, কী লেখার টেবিলে।
স্কুলজীবনেই তাঁর সাহিত্যপ্রতিভার উন্মেষ। দুন স্কুলে অমিতাভ তখন কবিতা লেখেন, সিনিয়র দাদা বিক্রম শেঠ বললেন, ‘না, কবিতা নয়, গদ্যটাতেই লেগে থাক।’
অমিতাভের সঙ্গেই লেগে থাকতে থাকতেই ভারতীয় ইংরেজি সাহিত্য খুঁজে পেল সম্মানের ঠিকানা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy