আইএনএস তুষিল। ছবি: সংগৃহীত।
আড়ালে থেকে শত্রুপক্ষের উপর প্রাণঘাতী আঘাত হানতে পারে সে। রাবণ-পুত্র ইন্দ্রজিৎ অর্থাৎ মেঘনাদের মতোই। এ বার রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তায় সেই ‘মেঘনাদ’ পেতে চলেছে ভারতীয় নৌসেনা।
২০১৬ সালের সমঝোতা এবং ২০১৮ সালে সই হওয়া চূড়ান্ত চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়ার কালিনিনগ্রাডের জাহাজ কারখানায় ভারতীয় নৌসেনার জন্য তৈরি হয়েছে দু’টি স্টেল্থ ফ্রিগেট। তার প্রথমটি, আইএনএস তুষিলের সমুদ্রযুদ্ধের মহড়াও শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। সেই প্রশিক্ষণে অংশ নিতে রাশিয়ায় রয়েছেন ভারতীয় নৌসেনার ২০০ জন অফিসার এবং কর্মী।
২০১৮ সালের ওই চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় নৌসেনার জন্য আইএনএস তলোয়ার শ্রেণির চারটি স্টেল্থ ফ্রিগেট বানাবে রাশিয়া। চুক্তির মোট অঙ্ক ২৫০ কোটি ডলার (প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা)। প্রসঙ্গত, ভারতীয় নৌবাহিনীকে আধুনিক যুদ্ধের উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ইউপিএ সরকারের আমলে। সেই পরিকল্পনারই অঙ্গ হিসেবে পি-১৭এ প্রকল্পে মোট সাতটি শিবালিক গোত্রের ‘স্টেলথ ফ্রিগেট’ নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রায় দেড় দশক আগে। পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে আধুনিকতর তলোয়ার শ্রেণির ফ্রিগেট নির্মাণের চুক্তি হয়।
স্টেল্থ প্রযুক্তির শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, যুদ্ধবিমান দিয়ে। পরবর্তীকালে যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ এমনকি সামরিক হেলিকপ্টারেও ব্যবহার হচ্ছে এই প্রযুক্তি। শক্রুর নজর এড়িয়ে হামলা চালানোর জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে স্বচ্ছ ফাইবারের তৈরি যুদ্ধবিমান বানিয়েছিল হিটলারের জার্মানি। কিন্তু তাতে দু’টি সমস্যা দেখা দিয়েছিল। পলকা সেই যুদ্ধবিমানের অস্ত্রবহনের ক্ষমতা ছিল খুবই কম। তা ছাড়া, দিনের বেলায় উড়ানের সময় বিশেষ কোণ বরাবর সূর্যের আলো পড়লে তা ঝকমকিয়ে উঠত। নজর পড়ে যেত সহজেই। ফলে নাৎসি একনায়কের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
ঘটনাচক্রে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ই শক্রুপক্ষের যুদ্ধবিমান চিহ্নিত করার জন্য রাডারের ব্যবহার শুরু হয়। সেই সঙ্গে শুরু হয়, রাডার-নজরদারি ফাঁকি দেওয়ার প্রযুক্তির সন্ধানও। এ ক্ষেত্রেও পথপ্রদর্শক ছিল জার্মানি। সে দেশের অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারেরা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন, রাডারের ছুড়ে দেওয়া রেডিও তরঙ্গ বিশেষ করে বিমানের মূল দেহে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। বিমানের দেহ ছোট করে ডানার অংশ দীর্ঘ করার চেষ্টা শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্বে রাডার নজরদারি ফাঁকি দেওয়ার জন্য ‘হর্টেন ২২৯’ নামে একটি যুদ্ধবিমান বানিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু যুদ্ধে তা ব্যবহারের আগেই হিটলারের পরাজয় ঘটে।
বস্তুত, ছ’দশক পরেও শত্রুপক্ষের বিমান বা যুদ্ধজাহাজ চিহ্নিত করার জন্য ব্যবহৃত রাডারের মূল প্রযুক্তি প্রায় একই রয়েছে। যে এলাকা থেকে জল বা আকাশপথে শত্রুসেনার আগ্রাসনের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রেডিয়ো তরঙ্গ ছুড়ে দেয় রাডার। যুদ্ধবিমান বা জাহাজের ধাতব দেওয়ালে সেই নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ‘রেডিয়ো ওয়েভ’ ধাক্কা খেয়ে ফিরে এলেই কেল্লা ফতে। নিমেষে হিসাব করে নেওয়া যায় সেই বিমান বা জাহাজের অবস্থান, আকার, অভিমুখ এবং গতিবেগ।
অর্থাৎ রাডারের নজরদারি এড়াতে হলে বাঁচতে হয় সেই রেডিয়ো তরঙ্গ থেকে। যা তাকে চিহ্নিত করা। রাডার প্রতিরোধী ‘স্টেলথ টেকনোলজি’র লক্ষ্য একটাই— বিমান বা জাহাজের গায়ে ধাক্কা খাওয়া রেডিয়ো তরঙ্গকে ঠিক ভাবে রাডারের কাছে ফিরতে না দেওয়া। সে জন্য রেডিয়ো তরঙ্গকে শুষে নেওয়া বা দিগ্ভ্রান্ত করার পদার্থ এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। বিশেষ ধাতুশঙ্কর এবং কার্বন ফাইবারের তৈরি স্টেলথ যুদ্ধবিমান কিংবা ফ্রিগেট ও ডেস্ট্রয়ার জাতীয় স্টেলথ যুদ্ধজাহাজ সেই কাজ করতে পারে। যা সাধারণ ধাতুতে তৈরি যুদ্ধবিমান বা যুদ্ধজাহাজের পক্ষে সম্ভব নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy